বায়ুকে অনুগত করা
আল্লাহ হযরত সুলাইমান (আঃ)-কে যে সব বিশেষ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী করেছিলেন অন্মধ্যে একটি বৈশিষ্ট হল বায়ুকে তার হুকুমের অধীন করে দেয়া হয়। তিনি বায়ুকে যখন যে দিকে যেতে নির্দশ দিতেন বায়ু সেদিকেই প্রাবাহিত হত। এক বর্ণনায় আছে তার একটি কাঠের তৈরি পালঙ্ক ছিল। এটা বিরাট ছিল যে, কার্য পরিচালনার জন্য যত কিছুর প্রয়োজন হত সব কিছু এতে রাখা যেত। যেমন ঘোড়া, উট, সৈন্যবাহিনী, তাবু প্রভৃতি। এ পালঙ্কে সবকিছু রেখে তিনি বাতাসকে হুকুম দিতেন যেন এটা বহন করে নিয়ে যায়। তখন বাতাস এটা উপরে উত্তোলন করত আর তিনি যেখানে নিতে হুকুম করতেন সেখানে নিয়ে যেত। তখন পাখিরা তার মাথার উপর ছায়া দিত।
হযরত সাঈদ বিন জুবায়ের (রাঃ) বর্ণনা করেন, তার পালঙ্কে এত বিরাট আকারের ছিল যে, এতে ছয় লক্ষ চেয়ার পাতা ছিল। মু’মিন লোকেরা তার আশে পাশে বসত। আর তাদের পিছনে মুমিন জিনরা বসত। এক বর্ণনায় আছে হযরত সুলাইমান (আঃ) যখন বাতাসকে হুকুম দিতেন তখন বাতাস জমে সুদৃঢ় পর্বতের ন্যায় হয়ে যেত। তখন বাতাসকে হুকুম করতেন তার পালঙ্ক শূন্যে উত্তোলন করিবার জন্য। বায়ু সুলাইমান (আঃ) এর নির্দশমত পালঙ্ক শূন্যে উত্তলন করলে তিনি স্বীয় অশ্ব আনয়নের নির্দেশ করতেন। বাতাস পালঙ্ক উপরের দিকে উত্তোলন করে আসমানের কাছকাছি নিয়ে যেত। তিনি আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে ডামে বামে দৃষ্টি ফিরাতেন। আর মনে মনে ভাবতেন তিনি যে পালঙ্কে আরোহণ করে আছেন তা এত বিরাট আকৃতি বিশিষ্ট হওয়া সত্বেও আল্লাহর সৃষ্টি বিশ্বের তুলনায় এটা কত ক্ষুদ্র? অনন্তর যেখানে অবতরণ করতে চাইতেন সেখানে পালঙ্কটি রেখে দিত। আল্লাহ পাক বলেন-
অর্থঃ আমি হাওয়াকে সুলাইমানের অধীন করে দিয়েছি। তিনি যেখানে একে নিতে চাইতেন নম্রতার সাথে সেখানেই তার নির্দেশ প্রবাহিত হত। তিনি যেখানে একে নিতে চাইতেন নম্রতার সাথে সেখানেই তার নির্দেশে প্রবাহিত হত।
হযরত হাসান বসরী (র) হতে বর্ণিত, হাওয়া হযরত সুলাইমান (আঃ) এর
অধীনস্থ হয়ে যাওয়া তার মোজেযা! আল্লাহ তার এক আমলের পুরষ্কার হিসেবে তাঁকে এ মোজেয়া প্রদান করেছিলেন। একদা তিনি জিহাদের জন্য পালিত ঘোড়াসমূহের দেখাশুনার কার্যে এত গভীরভাবে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলেন যে, তার আসরের নামায কাযা হয়ে গিয়েছিল। ঘোড়া দেখাশুনার কারণেই তার মধ্যে এ গাফলতি এসেছিল বিধায় তিনি ঘোড়াগুলো কোরবাণী করে ফেললেন, যাতে গাফলতির কাফফারা হয়ে যায়। তার শরীয়তে ঘোড়াগুলা কোরবানী দুরুস্ত ছিল। অশ্বগুলো সরকারী ছিল না বরং তার নিজস্ব সম্পত্তি ছল। তার এ কাজটি আল্লাহ পাকের পছন্দ হয়েছে বলে এ কার্যের পুরুষ্কারস্বরূপ আল্লাহ বাতাসকে তার অধীন করে দিয়েছেন।
এক বর্ণনায় আছে যে, তিনি বাতাসের সাহায্যে সকাল সন্ধ্যায় দু’মাসের পথ ভ্রমন করতেন। তিনি সকালে বাইতুল মাকদাস হতে যাত্রা করতেন আর দুপুরে এসতাখর নামক স্থানে পৌঁছে বিশ্রাম করতেন। দ্বিপ্রহরের আহারের পর যোহরের নামাযের পরে সেখান রওয়ানা হতেন। আর রাতে কাবুল পর্যন্ত পৌঁছাতেন। বায়তুল বাকদাস ও এসতাখরের মধ্যে যে দুরত্ব তা অতিক্রম করতে একটি তেজস্বী অশ্বের একমাস লাগত। অনুরুপভাবে এসতাখর হতে কাবুলও মসদূরত্বে অবস্থিত।