বনু শাইবান গোত্রকে দাওয়াত প্রদান – পর্ব ৩
বনু শাইবান গোত্রকে দাওয়াত প্রদান – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এতীমের ধনসম্পত্তির নিকটও যাইও না কিন্তু এইরূপে যাহা উত্তম হয় যে পর্যন্ত না তাহারা সাবালক হয়, আর পরিমাপ ও ওজন ঠিক ঠিকভাবে সম্পন্ন করিও ন্যায়ের সহিত, আমি কোন মানুষকে তাহার সাধ্যাতীত কষ্ট প্রদান করি না, আর যখন তোমরা (সাক্ষ্য বা মীমাংসার) কথা বল, তখন ন্যায়ের প্রতি লক্ষ্য রাখিও, যদি সেই ব্যক্তি আত্মীয়ও হয়, আর আল্লাহর সহিত যে অঙ্গীকার কর উহা পূর্ণ করিও। এই সকল বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা তোমাদিগকে নির্দেশ দিয়াছেন যেন তোমরা স্মরণ রাখ। আর ইহা ও বলেন যে, নিশ্চয় ইহা আমার পথ যাহা সোজা, অতএব এই পথের অনুসরণ কর এবং অন্যসব
পথের অনুসরণ করিও না, কেননা ঐ সকল পথ তোমাদিগকে আল্লাহর পথ হইতে বিচ্ছিন্ন করিয়া দিবে, এই সকল বিষয়ে তিনি তোমাদিগকে নির্দেশ দিয়াছেন যেন তোমরা মুত্তাকী হও।
মাফরুক বলিল, হে কোরাইশী ভাই, আর কি দাওয়াত দিয়া থাকেন? খোদার কসম, ইহা কোন জমীনবাসীর কালাম নহে, কারণ তাহাদের কালাম হইলে আমরা উহা সম্পর্কে পরিচিত হইতাম। রাসূল (সাঃ) এই আয়াত তিলাওয়াত করিলেন-
إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالْإِحْسَانِ وَإِيتَاءِ ذِي الْقُرْبَىٰ وَيَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ وَالْبَغْيِ ۚ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ (90) (সূরা নাহল আয়াতঃ ৯০)
অর্থঃ নিঃসন্দেহে আল্লাহ তায়ালা ন্যায়-নিষ্ঠা ও পরোপকার করা এবং আত্মীয়-স্বজনকে দান করার আদেশ করিতেছেন, আর তিনি অশ্লীলতা, অসঙ্গত কাজ ও এবং অবাধ্যতা করিতে নিষেধ করিতেছেন। আল্লাহ তায়ালা তোমাদিগকে উপদেশ দেন, যেন তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।
মাফরুক বলিল, হে কোরাইশী ভাই, খোদার কসম, আপনি উন্নত চরিত্রবলী ও উত্তম আমলের প্রতি দাওয়াত দিয়াছেন। আর যাহারা আপনাকে মিথ্যাবাদী বলিয়াছেন এবং আপনার বিরুদ্ধে পরস্পর সাহায্য করিয়াছে তাহারা অবশ্যই ভ্রান্ত কথা বলিয়াছে।
মাফরুক যেন চাহিতেছিল যে, হানী ইবনে কাবীসাও এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করুক। সুতরাং সে বলিল, ইনি হানী ইবনে কাবীসাহ, আমাদের মুরব্বী ও আমাদের ধর্মীয় বিষয়ের দায়িত্ব তাহার উপর ন্যাস্ত।
হানী বলিল, হে কোরাইশী ভাই, আপনার কথাবার্তা আমি শুনিয়াছি এবং উহা সত্য বলিয়া স্বীকার করিতেছি। কিন্তু আমার অভিমত এই যে, আপনার সহিত ইহা আমাদের প্রথম বৈঠক। ইতিপূর্বে আপনার সহিত আমাদের সাক্ষাৎ হয় এবং আগামীতে কি হইবে জানা নাই। তদুপরি আমরা আপনার ব্যাপারে এবং আপনি যে দাওয়াত দিয়াছেন উহার পরিণতি সম্পর্কে এখনও কোন প্রকার চিন্তা-ভাবনা করিবার অবকাশ পাই নাই।
অতএব এই মুহূর্তে নিজেদের ধর্ম পরিত্যাগ করিয়া আপনার দ্বীন গ্রহণ করতঃ আপনার অনুসরণ করা একটি ভুল সিদ্ধান্ত ও ক্ষীণবুদ্ধিমত্তার কাজ এবং অদূরদর্শীতার পরিচায়ক হইবে। তাড়াহুড়া করিলেই ভুল হইবার সম্ভাবনা থাক। উপরন্ত আমাদের কওমের অনেকেই এইখানে অনুপস্থিত রহিয়াছি। তাহাদের অবর্তমানে আমরা কোন ওয়াদা অঙ্গীকার করাকে পছন্দ করি না। তবে আপনিও ফিরিয়া যান, আর আমরাও ফিরিয়া যাই। আপনিও চিন্তা করুন, আমরাও চিন্তা করি।
হানী যেন চাহিতেছিল যে, সুসান্না ইবনে হারেসাও এই আলোচনায় অংশ গ্রহণ করুক। সুতরাং সে বলিল, ইনি মুসান্না। আমাদের মুরব্বী ও আমাদের যুদ্ধ পরিচালনার ভার তাহার উপর ন্যাস্ত।
মুসান্না বলিল, হে কোরাইশী ভাই, আমি আপনার কথাবার্তা শুনিয়াছি। উহা আমার নিকট ভাল লাগিয়াছে এবং খুবই পছন্দ হইয়াছে। তবে আমার জবাবও তাহাই যাহা হানী ইবনে কবীসাহ দিয়াছে। কারণ আমরা ইয়ামামাহ ও সামামাহ এই দুই সীমান্তের মাঝে বসবাস করিতেছি। রাসূল (সাঃ) জিজ্ঞাসা করিলেন, এই দুই সীমান্ত কি রকম? মুসান্না বলিল, একদিক উপকূলীয় স্থলভাগ ও
আরবের জমিন আর অপর দিকে পারস্য ভূখণ্ড ও কিসরার নহরসমূহ। আমরা কিসরার সহিত এই শর্তে আবদ্ধ হইয়া সেখানে বসবাস করিতেছি যে, আমরা নতুন কিছু উদ্ভাবন করিব না বা কোন নতুন বিষয়ের উদ্ভাবককে সেখানে আশ্রয় দিব না। সুতরাং আপনি যে বিষয়ে আহবান জানাইতেছেন খুবসম্ভব বাদশাহ তাহা পছন্দ করিবেন না।
বনু শাইবান গোত্রকে দাওয়াত প্রদান – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন