বনু কায়নুকার ঘটনা – পর্ব ১

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, মুহাম্মাদ (সাঃ) বদরে কোরাইশকে পরাজিত করিবার পর বনু কায়নুকার বাজারে ইহুদীদের সমবেত করিয়া বলিলেন, হে ইহুদীগণ, তোমরা বদরে কোরাইশদের ন্যায় এরুপ পরাজয়বরণের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ কর।

ইহুদীগণ বলিল, কোরাইশগণ লড়াই করিতে জানিত না। আমাদের সঙ্গে লড়াই করিলে বুঝিতে পারিতেন যে, আমরাই হইলাম পুরুষ। তাহাদের এই কথা প্রসঙ্গে আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করিলেন-

قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوا سَتُغْلَبُونَ وَتُحْشَرُونَ إِلَىٰ جَهَنَّمَ ۚ وَبِئْسَ الْمِهَادُ (12)

قَدْ كَانَ لَكُمْ آيَةٌ فِي فِئَتَيْنِ الْتَقَتَا ۖ فِئَةٌ تُقَاتِلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأُخْرَىٰ كَافِرَةٌ يَرَوْنَهُم مِّثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِ ۚ وَاللَّهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهِ مَن يَشَاءُ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّأُولِي الْأَبْصَارِ (13)

অর্থঃ আপনি এই কাফেরদিগকে বলিয়া দিন যে, অচিরেই তোমরা পরাভূত হইবে এবং তোমাদিগকে সমবেত করিয়া জাহান্নামের দিকে লইয়া যাওয়া হইবে। আর উহা নিকৃষ্ট বাসস্থান।

নিশ্চয় তোমাদের জন্য মহান নিদর্শন রহিয়াছে দুই দলের মধ্যে যাহারা পরষ্পর মুখামুখী হইয়াছিল। একদল তো আল্লাহর পথে যুদ্ধ করিতেছিল আর অন্য দল ছিল কাফের। এই কাফেররা নিজদিগকে মুসলমানদের দ্বিগুণ দেখিতেছিল প্রত্যেক্ষ দৃষ্টিতে। আর আল্লাহ স্বীয় সাহায্য দ্বারা যাহাকে ইচ্ছা শক্তি প্রদান করিয়া থাকেন। নিশ্চয় ইহার মধ্যে মহান উপদেশ রহিয়াছে চক্ষুম্মান লোকদের জন্য।

আবু দাউদের রেওয়াতে আছে যে, ইহুদীরা বলিল, মুহাম্মাদ (সাঃ) অনভিজ্ঞ ও যুদ্ধ করিতে জানে না, এমন কিছু কোরাইশের লোককে কতল করিয়া আপনি ধোকায় পড়িবেন না। আমাদের সহিত যুদ্ধ করিলে বুঝিতে পারিতেন আমরাই হইলাম বীর পুরুষ। আমাদের ন্যায় লোকেরা মুখামুখী আপনি এখনও হন নাই।

ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেন, বদরের যুদ্ধে কাফেরদের পরাজিত হইবার পর মুসলমানগণ তাহাদের ইহুদী বন্ধুদের বলিলেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর বদরের ন্যায় এরুপ দিন আনিবার পূর্বেই তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। ইহুদী মালেক ইবনে সাইফ বলিল, যুদ্ধ সম্পর্কে অনভিজ্ঞ কোরাইশের একদলকে পরাজিত করিয়া তোমরা ধোকায় পড়িয়াছ কি? আমরা যদি তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি ব্যয় করিবার সিধান্ত গ্রহণ করি তবে তোমরা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে সক্ষম হইবে না।

হযরত ওবায়দাহ ইবনে সামেত (রাঃ) বলিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমার কিছু ইহুদী বন্ধু আছে যাহারা অনেক শক্তিশালী। তাহাদের নিকট অস্ত্র-শস্ত্রও যথেষ্ট পরিমাণ রয়েছে এবং তাহারা অনেক প্রভাব-প্রতিপত্তিও রাখে।

তথাপি আমি ইহুদীদের বন্ধুত্ব পরিত্যাগ করিয়া আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের বন্ধুত্ব গ্রহণ করিলাম, এখণ আল্লাহ ও তাঁহার রাসূল ব্যতীত আমার কোন বন্ধু নাই। মোনাফেক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই বলিল, আমি কিন্তু ইহুদীদের বন্ধুত্ব পরিত্যাগ করিতে পারিব না। আমার তাহাদের সহিত বন্ধুত্বের প্রয়োজন রয়েছে। মুহাম্মাদ (সাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে বলিলেন, হে আবুল হুবাব, তুমি ওবায়দাহ ইবনে সামেতের সহিত জিদ করিয়া ইহুদীদের বন্ধুত্বকে গ্রহণ করিয়াছ। তাহাদের সহিত বন্ধুত্ব তোমার জন্যই হউক। ইহুদীদের সহিত ওবায়দার বন্ধুত্বের প্রয়োজন নাই।

সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা

বনু কায়নুকার ঘটনা – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Written By

More From Author

বনু কায়নুকার ঘটনা – পর্ব ১

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, মুহাম্মাদ (সাঃ) বদরে কোরাইশকে পরাজিত করিবার পর বনু কায়নুকার বাজারে ইহুদীদের সমবেত করিয়া বলিলেন, হে ইহুদীগণ, তোমরা বদরে কোরাইশদের ন্যায় এরুপ পরাজয়বরণের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ কর।

ইহুদীগণ বলিল, কোরাইশগণ লড়াই করিতে জানিত না। আমাদের সঙ্গে লড়াই করিলে বুঝিতে পারিতেন যে, আমরাই হইলাম পুরুষ। তাহাদের এই কথা প্রসঙ্গে আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করিলেন-

قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوا سَتُغْلَبُونَ وَتُحْشَرُونَ إِلَىٰ جَهَنَّمَ ۚ وَبِئْسَ الْمِهَادُ (12)

قَدْ كَانَ لَكُمْ آيَةٌ فِي فِئَتَيْنِ الْتَقَتَا ۖ فِئَةٌ تُقَاتِلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَأُخْرَىٰ كَافِرَةٌ يَرَوْنَهُم مِّثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِ ۚ وَاللَّهُ يُؤَيِّدُ بِنَصْرِهِ مَن يَشَاءُ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّأُولِي الْأَبْصَارِ (13)

অর্থঃ আপনি এই কাফেরদিগকে বলিয়া দিন যে, অচিরেই তোমরা পরাভূত হইবে এবং তোমাদিগকে সমবেত করিয়া জাহান্নামের দিকে লইয়া যাওয়া হইবে। আর উহা নিকৃষ্ট বাসস্থান।

নিশ্চয় তোমাদের জন্য মহান নিদর্শন রহিয়াছে দুই দলের মধ্যে যাহারা পরষ্পর মুখামুখী হইয়াছিল। একদল তো আল্লাহর পথে যুদ্ধ করিতেছিল আর অন্য দল ছিল কাফের। এই কাফেররা নিজদিগকে মুসলমানদের দ্বিগুণ দেখিতেছিল প্রত্যেক্ষ দৃষ্টিতে। আর আল্লাহ স্বীয় সাহায্য দ্বারা যাহাকে ইচ্ছা শক্তি প্রদান করিয়া থাকেন। নিশ্চয় ইহার মধ্যে মহান উপদেশ রহিয়াছে চক্ষুম্মান লোকদের জন্য।

আবু দাউদের রেওয়াতে আছে যে, ইহুদীরা বলিল, মুহাম্মাদ (সাঃ) অনভিজ্ঞ ও যুদ্ধ করিতে জানে না, এমন কিছু কোরাইশের লোককে কতল করিয়া আপনি ধোকায় পড়িবেন না। আমাদের সহিত যুদ্ধ করিলে বুঝিতে পারিতেন আমরাই হইলাম বীর পুরুষ। আমাদের ন্যায় লোকেরা মুখামুখী আপনি এখনও হন নাই।

ইমাম যুহরী (রহঃ) বলেন, বদরের যুদ্ধে কাফেরদের পরাজিত হইবার পর মুসলমানগণ তাহাদের ইহুদী বন্ধুদের বলিলেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের উপর বদরের ন্যায় এরুপ দিন আনিবার পূর্বেই তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। ইহুদী মালেক ইবনে সাইফ বলিল, যুদ্ধ সম্পর্কে অনভিজ্ঞ কোরাইশের একদলকে পরাজিত করিয়া তোমরা ধোকায় পড়িয়াছ কি? আমরা যদি তোমাদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি ব্যয় করিবার সিধান্ত গ্রহণ করি তবে তোমরা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করিতে সক্ষম হইবে না।

হযরত ওবায়দাহ ইবনে সামেত (রাঃ) বলিলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, আমার কিছু ইহুদী বন্ধু আছে যাহারা অনেক শক্তিশালী। তাহাদের নিকট অস্ত্র-শস্ত্রও যথেষ্ট পরিমাণ রয়েছে এবং তাহারা অনেক প্রভাব-প্রতিপত্তিও রাখে।

তথাপি আমি ইহুদীদের বন্ধুত্ব পরিত্যাগ করিয়া আল্লাহ ও তাঁহার রাসূলের বন্ধুত্ব গ্রহণ করিলাম, এখণ আল্লাহ ও তাঁহার রাসূল ব্যতীত আমার কোন বন্ধু নাই। মোনাফেক আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই বলিল, আমি কিন্তু ইহুদীদের বন্ধুত্ব পরিত্যাগ করিতে পারিব না। আমার তাহাদের সহিত বন্ধুত্বের প্রয়োজন রয়েছে। মুহাম্মাদ (সাঃ) আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে বলিলেন, হে আবুল হুবাব, তুমি ওবায়দাহ ইবনে সামেতের সহিত জিদ করিয়া ইহুদীদের বন্ধুত্বকে গ্রহণ করিয়াছ। তাহাদের সহিত বন্ধুত্ব তোমার জন্যই হউক। ইহুদীদের সহিত ওবায়দার বন্ধুত্বের প্রয়োজন নাই।

সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা

বনু কায়নুকার ঘটনা – পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

Written By

More From Author

You May Also Like

খৃষ্টান মহিলার প্রেমে পাগল হওয়ার ঘটনা

বুজুর্গ ব্যক্তি বললেন, একদা আমি হযরত হাসান বসরী (রহঃ) এর দরবারে বসেছিলাম। এমন সময় আমাদের…

এক বুজুর্গের কসমের উছিলায়

হযরত আবূ আব্দুল্লাহ কাররাশী (রাঃ) বলেন, একবার মুশরিক সৈন্যরা স্পেন শহরে প্রবেশ করে বিনা যুদ্ধে…

স্বপ্ন যোগে রাসূলের দিদার।

ইমাম কাফেলায় হাবীবের ঈমানী চেতনার প্রকাশ্য শক্তি যেন কয়েকগুণ বাড়াল। ইমাম হোসাইন (রাঃ) গভীর রাতে…