ফেরাউনের পরাজয়ের পর – পর্ব ৪
ফেরাউনের পরাজয়ের পর – পর্ব ৩ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আল্লাহ্ তায়ালা হযরত মূসা ও হযরত হারুন (আ)-এর প্রতি ওহী পাঠালেন যে, ফেরাউনের লোকেরা বনী ইসরাঈলীদের ইবাদতখানা ভেঙ্গে দেওয়াতে তারা যেন মানসিক দিক থেকে দুর্বল না হয়ে পড়ে। আপনারা তাদেরকে বলুন, তারা যেন প্রত্যেক স্ব স্ব গৃহে আলাদা আলাদা ইবাদতখানা তৈরি করে নেয়। আর প্রত্যেকটি ইবাদতখানা যেন কেবলামূখী করে নির্মাণ করা হয়। তাফসীরবিদরা লিখেন তাদের কিবলা মুসলমানদের কিবলার ন্যায় কাবা। ফেরাউনের এ নিকৃষ্টতম কার্যে হযরত মূসা (আ) খুব মর্মাহত হলেন এবং ফেরাউন সম্প্রদায়ের ঐশ্বর্য বিলীন করে দেয়ার জন্য দোয়া করলেন।
কোরআনের ভাষায়-
হে আমাদের রব! আপনি ফেরাউন ও তার জাতির সর্দারদের পার্থিব জীবনের জাকজমকপূর্ণ সামগ্রী এবং বিভিন্ন রকম ধন সম্পদ দিয়েছেন। হে আমাদের রব! তারা এ সবের কারণে মানুষকে আপনার পথ হতে বিভ্রান্ত করেছে। হে আমাদের রব! আপনি তাদের সম্পদ্গুলো বিলীন করে দিন। আর তাদের অন্তরসমূহ কঠিন করে দিন যাতে ঈমান না আনতে পারে। এমনকি তারা মর্মন্তুদ আযাব প্রত্যক্ষ করে নেয়।(ইউনুস)
আল্লাহ্ পাক তাদের প্রার্থনা কবূল করলেন এবং ফেরাউন সম্প্রদায়কে এক এক করে বিভিন্ন ধরনের আযাবে ঘেরাও করতে লাগলেন। তন্মধ্যে প্রথম আযাব দিলেন দুর্ভিক্ষের মাধ্যমে। সমস্ত মিশরে ফসল উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেল। শস্য ক্ষেত্রসমুহ শুষ্ক হয়ে শস্য উৎপাদনের অনুপযোগী হয়ে পড়ল। শহর ও এর আশে পাশের ফলবাগানসমূহ ফলশূন্য হয়ে পড়ল। এভাবে সাত বছর পর্যন্ত দুঃর্ভিক্ষ বিরাজীত ছিল। আল্লাহ্ পাক এ দুঃর্ভিক্ষের কথা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন-
এবং আমি ফেরাউনের জাতির লোকদেরকে দুর্ভিক্ষ এবং ফল ফলাদির স্বল্প উৎপাদনের দ্বারা পাকড়াও করলাম যাতে তারা বুঝতে পারে। (সূরা-আরাফঃ আয়াত-১৫০)
হযরত ইবনে আব্বাস ও হযরত কাতাদাহ (রাঃ) প্রমূখ বর্ণনা করেন যে, দুঃর্ভিক্ষের মাধ্যমে পল্লী এলাকার লোকদেরকে শাস্তি প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহ্ পাক যখন কোন সম্প্রদায়ের প্রতি আযাব ও গযব নাযিল করেন তখন এটা তাদের উপলব্দি হয় না যে, তাদের বদাআমলের জন্য তাদের উপর আযাব অবতীর্ণ হচ্ছে। ফেরাউন ও তার জাতীর প্রতি আল্লাহ্ অসন্তুষ্ট হয়ে আযাব নাযিল করা শুরু করে দিয়েছেন। কিন্তু আযাবের প্রথম পর্যায়ের ধাক্কায় তারা সাবধান হয়নি বরং তাদের উপর আরোপিত বিপদের জন্য তারা হযরত মূসা (আ)-কে দোষী সাব্যস্ত করা শুরু করল। তারা পরস্পর বলাবলি করতে লাগল যে, হযরত মূসা (আ) তাঁদের অনুসারীদের অশুভ চালচলনের জন্য এ অবস্থায় সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের ঔদ্ধত্য সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে-
“যখন তাদের কাছে সচ্চলবস্থা আসত তখন তারা বলত যে এ আমাদের জন্যই হয়েছে। আর যদি তাদের কাছে দুরবস্থা আসে তখন তারা একে মূসা ও তাঁর অনুসারীদের অশুভ লক্ষণ বলত।”(সূরা-আরাফ)
অনন্তর যখন ধীরে ধীরে দুঃর্ভিক্ষ এমন প্রকট আকার ধারণ করল যে, সমগ্র দেশে হাহাকার পড়ে গেল। জনগন অতিষ্ট হয়ে পড়ল। তারা দলে দলে ফেরাউনের কাছে আসতে লাগল উদ্ভুত সমস্যার একটা সমাধান করে দেয়ার জন্য। দুঃর্ভিক্ষ দূর করে পূর্বাস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য। ফেরাউন লোকদেরকে আশ্বাস দেয় যে, একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে। ফেরাউন এ সম্পর্কে চেষ্টা করবে। জনসাধারণ চলে গেলে ফেরাউন ভাবল এ সমস্যার সমাধান একমাত্র মূসার (আ)-এর কাছে। তাঁর দ্বারাই এ বিপদ হতে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই সে সংগোপনে হযরত মূসা (আ)-এর সাথে যোগাযোগ শুরু করল। তাকে অনুরোধ করা হল তিনি যেন দেশের এ দূর্যোগ অবস্থায় দেশবাসীর জন্য তাঁর রবের কাছে প্রার্থনা করেন।
মূসা (আ) নিজেও লক্ষ্য করলেন যে, দেশের লোকজন অনাহারে মৃত্যুমুখে যাত্রী হয়েছে মানুষের প্রতি দয়া-মায়া ও স্নেহ-মমতা ছিল অফুরন্ত। তাই তিনি জনসাধারণের এ দুরবস্থার অবসান কল্পে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। তিনি ভাবলেন দেশের এ করুন অবস্থার অবসান করে দিতে পারলে তারা হয়ত আল্লাহ্ তায়ালার অপার করুণা তাদের অভ্যাসে কোন পরিবর্তন আসল না বরং পুনরায় হযরত মূসা (আ)-এর প্রতি ঈমান আনয়ন করা। কিন্তু তাদের শিক্ষা গ্রহন তো দুরের কথা বরং এখন তাদের শত্রুতা পূর্বাপেক্ষা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই হযরত মূসা (আ) আবার তাদের জন্য বদদোয়া করলেন যে, হে আমাদের রব! তারা এমন এক ঔদ্ধত্য সম্প্রদায় যে, দুঃর্ভিক্ষের শাস্তি থেকেও তারা শিক্ষা গ্রহন করেনি। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েও ফিরে গেছে। এখন তাদের প্রতি এমন আযাব নাযিল করুন যা তাদের জন্য বড়ই যন্ত্রণাদায়ক হয়। আর সে শাস্তি হতে আমার জাতী যেন শিক্ষা গ্রহন করতে পারে এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য সত্য পথ অবলম্বনে দিক নির্দেশক হয়ে থাকে।