পৃথিবীর সর্ববৃহৎ প্লাবন-১ম পর্ব
সে দিন ছিল চন্দ্র মাসের ২ রজব। ভোররাত্র থেকে আকাশ থেকে গরম পানির বর্ষণ আরম্ভ হল। আর মাটি ফেটে উঠতে লাগল ভীষণ ঠান্ডা পানি। উভয় পানির মিশ্রণ যখন ঘটল, তখন আরম্ভ হল বাতাসের রুদ্র রোষ। সময় যত অতিবাহিত হতে লাগল বাতাস ও পানির প্রচন্ডতা তত বৃদ্ধি পেতে লাগল। দেখতে দেখতে মাটির উপর অনেক পানি জমে গেল। দুপুরের মধ্যে শুষ্ক মরুভূমির উপর দিয়ে বয়ে যেতে আরম্ভ করল প্রচন্ড স্রোত। সুতরাং হযরত নূহ (আঃ) এর জাহাজ পানির উপর ভেসে উঠল। তখন কিছু লোক পানির উপর দিয়ে সাঁতরে জাহাজের নিকট আসতে চেষ্টা করছিল। কিন্তু স্রোতের আক্রমনে তাদেরকে অন্য দিকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল।
বালুময় শুষ্ক মরুভূমিতে তেজস্বিনী স্রোতের ধারা বয়ে যাওয়ার ঘটনা কোন দিন রূপকথায়ও শোনে নাই। তাই হযরত নূহ (আঃ) এর জাহাজ নিয়ে দেশের নেতৃবৃন্দ থেকে আরম্ভ করে সাধারণ মানুষ সকলেই উপহাসের ভাষায় আলোচনা করে বেড়াত। কিন্তু যখন বাস্তব অবস্থা দেখ তখন তাদের জ্ঞান ফিরে এল। আল্লাহর নবীর প্রতি ও তাঁর কথায় প্রতি আস্থা আসল। তখন নবীর অনুসন্ধানে অনেকে বাড়ি থেকে বের হল। কিন্তু প্লাবনের গতি তখন কঠিন রূপ ধারণ করেছিল। যাতে করে ঘর থেকে বের হয়ে আর কেউ রেহাই পেল না। স্রোতের কঠিন আঘাতে ছিটকে কে কোথায়
চলে গেল তার কোন পাত্তা থাকল না । বাতাসের প্রচণ্ড আঘাতে সমস্ত গাছ-পালা উপড়ে স্রোতের টানে তড়িৎ গতিতে অজানা গন্তব্যে চলে যেতে আরম্ভ করল । ঘর, দালান, ইমারত কিছুই অবশিষ্ট থাকল না । এক এক করে সব কিছু নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল ।
হযরত নূহ (আঃ)- এর ছেলে কেনান অতি উচ্চ এক পর্বতে গিয়ে আশ্রয় নিল । যখন সে পাহাড় ডুবে পানি আরো উপরে উঠে গেল, তখন সে আল্লাহর নামে তসবীহ আরম্ভ করল । কিন্তু নিষ্ঠুর ঝড় তাকে রেহাই দিল না । বাতাসের একটা প্রচণ্ড ঝাপটা এসে তাকে পাহাড়ের উপর জোরে আছাড় দিল। তাতে তার মাথা ও শরীরের সমস্ত হাড় গুঁড়া গুঁড়া হয়ে গেল। তার লাশ পানিতে অজানা দেশে ভাসিয়ে নিল। বড় বড় পর্বতগুলো চূড়া ভেঙ্গে ভেঙ্গে পানিতে পড়তে আরম্ভ করল। পৃথিবীর কোন জীব জানোয়ারের অস্তিও দূরের কথা মাটিও স্থির থাকল না। সমুদয় মাটি সমতলে পরিণত হল। পৃথিবীর কোন জীব-জানোয়ার যেগুলো হযরত নূহ (আঃ) এর জাহাজের বাহিরে ছিল কেউ রেহাই পেল না। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতমালার উপরে চল্লিশ গজ পর্যন্ত পানি উঠেছিল। অবস্তা দৃষ্টে মনে হচ্ছিল, পৃথিবীটা অতল সমুদের মাঝে তলিয়ে গেছে।
হযরত নূহ (আঃ) তাঁর সঙ্গী-সাথী ও জীব জানোয়ার নিয়ে জাহাজে নিরাপদে ছিলেন। জাহাজ নিজ গতিতে কোথায় যাচ্ছিল যাত্রীরা তার কোন খবর রাখত না। জাহাজ অধিকাংশ সময় বায়তুল্লাহর চতুর্দিকে ঘুরে ঘুরে তওয়াফ করে চলছিল। আল্লাহ্ তা’য়ালা এ বিভিষিকাময়ী তুফান ও প্লাবনের মাঝে জাহাজখানি নিরাপদ রেখেছেন। যাত্রীরা এ ভীষণ প্রলয়ে সম্বন্ধে কিছুই অবগত হতে পারি নি। এক সময় জাহাজের ময়লা আবর্জনা জমে ভীষণ নোংরা হয়ে যায়। তখন হযরত নূহ (আঃ) হাতিকে তার মাথায় হাত বুলিয়ে জাহাজ পরিষ্কার করার আদেশ দেন। হাতি তার সুড় দ্বারা বাহিরের পানি এনে জাহাজ ধুয়ে ময়লা বাহিরে ফেলে দিতে আরম্ভ করে। এভাবে সে সম্পূর্ণ জাহাজ পরিষ্কার করে দেয়।
ইবলিস জাহাজের মধ্যে কয়েক মাস আত্নগোপন করে ছিল। একদা তার মাথায় কুবুদ্ধি আসল, সে শুকুরের কাছে গিয়ে তার নাকে হাত বুলিয়ে সুড়সুড়ি দিল। শূকর তখন সজোরে হাঁচি দিল । অমনি তার নাকের মধ্যে থেকে ইঁদুর বেরিয়ে আসল । ইঁদুরগুলো ছুটাছুটি করে জাহাজের নিচ তলায় গিয়ে কাঠ কাটতে আরম্ভ করল । ইবলিসের ইচ্ছা ছিল ইঁদুর দ্বারা জাহাজা ছিদ্র করে দিলে জাহাজে পানি উঠে সেটি তলিয়ে যাবে । এ খবরটি কবুতর গিয়ে হযরত নূহ (আঃ) এর কাছে পৌঁছে দেয়। তখন হযরত নূহ (আঃ) পশুদের এলাকায় এসে জিজ্ঞেস করলেন, ইঁদুর আসল কোথা থেকে ? শূরর উওর দিল, হুজুর! ইবলিস এসে আমার নাকে সুড়সুড়ি দিলে আমি সজোরে হাঁচি দিই। সেই সাথে আমার নাক থেকে কয়েকটি ইঁদুর বেরিয়ে আসে । ইবলিস পৃথিবীতে বসে কয়েক দিন পূর্বের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কয়েকটি ইঁদুর ছানা আমার কানের মধ্যে গুঁজে রেখে দিয়েছিল। সেই ইঁদুরগুলি সম্ভবত আমার নাক দিয়ে বেড়িয়ে গেছে। হযরত নূহ (আঃ) জিজ্ঞেস করলেন করলেন ইবলিস আমার অনুমতি ব্যতিরেখে কিভাবে জাহাজে উঠল ? তখন হযরত নূহ (আঃ) ইবলিসকে বলল, হে আল্লাহ্ নবী ! আমি আপনার আদেশ ছাড়া জাহাজে উঠিনি। আপনি যখন আপনার সন্তান কেনান কে জাহাজে উঠবার জন্য শেষ বারের মত বলছিলেন, তখন তাকে গালির স্থানে বলেছিলেন “উঠ শয়তান, জাহাজে উঠ” তখন আমি আপনার ঐ কথাটি আমার জন্য আদেশ মনে করে জাহাজে উঠে পড়ি। এতএব আমাকে অবৈধ প্রবেশকারী বলতে পারবেন না। হযরত নূহ (আঃ) ইবলিসের কথার জবাব দিতে পারলেন না।