পিপীলিকার এলাকায় হযরত সুলাইমান (আঃ)
একদিন হযরত সুলাইমান (আঃ) তাঁর সৈন্য সামন্তের বিরাট এক বাহিনীসহ কোন এক স্থানে ভ্রমণে বের হলেন। তাঁর এ বহরে প্রত্যেক মাখলুকের জন্য তাদের মর্যাদা অনুযায়ী স্থান নির্ধারিত ছিল। কোন এক শ্রেণী নির্ধারিত স্থানে সারিবদ্ধ হওয়া ছাড়া আগে পিছে হওয়ার সাহস পেত না। সুশৃঙ্খল বিরাট সেনাবাহিনীসহ হযরত সুলাইমান (আঃ) চলেছেন। চলতে চলতে এক গ্রাম্য এলাকায় এসে পৌঁছুলেন। সেখানে অসংখ্য পিঁপড়া বসবাস করত। এ এলাকাটিকে তারা তাদের এক রাজত্বে পরিণত করে রাখছিল।
পিঁপড়ার বাদশাহ হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর বিরাট সেনাবাহিনী দেখে ভয়ে আতঙ্কিত হল। পিঁপড়ার বাদশাহ প্রমাদ গুনল- ভাবল, এত বড় সেনাদল এ গ্রামের উপর দিয়ে অতিক্রম করলে তারা তাদের ঘোড়ার পায়ের তলায় পিষে লক্ষ লক্ষ পিঁপড়া মেরে ফেলবে। তাই সে তার বলতে লাগল যে, হে পিঁপড়ার দল! তোমাদের সম্মুখে বিরাট এক বিপদ উপস্থিত। হযরত সুলাইমান (আঃ) তাঁর বিরাট বাহিনীসহ এদিকে আসছেন। তিনি এখন এ গ্রামের মাঝখান দিয়ে অতিক্রম করবেন। কাজেই তোমরা নিজ নিজ গর্তে ঢুকে পড়। অন্যথায় তোমাদের জীবন রক্ষা করা মুশকিল হয়ে পড়বে। তারা যখন এ স্থান দিয়ে যাবে তখন তাদের ঘোড়ায় পদাঘাতে তোমরা পিষে যাবে। সুতরাং আত্মরক্ষা করার একমাত্র পথ হচ্ছে তড়িৎ গর্তে প্রবেশ করা। ঘটনাটি পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
وَحُشِرَ لِسُلَيْمَانَ جُنُودُهُ مِنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ وَالطَّيْرِ فَهُمْ يُوزَعُونَ
حَتَّىٰ إِذَا أَتَوْا عَلَىٰ وَادِ النَّمْلِ قَالَتْ نَمْلَةٌ يَا أَيُّهَا النَّمْلُ ادْخُلُوا مَسَاكِنَكُمْ لَا يَحْطِمَنَّكُمْ سُلَيْمَانُ وَجُنُودُهُ وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ
অর্থঃ সুলাইমান (আঃ)-এর সামনে সৈন্য বাহিনী রূপে জ্বীন, ইনসান এবং পক্ষীকূলকে সমবেত করা হয়েছিল। এরা পর্যায়ক্রমে আগে পিছে চলছিল এমনকি যখন তারা পিপীলিকার পল্লীতে পৌঁছুল তখন পিঁপড়া বলল, হে পিঁপড়া! তোমরা নিজ নিজ বাসস্থানে প্রবেশ কর। এমন যেন না হয় যে, হযরত সুলাইমান (আঃ) ও তাঁর সেনাদল অজ্ঞাতসারে তোমাদেরকে নিষ্পেষিত করে দেয়। (সূরা নামল)
তাফসীরবিদরা বলেন, পিঁপড়ার অগাধ বিশ্বাস ছিল যে, কোন নবী সেচ্চায় কারও উপর জুলুম করেন না। তাই সে তার জাতিকে হুঁশিয়ার করার সময় বলেছিল যে, হয়ত বা তারা অজ্ঞাতসারে
তোমাদেরকে পিষে মারবে। হযরত সুলাইমান (আঃ) পিঁপড়ার কথা শুনতে পেলেন। আর তার কথা শুনে তিনি মুচকি হাসলেন। তিনি বড়ই আশ্বস্ত হলেন যে, তাঁর প্রতি পিঁপড়ার বিশ্বাস রয়েছে যে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে কারও প্রতি জুলুম করবেন না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে-
فَتَبَسَّمَ ضَاحِكًا مِّن قَوْلِهَا
কিন্তু হযরত সুলাইমান (আঃ) এতে খুবই আনন্দিত হলেন যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁকে পিঁপড়ার কথা বুঝবার ক্ষমতা দিয়েছেন। জীব জনোয়ারের কথা বুঝতে পারা বিশেষ করে পিঁপড়ার ন্যায় এত ক্ষুদ্র প্রাণীর কথা বুঝতে পারা আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে অনেক বড় নিয়ামত। এ নিয়ামতের কথা স্মরণের সাথে তাঁর অন্যান্য নিয়ামতের কথাও স্মরণ হল। নিয়ামতের স্মরণ করতে করতে নিয়ামত দাতা মহান রবের প্রতি ঝুঁকে পড়লেন। মহান প্রতিপালকের দরবারে দোয়ায় মশগুল হয়ে পড়লেন-
وَقَالَ رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَىٰ وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَدْخِلْنِي بِرَحْمَتِكَ فِي عِبَادِكَ الصَّالِحِينَ
অর্থঃ হে রব আমি যাতে আমার ও আমার পিতামাতার প্রতি আপনার প্রদত্ত নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি আমাকে সে তাওফিক দান করুন এবং এমন নেক আমল করতে পারি যার প্রতি আপনি সন্তুষ্ট থাকেন। আর আমাকে আপনি স্বীয় অনুগ্রহের দ্বারা আপনার নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। (নামল)
কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায়, হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর একবার বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অনাবৃষ্টির কারণে ফসল উৎপাদন হ্রাস পেল। ফলে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দিল। হযরত সুলাইমান (আঃ) আল্লাহর দরবারে বৃষ্টির জন্য প্রার্থনা করতে স্বীয় উম্মতদেরকে নিয়ে মাঠে বের হয়ে আসলেন। পথিমধ্যে দেখতে পেলেন যে, একটি পিঁপড়া সম্মুখের পদদ্বয় আসমানের দিকে উঠিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া করছে যে, হে আমাদের রব আমরাও আপনার অন্যান্য সৃষ্টির ন্যায় আপনার সৃষ্টি। আমরাও আপনার অনুগ্রহের মুখাপেক্ষী। বৃষ্টি বন্ধ করে আমাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন না। হযরত সুলাইমান (আঃ) পিঁপড়ার দোয়া শুনে অবাক হয়ে রইলেন। অনন্তর স্বীয় সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বলেন, চল! ফেরত চল! একটি মাত্র জীবের দোয়া আমাদের উদ্দেশ্য সফল করে দিয়েছে। এখন তোমাদের বৃষ্টি প্রার্থনা ছাড়াই বৃষ্টি হবে।