পাখির বন্ধু

সিডনির এক শান্ত সকালে, কুয়াশার চাদরে ঢাকা গলফ কোর্সে দাঁড়িয়ে অর্ণবের মনটা কেমন উদাস হয়ে গেল। কলকাতার সেই দিনগুলো মনে পড়ে গেল, যখন সে বন্ধুদের সঙ্গে রয়েল গলফ ক্লাবে প্রথমবারের মতো গলফ খেলতে গিয়েছিল। গলফ খেলার প্রতি ভালোবাসা তখনই জন্মেছিল, কিন্তু কলকাতার ব্যস্ত জীবনে সে আর নিয়মিত খেলার সুযোগ পায়নি।

সিডনিতে এসে যখন সে আবার গলফ খেলা শুরু করল, তখন নতুন বন্ধুদের সঙ্গে একদম নতুন একটা অধ্যায় শুরু হলো। এই শহরের প্রশস্ত গলফ কোর্স, সুন্দর আবহাওয়া, আর প্রতিযোগিতার উত্তেজনা—সব মিলিয়ে অর্ণবের প্রতিটি উইকএন্ডই হয়ে উঠেছিল রোমাঞ্চকর। তবে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে খেলার সেই অনুভূতিটা যেন ঠিক মিলত না।

হঠাৎ একদিন, হোয়াটসঅ্যাপে কলেজের গ্রুপে বার্তা এলো—সকলেই কলকাতায় মিলে আবার একবার গলফ খেলবে! অর্ণবের মন নাচতে লাগল। সে তৎক্ষণাৎ টিকিট কাটল, প্রস্তুতি নিল।

কলকাতায় নেমে এক ঝটকায় পুরোনো স্মৃতিগুলো যেন চোখের সামনে ভেসে উঠল। সেই চেনা রাস্তা, সেই কলেজের আড্ডা, আর সবচেয়ে বড় কথা—সেই পুরোনো বন্ধুরা! রয়েল গলফ ক্লাবে পা রাখতেই যেন এক যুগ আগের সেই সময়টা ফিরে এলো।

খেলা শুরু হলো, প্রথম কয়েকটা শটেই বোঝা গেল, সবাই আগের মতোই আছে—হাসি-ঠাট্টা, ঠোকাঠুকি, আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার সেই চিরচেনা উত্তেজনা। অর্ণব অনুভব করল, সিডনির জীবনে সে হয়তো অনেক কিছু পেয়েছে, কিন্তু বন্ধুদের সঙ্গে গলফ খেলার যে আনন্দ, সেটার সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা হয় না।

দিনের শেষে, ক্লাবহাউসে বসে সবাই গল্পে মেতে উঠল। জীবনের নানা গল্প, ব্যস্ততা, সাফল্য-ব্যর্থতা—সবকিছুই শেয়ার হলো এক মুগ্ধকর সন্ধ্যায়। অর্ণব উপলব্ধি করল, দূরত্ব যতই থাক, বন্ধুত্ব কখনও ম্লান হয় না।

ফেরার পথে সে ভাবছিল, হয়তো সিডনিতেও একদিন এমন কিছু তৈরি হবে—যেখানে শুধু খেলা নয়, থাকবে বন্ধুত্বের উষ্ণতা, স্মৃতির ছোঁয়া। আর সে দিনগুলোও হবে ঠিক আজকের মতোই—অপরিসীম আনন্দময়।

 

অভিজ্ঞতার মূল্য

দেয়ালে পেরেকের ক্ষতচিহ্ন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *