নবী কারীম (সাঃ ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ ) এর হিজরতের বিবরণ – পর্ব ৬

নবী কারীম (সাঃ ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ ) এর হিজরতের বিবরণ – পর্ব ৫ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

রাসূল (সাঃ) গুহার ভিতরে প্রবেশ করিলেন। এই ঘটনা ব্যক্ত করিবার পর হযরত ওমর (রাঃ) বলিলেন, সেই পাক যাতের কসম, যাঁহার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ রহিয়াছে, হযরত আবু বকর (রাঃ)এর সেই রাত্র ওমরের সম্পূর্ণ খান্দানের যিন্দেগী অপেক্ষা উত্তম। (বিদায়াহ)

হযরত হাসান বিসরী (রাঃ) বলেন, নবী কারীম (সাঃ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ) গুহা অভিমুখে চলিয়া গেলেন। কোরাইশগণও নবী কারীম (সাঃ) অনুসন্ধানে গুহার নিকট পৌঁছিল। কিন্তু গুহার মুখে মাকড়সার জাল দেখিয়া তাহারা বলিল, এই গুহায় কেহ প্রবেশ করে নাই। নবী কারীম (সাঃ) গুহার ভিতর দাঁড়াইয়া নামাজ পড়িতেছিলেন, আর হযরত আবু বকর (রাঃ) পাহারা দিতেছিলেন।

হযরত আবু বকর (রাঃ) নবী কারীম (সাঃ) কে বলিলেন, এই আপনার কওম, আপনাকে তালাশ করিতেছে। আল্লাহর কসম, আমার নিজের প্রাণের জন্য কোন চিন্তা করি না। কিন্তু আমার ভয় হইল, আপনার উপর না কোন বিপদ আসিয়া পড়ে। নবী কারীম (সাঃ) বলিলেন, হে আবু বকর, কোন ভয় করিও না, নিশ্চয় আমাদের সহিত আল্লাহ আছেন।

অপর এক রেওয়াতে আছে, হযরত আবু বকর (রাঃ) বলেন, আমরা যখন গুহার ভিতর ছিলাম তখন আমি নবী কারীম (সাঃ) কে বলিলাম, যদি কাফেরদের কেহ নিজের পায়ের দিকে দৃষ্টি করে তবে আমাদিগকে তাহাদের পায়ের নীচে দেখিয়া ফেলিবে। তিনি বলিলেন, হে আবু বকর, তোমার সেই দুই ব্যক্তি সম্পর্কে কি ধারণা যাহদের সঙ্গে তৃতীয় জন আল্লাহ রহিয়াছেন?

হযরত বারা ইবনে আযেব (রাঃ) বলেন, হযরত আবু বকর (রাঃ) (আমার পিতা) হযরত আযেব (রাঃ) এর নিকট হইতে তের দেরহামের একটি জিনিস খরিদ বলিলেন, (তোমার ছেলে) বারাকে বল, সে যেন এই জিন আমার ঘরে পৌঁছাইয়া দেয়। হযরত আযেব (রাঃ) বলিলেন, আগে আপনি সেই ঘটনা বলুন, যখন রাসূল (সাঃ) সহিত আপনি হিজরতের উদ্দেশ্যে বাহির হইয়াছিলেন তখন আপনি কি করিয়াছিলেন? হযরত আবু বকর (রাঃ) বলিলেন, আমরা গুহা হইতে রাত্রের প্রথামাংশে বাহির হইয়া সারা রাত্র এবং পরবর্তী সারাদিন ও সারারাত্র অত্যন্ত দ্রুতগতিতে চলিতে থাকিলাম এমন কি তার পরদিন দুপুর হইয়া গেল এবং রৌদ্র প্রচণ্ড গরম হইয়া উঠিল। আমি চতুর্দিকে দৃষ্টিপাত করিলাম যে, কোথাও ছায়া দেখা যায় কিনা যেখানে একটু বিশ্রাম করিব।

একটি বড় পাথর দেখিতে পাইলাম। দ্রুত সেখান যাইয়া দেখিলাম, এখনো কিছু ছায়া বাকি আছে। আমি জায়গা সমান করিয়া রাসূল (সাঃ)এর জন্য একটি চামড়া বিছাইয়া দিলাম এবং আরজ করিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ, একটা শুইয়া পড়ুন। তিনি শয়ন করিলেন। তারপর আমি বাহির হইয়া দেখিতে লাগিলাম এদিকে কেহ তালাশ করিতে আসিতেছে কিনা? দেখিলাম, এক রাখাল বকরি চরাইতেছে। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, এই ছেলে, তুমি কার রাখাল? সে কোরাইশের এক ব্যক্তির নাম বলিল, যাহাকে আমি চিনিতে পারিলাম।

আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, তোমার বকরিতে দুধ আছে কি? সে বলিল, আছে। আমি বলিলাম, আমাকে কি কিছু দুধ বাহির করিয়া দিতে পার? (অর্থাৎ তোমার মালিকের পক্ষ হইতে দুধ দিবার অনুমতি আছে কিনা?) সে বলিল, হ্যাঁ, দিতে পারি। আমার কথামত সে একটি বকরির পা বাঁধিল এবং হাত দ্বারা বকরির স্তন হইতে ধুলাবালি ঝাড়িয়া নিজের হাতও ঝাড়িয়া লইল। আমার নিকট একটি পাত্র ছিল যাহার মুখে কাপড় বাঁধা ছিল। সে পেয়ালায় পানি ঢালিলাম যাহাতে পেয়ালার তলা পর্যন্ত ঠাণ্ডা হইয়া গেল।

সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা

নবী কারীম (সাঃ ) ও হযরত আবু বকর (রাঃ ) এর হিজরতের বিবরণ – শেষ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।