অনেক কাল আগের কথা। নৈমিষ্যারণ্য নামে একটি বিখ্যাত তপোবন ছিল। সেখানে মুনি ঋষিরা তপস্যা করতেন। শিক্ষার্থীরা গুরুগৃহে এসে শিক্ষা লাভ করত। সেই নৈমিষারণ্যে দধীচি নামে এক মুনি বাস করতেন। কঠোর সাধনা করতেন তিনি। আর সকলের জন্য মঙ্গল প্রার্থনা করতেন। সে সময় বৃত্র নামে এক অসুর খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। তদুপরি দেবতা শিবকে কঠোর সাধনা দ্বারা সন্তুষ্ট করে তিনি একটি বর প্রার্থনা করেন। আর তা হলো, দেবতা বা অসুর বা মানুষের কোন অস্ত্রের আঘাতে তাঁর মৃত্যু হবে না। শিবের বর পেয়ে বৃত্রাসুর আরও প্রবল হয়ে উঠলেন্ তিনি দেবতাদের স্বর্গরাজ্য জয় করে নিলেন।
সেখানে থেকে দেবরাজ ইন্দ্রসহ সকল দেবতাকে তাড়িয়ে দিলেন। তখন দেবরাজ ইন্দ্র স্বর্গ থেকে বিতারিত দেবতাদের নিয়ে গেলেন শিবের কাছে। শিব তাদের বললেন, ‘তোমরা বিষ্ণুলোকে যাও। সেখানে বিষ্ণু তোমাদের উপযুক্ত পরামর্শ দেবেন।’ শিবের কথা মতো দেবতারা গেলেন বিষ্ণুর কাছে। তাঁরা বিষ্ণুর স্তব করলেন। দেবতাদের স্তবে সন্তুষ্ট হলেন বিষ্ণু। তিনি দেবতাদের বললেন, ‘তোমরা নৈমিষারণ্যে দধীচি মুনির কাছে যাও। তাঁর উদারতায় তোমাদের মঙ্গল হবে।’ তখন বিষ্ণুর পরামর্শ অনুসারে দেবতাদের নিয়ে দেবরাজ ইন্দ্র নৈমিষারণ্যে দধীচি মুনির কাছে গেলেন।
সব শুনে দধীচি মুনি বরলেন, ‘শিবের বরে বলীয়ান বৃত্রাসুরকে কোন অস্ত্র দিয়ে বধ করা যাবে না। তাই অন্য উপায় বের করতে হবে।’ একটু ভেবে বলণে, ‘আমি একটি উপায় বের করেছি।’ ইন্দ্র বললেন, ‘ কী উপায় মুনিবর?’ দধীচি বলেন, ‘আমি দেহত্যাগ করব।’ ‘মুনিবর!’ দেবতারা আঁতকে উঠলেন। দধীচি বলেলেন, ‘শুনুন দেবরাজ, এ নশ্বর দেহ তো একদিন বিনষ্ঠ হবেই।
আপনাদের সঙ্গলের জন্য আজই না হয় তাকে ব্যবহার করি। আমি দেহত্যাগ করলে আমার হাড় দিয়ে অস্ত্র তৈরী করুন। তারপর তা দিয়ে বৃত্রাসুরকে বধ করুন। হাড় তো কোন প্রচলিত অস্ত্র নয়।’ তারপর দধীচির দেহের হাড় দিয়ে দেবতাদের প্রকৌশলী বিশ্বকর্মা বজ্র তৈরী করলেন। ইন্দ্র সেই বজ্র দিয়ে বৃত্রাসুরকে বধ করলেন। পুনরুদ্ধার করলেন স্বর্গরাজ্য। দধীচি মুনির এই ত্যাগ ও উদারতার কথা আজও অমর হয়ে আছে।