ধনী গৃহবধু সাপ সাপ বলে মৃত্যুবরণ করল
১৯৬৮ সালের ঘটনা। সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল এক গৃহবধু। তাঁর অসুস্থতা চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত। কর্তব্যরত ডাক্তার তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পর মৃত্যুর ঘোষণা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন। সংজ্ঞাহীন বেহুশঁ মেয়েটি হঠাৎ থরথর করে কাঁপতে লাগলো। আতঙ্ক কণ্ঠে বলতে লাগলো, সাপ সাপ সাপ। চরম অস্থিরতার মধ্যে এক সময় সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো।
ডাক্তারের সাথে মেয়েটির শেষ দিকের তৎপরতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, এরকম ঘটনা আমার চিকিৎসা জীবনে আমিও দেখিনি। দেহুশঁ অবস্থায় এভাবে সাপ সাপ বলে চিৎকার করার ঘটনা নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর।
সে ছিল পিতা মাতার একমাত্র সন্তান। উত্তরাধিকার সূত্রে প্রচুর সোনার অলঙ্কার এবং নগদ টাকার মালিক হয়েছিল। স্বামী সন্তানের প্রতি ভালোবাসা ছিল নামমাত্র। তাঁর আসল ভালোবাসা ছিল সোনা অলঙ্কার এবং নগদ টাকার প্রতি। তাঁর সিন্দুকে রেখেছিল লাখ লাখ টাকা। সে সময় ব্যাংকের তেমন প্রচলন না হওয়ায় ঘরের সিন্দুকে সে টাকা জামা করতো।
প্রতিদিন তিনবার সে ব্যক্তিগত কক্ষে প্রবেশ করে ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিত। ঘরের লোকদের সে বুঝাত পোশাক পাল্টাচ্ছে। আসলে সে সিন্দুক খুলে টাকা গুনতো। নতুন টাকার ঘ্রাণ তাঁকে মাতোয়ারা করে তুলতো। টাকা পুরাতন হয়ে গেলে সে নির্দিষ্ট একজন লোককে দিয়ে সে টাকাটা বদলে নতুন টাকা আনতো। সে সময়ের বিত্তশালীদের মধ্যে এই গৃহবধূও ছিল অন্যতম।
টাকা খরচ করতে এ মহিলা ভীষণ কষ্ট পেত। পারতপক্ষে সে এক টাকাও খরচ করতে চাইতো না। পুণ্যবতী নারী যদি তাঁকে বলতো, তুমি তো অনেক টাকার মালিক। তোমার নামে একটা মসজিদ তৈরি করাও, পুকুর খনন করাও, বিধবা এতিমের সাহায্য কর। এসব কথা বলা হলে তাঁর মুখ কালো হয়ে যেত। তাঁর সঞ্চিত টাকা খরচ হয়ে কমে যাবে এটা সে কিছুতেই চিন্তা করতে পারতো না। এ কারণে যে কোন সৎ পরামর্শ তাঁর কাছে তিক্ত মনে হত। তার প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে তাঁকে কেউ টাকা খরচ করার জন্য বলতে সাহস পেত না। অল্প বয়সে এ গৃহবধূ অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হলো এবং বেহুশঁ থাকার সময় সাপ সাপ সাপ বলতে বলতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। তাঁর সঞ্চিত সোনার অলঙ্কার টাকা পয়সা সব সিন্দুকেই পড়ে থাকলো।