দ্বিতীয় ওহী

হেরা গুহায় প্রথম ওহী নাযিল হওয়ার মধ্যে দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে রিসালাতের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করার পর কিছু দিন ওহী নাযিল বন্ধ থাকে।


কিন্তু হেরা গুহায় ওহী অবতরণকালে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মাঝে যে অস্থির অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তা যখন স্বস্থি প্রশান্তিতে পরিণত হল, তখন ওহী বন্ধের এ ধারায় যে মানসিক কষ্ট হচ্ছিল তা তিনি সইতে পারছিলেন না।

তাঁর মানসিক অস্থিরতা এমন পর্যায়ে উপনীত হল যে কখনও কখনও খোদ হযরত জিবরাঈল (আঃ) অবতরণ করে তাঁকে ধৈর্যাবল্বনের আহ্বান জানাতেন এবং তাঁকে নিশ্চয়তা দিতেন যে, নবুয়ত রিসালাতের পবিত্রতম ধারা তার সব গুণ বৈশিষ্ট্য, সৌন্দর্য ও সূক্ষতা সহকারে আপনার পবিত্র সত্তার সাথে সংযোজিত হয়েছে। সুতরাং আপনার ভয় ও দুর্ভাবনার কিছু নেই।

ওহী বন্ধের এ পর্যায় নিতান্তই সাময়িক সুতরাং আপনি দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হবেন না। এসব কথায় তিনি মানসিক সান্ত্বনা পেতেন এবং প্রতিশ্রুত সময়ের জন্য অপেক্ষমাণ থাকতেন।

এ অবস্থায় কিছু দিন পরেই ওহী নাযিলের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় এবং সূরা মুদ্দাছছিরের নিম্নোক্ত আয়াতসমূহ নাযিল হয়-
” অর্থঃ হে চাদরাবৃত! উঠুন অতঃপর অবিশ্বাসীদেরকে ভয় দেখান এবং আপনার রবের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করুন, আর নিজের পরিধেয়সমূহ পবিত্র রাখুন ও মূর্তি সমূহ হতে দূরে থাকুন, আর অতিরিক্ত বিনিময় চাওয়ার উদ্দেশ্যে কাউকে দেবেন না, এবং স্বীয় রবের সন্তোষ লাভোদ্দেশ্যে ধৈর্য্য ধারণ করুন”-সূরা মুদ্দাসসিরঃ আয়াত ১-৭


উল্লিখিত আয়াতে কারীমা যেন মানব জীবনের উদ্দেশ্যের পূর্ণতা সাধন করেছে। কেননা, প্রথম ওহী সূরা আলাকের প্রথম আয়াতে পাঁচটি উচ্চতর মানবতার জন্য সঠিক জ্ঞানের শর্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কেননা, মানুষের সঠিক জ্ঞান লাভ না হলে কিছুই হল না।

ওহীর দ্বিতীয় পর্যায়ের সূরা মুদ্দাসসিরের আয়াতসমূহতে বলা হচ্ছে, সঠিক জ্ঞানের উচ্চ মর্যাদার স্বীকৃতি সত্ত্বেও ততক্ষণ পর্যন্ত মনুষ্যত্বের পূর্ণতা সাধিত হওয়া অসম্ভব, যে পর্যন্ত না সঠিক জ্ঞানের সাথে সঠিক আমল বর্তমান থাকে। কেননা, সঠিক জ্ঞান আছে বটে কিন্তু সহীহ আমল বর্তমান নেই এ সমন্বয় না থাকলে তাতে কোন উপকার সাধিত হয় না, তা সম্পূর্ণ নিষ্ফল প্রমাণিত হয়।

মানুষের হিদায়েত তথা সঠিক পথের দিশার জন্য সহীহ ইলেম এবং তদানুসারে আমল উভয়ই অত্যন্ত জরুরী। জ্ঞান ও আমলের উল্লেখিত বৈশিষ্ট্য বর্তমান থাকলে তবেই মানুষ মনুষ্যত্বের উচ্চতর স্তর লাভ করতে সক্ষম হবে।


মোট কথা সূরা আলাকের প্রথম নাযিলকৃত ওহীতে উপকারী জ্ঞানের প্রতি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে নাযিলকৃত সূরা মুদ্দাসসিরের প্রাথমিক আয়াতসমূহে উপকারী আমলের সমন্বয় সাধনের প্রতি যথার্থ ইঙ্গিত প্রদান করে হয়েছে।


নবুয়ত লাভের পর মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) তিন বছর পর্যন্ত গোপনে গোপনে ইসলামের দাওয়াত প্রদান করতে থাকেন। প্রথম পর্যায়ের গোপন দাওয়াতে অল্প কয়েকজন মাত্র ইসলাম গ্রহণ করেন। গোপন দাওয়াতের তিন বছর অতিক্রান্তের পর আল্লাহর পক্ষ হতে প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত প্রদানের নির্দেশ নাযিল হয়। এ নির্দেশের লক্ষ্য ছিল রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিজের সম্প্রদায় কোরাইশ।

তাদেরকে জাহান্নামের আযাব হতে সর্বাগ্রে ভয় প্রদর্শনের আদেশ নাযিল হয়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
“অতঃপর আপনি তা সুস্পষ্ট শুনিয়ে দিন, যে বিষয়ে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন এবং মুশরিকদের হতে বিমুখতা অবলম্বন করুন”।


অপর এক আয়াতে আল্লাহ ইরশাদ করেন- “আর আপনার নিকটাত্নীয়দেরকে ভয় প্রদর্শন করুন”।

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।