দৃষ্টান্তবিহীন এক ঘটনা-পর্ব ১
একদা বনিইসরাইলের কতক লোক এসে হযরত দাউদ (আঃ) এর নিকট বলল, হুজুর! আমাদিগকে কিয়ামতের কিছু আলামত দেখান। যাতে আমাদের ঈমান আরও মজবুত হয়। হযরত দাউদ (আঃ) বনি ইসরাইলদেরকে বললেন, আগামী তিনদিন পরে ঈদ। তোমরা ঈদের দিন ময়দানে এস। তাহলে তোমরা কিছু কিয়ামতের আলামত দেখতে পাবে। এই বলে তাদেরকে বিদায় করলেন। তৎসময় বনি ইসরাইল সম্প্রদয়ের মধ্যে একজন ধনি ব্যক্তি ছিল।
তাঁর অনেক টাকা পয়সা অর্থ সম্পদ ছিল। এ ব্যক্তির ছিল একটি সখের গরু। গরুটি দেখতে যেমন সুন্দর ছিল তেমনি মালিক তাকে স্বর্ণ, রৌপ্য, হীরা জহরত দিয়ে এমন ভাবে সাজিয়েছিল যাতে একবার ওটার প্রতি কার দৃষ্ঠি পড়লে আর চক্ষু ফেরাতে ইচ্ছে হত না। সে গরুটি মাঠে মুক্ত ভাবে ছেড়ে দিত। গরু দিনের বেলায় মাঠে চরত আর রাত্রি বেলা এসে মহাজনের ঘরে শুয়ে থাকত।
একদিন মহাজনের গরুটি নিখোঁজ হল। তখন মালিক চতুর্দিকে লোক লাগিয়ে গরুটির খোঁজ খবর নিতে লাগল। কয়েকদিন যাবৎ সে অস্থির হয়ে শহরের সর্বত্র অনুসন্ধান করল তবুও গরুর কোন হদিস পাওয়া সম্ভব হল না। তখন মালিক ঘোষণা দিলেন কেউ যদি গরুর সন্ধান দিতে পারে তাকে দশ হাজার টাকা পুরষ্কার করা হবে।
পুরুষ্কারের কথা শুনে বহু লোক গরুর সন্ধানে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। বনি ইসরাইলদের মধ্যে সে যুগে অনেক অলী আল্লাহ, বোজর্গ ও নেককার ব্যক্তি ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন নেককার মহিলার কথা এখানে তুলে ধরছি। মহিলাটি ছিল অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ, দিবা-রাত্র এবাদত বন্দেগীর মধ্যে থাকতেন।
তাঁর একটি মাত্র ছেলে ছিল। আর অন্য কোন আপন জন ছিল না। মহিলা নির্বেঘ্নে ইবাদাত করার জন্য লোকালয় ছেড়ে এক নির্জন ময়দানের মধ্যে বসতি স্থাপন করেন। ছেলেটি তাঁর সঙ্গে ছিল। সেখানে তাদের ঘরের পাশ দিয়ে একটি ছোট পানির নহর সর্বদা বয়ে যেত। তাদের যখন ক্ষুধা পেত তখন তারা গিয়ে নহরের পানি পান করত। তাতেই তাদের ক্ষুধা নিবৃত্ত হত। কিছুদিন এভাবে ইবাদাত করার পরে দেখা গেল নহরের পাশে কয়েকটি আনার গাছ জন্মেছে। দেখতে দেখতে গাছে গুলা বড় হয়ে তাতে ফল ধরতে লাগত। গাছ গুলোতে প্রতিদিন দুইটি করে পাকা ফল দিতে আরম্ভ করল। তখন মহিলা ও তাঁর ছেলে আল্লাহর প্রদত্ত আনার খেতে আরম্ভ করল। প্রতিদিন তারা দুইটি ফল খেয়ে পরিতৃপ্তি হত।
আল্লাহর বান্দার রিজিকের মালিক আল্লাহ নিজেই। তাই তাদের আর রুজি রোজগারের কোন ভাবনা ছিল না। তারা দিবারাত্র ইবাদাতে মশগুল থাকত এবং আনার ও নহরের পানি পান করে অতি সাচ্ছন্দে দিন যাপন করত। এভাবে তারা একাধারে সত্তর বছর যাবত এবাদাত বন্দেগীতে লিপ্ত থাকে এবং আনার ও নহরের পানি পান করে জীবিকা নির্বাহ করে।