দীর্ঘ জীবন লাভের আকাঙ্ক্ষা -১ম পর্ব
জুলকরনাইন একদিন তাঁর জ্ঞানী, গুনী ও বিশেষজ্ঞদের ডেকে বললেন। আমি এক কিতাবে দেখেছি, আল্লাহ তা’য়ালা পৃথিবীতে এমন এক বস্তু লুকিয়ে রেখেছেন যা কোন মানুষ পান করলে সে আর কিয়ামতের পূর্বে মৃত্যু বরন করবে না। অতএব আপনারা বলুন বস্তুটি কি এবং কি ভাবে লাভ করা যায়? উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্য থেকে একজন বিশেষজ্ঞ বললেন, হুজুর! আমি হযরত আদম (আঃ) এর এক নছিহত নামা পাঠকালে দেখলাম, তিনি বলছেন আল্লাহ তা’য়ালা পৃথিবীতে আবেহায়াত নামক সাদা, সুস্বাদু ও ঠাণ্ডা জাতীয় এক প্রকার তরল পদার্থ প্রেরণ করেছেন। যা কোন মানুষ একবার খেতে পারলে সে আর কিয়ামতের পূর্বে মৃত্যুমুখে পতিত হবে না। তবে এ পদার্থটি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে পাহাড়ের অভ্যন্তরে গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন এক স্থানে রক্ষিত আছে।
একথা শুনে জুলকরনাইন বললেন, আমি আবেহায়াত পান করে দীর্ঘজীবি হতে চাই। তবে সে অন্ধকার স্থানে পৌঁছার উপায় কি? বিশেষজ্ঞগণ বললেন, যে মাদী ঘোড়ার বাচ্চা হয় নি, এমন ঘোড়ার পৃষ্ঠে ছওয়ার হয়ে সেখানে যেতে হবে। জুলকরনাইন বললেন, তবে আপনারা আমার সঙ্গে চলুন। তারা উত্তরে বলল, আপনি আপনার প্রধান উপদেষ্টা খেজের (আঃ) কে ও অন্যান্য সৈন্য সামান্ত নিয়ে যান। আমরা এখানে কিছু বিশেষ দায়িত্ব পালনে রত আছি। জুলকরনাইন নিজ সিংহাসনে ফিরে এসে বার বছরের জন্য একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির নিকট রাজ্য পরিচালনার ভার অর্পণ করেন। অতপর এক হাজার লোক নিয়ে অন্ধকার দেশে রওয়ানা করার প্রস্তুতি নেন।
হযরত খেজের (আঃ) কে কাফেলায় প্রধান পরিচালক নিযুক্ত করেন। অন্ধকারের দেশে আলোর প্রয়োজন অধিক। তাই তিনি রাজকোষ থেকে দুটি উজ্জ্বল মানিক নিয়ে একটি খেজের (আঃ) কে দিলেন। অপরটি নিজের কাছে রাখলেন। অতপর বিরাট কাফেলা নিয়ে তিনি আবেহায়াতের খোঁজে রওয়ানা হলেন। প্রচুর খাদ্য ও রসদ সঙ্গে নিতে তিনি ভুল করলেন না। অনেক দিন পথ চলে তিনি পূর্বদেশে এসে পৌঁছলেন। আরো অগ্রসর হয়ে কাকেশাস পার্বত্য এলাকায় পৌঁছে তারা পথ হারিয়ে গেলেন। সকলেই সহপাঠি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেন। দীর্ঘ এক বছর যাবত তারা বিচ্ছিন্নভাবে উক্ত এলাকায় ঘুরলেন। মাঝে মাঝে তারা কতকে মিলিত হয়েছে আবার বিচ্ছিন্ন হয়েছে। এ সময় হযরত খেজের (আঃ) এক অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকা দেখে সম্মুখে অগ্রসর হন। তিনি যতই অগ্রসর হন ততই গভীর অন্ধকারে নিপতিত হন। তখন তিনি নিজ থলে থেকে উজ্জ্বল মানিক বের করে তাঁর আলোতে এগুতে থাকেন। তিনি আরো গভীরে অগ্রসর হয়ে এক শ্বাসরুদ্ধকর স্থানে পৌঁছে একটি কূপ দেখতে পান।
কূপের কাছে গিয়ে তিনি কূপের পানির যে রং দেখলেন তাতে উহাই আবেহায়াত বলে তিনি ধারণা করলেন। তখন দুহাত ভরে তিনি পানি উঠিয়ে পান করলেন। মধুর চেয়ে মিষ্টি, দুধের চেয়ে স্বাদ ও মেশকের চেয়ে অধিক ছিল তাঁর সুগন্ধি। তিনি ওখানে বসে পেট ভরে পানি পান করলেন। তাতে তাঁর কয়েক দিনের তৃষ্ণা ও ক্ষুধা দূরীভূত হল। শরীরে নতুন শক্তির সঞ্চার হল। অতপর তিনি জুলকরনাইনকে এখানে এনে পানি পান করাবেন বলে আশা করে পিছনের দিকে রওয়ানা করলেন।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী