তোমার আসল ঠিকানা করব
বাদশাহ হারুনার রশীদ হজ্জ শেষে মক্কা মোকাররমায় কিছুদিন থাকার পর একদিন নিজ দেশে ফেরার প্রস্তুতি নিলেন। শাহী কাফেলা দেখার জন্য শহরের বাইরে অসংখ্য লোক জড়ো হল। বিখ্যাত বাহ্লুল মজনুন ও তাদের পাশে এসে দাঁড়াল। দুষ্ট ছেলেরা মজনুন বাহ্লুলকে দেখতে পেয়ে তার প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও তার প্রতি ঢিল ছুড়তে লাগল। শাহী কাফেলা সেখানে পৌঁছামাত্র দুষ্ট ছেলেরা এদিক সেদিক ছুটে পালাল। এ সময় বাহ্লুল সশব্দে ডাকতে শুরু করল- হে আমীরুল মুমিনিন! হে আমীরুল মুমিনিন!
মাজনুনের ডাক শুনে বাদশাহ জবাব দিলেন, লাব্বায়েক হে বাহ্লুল! লাব্বায়েক! কি বলতে চাও বল।
বাহ্লুল বলল- আসহাবে রাসূল হযরত কোদামা (রাঃ) বলেন- আমি হজ্জের সময় মিনাতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে উঠের উপর একটি সাধারণ আসনে উপবিষ্ট রেখেছি। সেখানে কোন প্রকার হাক-ডাক ও শোরগোলের আয়োজন ছিল না। সুতরাং হে আমীরুল মুমিনিন! তুমিও অহংকার ত্যাগ করে বিনয়ের সাথে পথ চল। কেননা, এটা সুন্নাতে নব্বী।
বাহ্লুলের কথা শুনে বাদশাহ হারুনার রশীদ কেঁদে ফেললেন। তিনি বাহ্লুলকে তার প্রতি আরো নসীহত করার জন্য অনুরোধ করলেন।
বাহ্লুল মজনুন বললেন- তুমি হয়ত সমস্ত পৃথিবীর শাসনকর্তা, পৃথিবীর সকলে তোমার কোথা মান্য করে, তাতে কি হল? এই মুহূর্তে তুমি মৃত্যুবরণ করলে, তোমার আসল ঠিকানা হবে করব। লোকেরা তোমাকে মাটি চাপা দিয়ে চলে আসবে। কোথায় যাবে তোমার এ অহংকার, আর কোথায় বা পড়ে থাকবে তোমার দুনিয়ার বাদশাহী?
একথা শুনে বাদশাহ আরো বেশী কাঁদতে লাগলেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বললেন- আরো কিছু নসিহত করো হে বাহ্লুল! বাহ্লুল বললেন- হে আমীরুল মুমিনুন! যে ব্যক্তি আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করে এবং নিজের সৌদর্যকে পাপাচার হতে রক্ষা করে সে আল্লাহর দফতরে নেক্কার লোকদের মধ্য গণ্য হয়। বাদশাহ হারুনার রশীদ বাহ্লুলের নসিহত শুনে বললেন- তুমি বেশ ভাল কথা বলেছ। আমি তোমাকে পুরস্কৃত করতে চাই। বাহ্লুল বলল- তোমার পুরস্কারের আমার কোন প্রয়োজন নেই। যার প্রয়োজন তাকে দাও। বাদশাহ পুনরায় বললেন- তোমার কোন ঋণ থাকলে বল আমি তা আদায় করে দেই।
বাহ্লুল জবাব দিলেন, আমি দ্বীনের বিনিময়ে ঋণ আদায় করতে চাই না। আগে নিজের ও মানুষকে হক আদায় করতে চাই না। অবশেষে হারুনার রশিদ বললেন- আমি তোমার জন্য কিছু নিয়মিত ভাতা বা বেতন নির্ধারিত করতে চাই।
বাহ্লুল মাজনুন আকাশের দিকে মুখ তুলে বললেন- হে আমীরুল মুমিনিন! তুমি এবং আমি উভয়ে আল্লাহর বান্দা। অতএব কি করে সম্ভব যে তিনি তোমার রিজিকের ব্যবস্থা করবেন। আর আমার জন্য করবেন না? এ সকল আলোচনার পর বাদশাহ হারুনার রশীদ তাঁর কাফেলাকে সামনের দিকে অগ্রসর হতে বললেন।
আর একবার মাজনুন বাহ্লুল বাদশাহ হারুনার রশিদকে বললেন- তুমি পৃথিবীর শাসনকর্তা হয়েছ বলে কি তোমাকে মৃত্যু গ্রাস করবে না? তখন তোমাকে দুনিয়া সাহায্য করবে না। সুতরাং হে দুনিয়ার প্রার্থী খবরদার! আজ দুনিয়া তোকে হাসাচ্ছে, কাল কাঁদাবে।
মজনুনের কথা শুনে বাদশাহ হারুনার রশীদ চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। বর্ণিত আছে বাদশাহ এত দীর্ঘ সময় অজ্ঞান অবস্থায় ছিলেন, তাঁর তিন ওয়াক্ত নামাজ কাজা হয়ে গিয়েছিল।