তিনি একদিন ডাকাত ছিলেন
শায়েখ আসমায়ী (রহঃ) যিনি প্রখ্যাত বুজুর্গ। তিনি বর্ণনা করেন, একবার আমি বসরার জামে মসজিদের ভেতর থেকে বের হয়ে এল গলি পথে হাঁটছিলেন। সেই নির্জন পথে হঠাৎ এক আরব বেদুঈনের সাথে আমার সাক্ষাত হল। তার গলায় ঝুলানো ছিল একটি তলোয়ার, হাতে তীর ধনুক এবং সে একটি দুর্বল উটের উপর বসা ছিল।
সে নিকটে এসে সালাম করে আমার গোত্র পরিচয় জিজ্ঞেস করল। আমি বললাম, আমি আসমায়ে কবিলার লোক। এবার কি তুমিই সেই বিখ্যাত আসমায়ী? আমি বললাম, হ্যাঁ সে জানতে চাইল, তুমি কোথা থতে আসছ? আমি বললাম, এমন স্থান হতে এসেছি, যেখানে আল্লাহর কালাম পাঠ করা হয়। সে কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, আল্লাহর কি কোন কালাম আছে। যা পাঠ করা হয়? আমি নিম্নের আয়াত পর্যন্ত পাঠ করলাম।
وَفِي السَّمَاءِ رِزْقُكُمْ وَمَا تُوعَدُونَ
আকাশ রয়েছে তোমাদের রিযকের উৎস ও প্রতিশ্রুতি। (সূরা যারিয়াতঃ২২)
এ আয়াত তিলাওয়াতের পর সে জিজ্ঞেস করল, হে আসমায়ী এটা কি আল্লাহর কালাম? আমি বললাম, ঐ আল্লাহর শপথ! যিনি মুহাম্মাদ (সাঃ) কে সত্য নবী করে পাঠিয়েছেন, এটা আল্লাহর কালাম, যা তিনি তাঁর নবীর উপর নাযিল করেছেন।
আমার বক্তব্য শেষ হওয়ার পর সে দাঁড়িয়ে তার উটটি জবাই করল। অতঃপর এটাকে টুকরো টুকরো করে আমাকে বলল, এখন আমি এ গোশত মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দেব। এ কাজে তুমি আমাকে সাহায্য কর। আমরা পথচারীদের মধ্যে ঐ গোশত বন্টন করে দিলাম। অতঃপর সে তার তলোয়ার ও তীর ধনুক ভেঙ্গে ফেলে মাটিতে পুতে রেখে সম্পূর্ণ রিক্ত হস্তে বিরান জঙ্গলের দিকে যাত্রা করল। তখন সে অনুচ্চস্বরে তিলাওয়াত করছিল وَفِي السَّمَاءِ رِزْقُكُمْ وَمَا تُوعَدُونَ
হযরত আসমায়ী (রহঃ) বলেন, আমি নিজেকে তিরস্কার করে বললাম, ঐ বর্বর লোকটি পথে-ঘাটে লুটতারাজ করে বেড়াত। সে এইমাত্র তোমার নিকট আল্লাহর কালাম শুনে আল্লাহর উপর তাওয়াককুল করে যাবতীয় আসবাব ত্যাগ করেছে। অথচ কত কাল যাবত তুমি এই কালাম তিলাওয়াত করছ, কিন্তু তোমার মধ্যে কোন চেতনা আসেনি।
হযরত আসমায়ী (রহঃ) বলেন, পরবর্তীতে একবার আমি বাদশাহ হারুনার রশীদের সাথে সাথে গেলাম। এমন সময় কে যেন আমাকে পেছন থেকে আহবান করল। আমি পেছনে ফিরে দেখলাম, আহ্বানকারী সেই আরব বেদুঈন। কিন্তু তার দেহটি শুকিয়ে একেবারে বিবর্ণ হয়ে গেছে। সে আমার হস্ত ধারণ করে মাকামে ইব্রাহীমের পেছনে নিয়ে গেল। সেখানে আমাকে এক স্থানে বসিয়ে বলল, ভাই! আমাকে কিছু আল্লাহর কালাম পড়ে শোনাও। আমি আবার সূরা যারিয়াতের শুরু হতে তিলাওয়াত শুরু করলাম। যখন وَفِي السَّمَاءِ رِزْقُكُمْ وَمَا تُوعَدُونَ পর্যন্ত পাঠ করলাম, তখন সে চিৎকার করে উঠল এবং বলল, ভাই! আমি সৃষ্টিকর্তার ওয়াদা যথাযথভাবেই পেয়েছি। তুমি আরো কিছু তিলাওয়াত কর। আমি পরবর্তী আয়াত তিলাওয়াত করলাম-
فَوَرَبِّ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ إِنَّهُ لَحَقٌّ مِّثْلَ مَا أَنَّكُمْ تَنطِقُونَ
অনুবাদঃ অতএব আসমান জমীনের প্রতিপালকের শপথ! উহা সত্য যেমন, তোমাদের পরস্পরের কথা-বার্তা বলা। (সূরা যারিয়াত)
উক্ত আয়াত শুনে আবারো সে চিৎকার করে উঠল এবং বলল, সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ পাকের সঙ্গে কে এমন আচরণ করল যে, তিনি শপথ করতে বাধ্য হলেন। মানুষ কি তার ওয়াদা বিশ্বাস করে না যে, শেষ পযর্ন্ত তাকে শপথ করতে হল। পর পর তিনবার একথাগুলো বলার পর সে মারা গেল।