তায়েফবাসী সাকীফ গোত্রের ইসলাম গ্রহণ – শেষ পর্ব

তায়েফবাসী সাকীফ গোত্রের ইসলাম গ্রহণ – ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কোনরূপ সময় দিতে রাজী হইলেন না। বরং হযরত আবু সুফিয়ান ইবনে হারব ও হযরত মুগীরা ইবনে শো’বা (রাঃ) কে উহা ভাঙ্গিয়া ফেলিবার উদ্দেশ্যে তাহাদের সহিত প্রেরণ করিলেন। তাহারা ইহাও শর্ত রাখিয়াছিল যে, নামায পড়িবে না এবং নিজেদের মূর্তিগুলি তাহারা নিজ হাতে ভাঙ্গিবে না।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলিলেন, তোমাদের নিজ হাতে মূর্তি না ভাঙ্গার বিষয়টি মানিয়া লইলাম, তবে নামায পড়িবে না ইহা হইতে পরে না। কারণ যে দ্বীনে নামায নাই উহাতে কোন প্রকার কল্যাণ নাই। তাহারা বলিল, ঠিক আছে, আমরা নামায পড়িব যদিও তাহা একটি নীচ কাজ।

ইমান আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) হযরত ওসমান ইবনে আবিল আস (রাঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেন যে, সকীফ গোত্রের প্রতিনিধি দল রাসূলুল্লাহ (সাঃ) – এর খেদ্মতে হাজির হইলে তিনি তাহাদিগকে মসজিদে অবস্থান করেইলেন, যেন তাহাদের মন নরম হয়। তাহারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমতে শর্ত আরোপ করিল যে, তাহাদিগকে জেহাদের উদ্দেশ্যে সমবেত করা হইবে না, তাহারা নামায পড়িবে না এবং ভিন্নগোত্রের কাহাকেও তাহাদের উপর আমীর নিযুক্ত করা হইবে

না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলিলেন, তোমাদের তিনটি শর্ত মঞ্জুর করা হইল। অর্থাৎ তোমাদিগকে জেহাদে যাইতে বলা হইবে না, তোমাদের ওশর উসুল করা হইবে না। (তবে নামায পড়িতে হইবে। ) কারণ, যে দ্বীনে নামায নাই সে দ্বীনে কোন প্রকার কল্যাণ নাই। হযরত ওসমান ইবনে আবিল আস (রাঃ) বলিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাকে কোরআন শিক্ষা দিন এবং আমাকে আমার কওমের ইমাম বানাইয়া দিন।

ওহব (রহঃ) বলেন, আমি হযরত জাবের (রাঃ)-এর নিকট সাকীফ গোত্রের বাইয়াতের ঘটনা জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিলেন, তারাহা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর নিকট এই শর্ত পেশ করিয়াছিল যে, তাহারা যাকাত প্রদান করিবে না এবং জেহাদে অংশগ্রহণ করিবে না। পরবর্তীতে হযরত জাবের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে এই কথাও বলিতে শুনিয়াছেন যে, ইসলাম গ্রহণ করিলে তাহারা যাকাতও দিবে জেহাদও করিবে। (বিদায়াত)

হযরত আওস ইবনে হুযাইফা (রাঃ) বলেন, আমরা সাকীফের প্রতিনিধি দলের সহিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হইলাম। আহলাফের (অর্থাৎ অঙ্গীকারাবদ্ধ গোত্রের) লোকেরা মুগীরা ইবনে শো’বা (রাঃ)-এর নিকট অবস্থান করিল এবং বনু মালেক গোত্রকে রাসূলাল্লাহ (সাঃ) নিজের একটি তাবুতে স্থান করিয়া দিলেন। তিনি প্রত্যহ এশার নামাজের পর আমাদের নিকট আসিতেন এবং দাঁড়ানো অবস্থায় আমাদের সহিত কথা বলিতেন।

দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর দরুন তিনি বারবার পা বদল করিতেন। নিজের কওম কোরাইশের পক্ষ হইতে তিনি যে সকল কষ্ট পাইয়াছেন তাহাই বেশীর ভাগ আলোচনা করিতেন। তারপর বলিতেন, আমি (এই সকল কষ্টের কারণে) কোন দুঃখ করি না। কারণ তখন মক্কায় আমাদিগকে দুর্বল ও অসহায় মনে করা হইত। কিন্তু মদীনায় আসিবার পর তাহাদের সহিত আমাদের যুদ্ধের পালা আরম্ভ হইল। কখনও আমরা জয়লাভ করিতাম কখনও তাহারা জয়লাভ করিত।

হযরত আওস (রাঃ) বলেন, একরাত্রে রাসূলাল্লাহ (সাঃ) আমাদের নিকট নির্দিষ্ট সময় হইতে কিছু দেরী করিয়া আসিলেন। আমরা বলিলাম, আপনি আজ দেরী করিয়া আসিয়াছেন। তিনি উত্তরে বলিলেন, আমি প্রত্যহ যে পরিমাণ কোরআন শরীফ তিলাওয়াত করি আজ উহার কিছু অংশ বাকী রহিয়া গিয়াছিল। তাহা শেষ না করিয়া আসিতে মন চাহিল না। (বিদায়াহ)

সূত্রঃ হায়াতুস সাহাবা

তায়েফবাসী সাকীফ গোত্রের ইসলাম গ্রহণ – প্রথম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।