তালুত ও জালুত যুদ্ধ – পর্ব ১
তালুত বনী ইসরাইলীদের বাদশাহ। সকল বনী ইসরাইলীই এখন তালুতের অনুগত। বাদশাহ হিসেবে তালুতকে বরণ করে নেয়ার পরই তিনি সাধারণ ঘোষণা দিয়ে দিলেন যে, ফিলিস্তিনীদের মোকাবিলা করতে হবে। ফিলিস্তিনীরা বনী ইসরাইলীদের প্রতি অত্যাচার করেছে এবং এখনও করছে। তাদের এ অত্যাচার অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। এ অবস্থার অবসান করতে হবে। এজন্য বনী ইসরাইলীদের প্রত্যেকে যেন প্রস্তুতি নেয়।
ঘোষণা পাওয়ার পর বনী ইসরাইলীরা অতি উৎসাহ ও আগ্রহের সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করল। কিন্তু সাথে সাথে একটি বিষয় তালুতের চিন্তায় ধরা পড়ল। তা হল বনী ইসরাইলীদের অতীত ইতিহাস হতে জানা যায় যে, তারা যদিও প্রথম প্রথম কোন কার্যে আগ্রহ প্রকাশ করে কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে প্রয়োজনের সময় পিছপা হয়ে পড়ে। এমন কি তালুতের বাদশাহ হিসেবে নিযুক্তি নিয়েও তো তারা বহু ভেজাল করেছে।
তাদের কাছে পাঠানো বনী কে অবিশ্বাস করেছে। আর বিশেষ করে যুদ্ধের ব্যাপারে তো সীমাহীন নাজুক ব্যাপার। এ সময় খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। অনেক সময় বিরাট সৈন্য বাহিনীর মধ্যে মাত্র একজন সৈনিকের ভীরুতা ও অসাবধানতার জন্য অথবা তার মুনাফিকীর জন্য পুরা বাহিনীরই পরাজয় টেনে আনে। আর বনী ইসরাইলদের মধ্যে তো ইতোপূর্বে এরূপ ঘটনা বহু ঘটেও ছিল।
হযরত মূসা (আঃ) তাদেরকে নিয়ে যালিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে গেলে তারা অতি আগ্রহের সাথে সামনে বাড়লেও ঠিক জিহাদের পূর্বক্ষণে জিহাদ করতে গিয়ে করতে অস্বীকার করে বসেছিল। যার ফলস্বরূপ চল্লিশ বছর পর্যন্ত তারা তীহ প্রান্তরে বনী জীবন যাপন করেছিল। এসব কথা তালুতের মানসপটে ভেসে উঠেছে। তাই তালুত ভাবল যেহেতু বনী ইসরাইলীদের মধ্যে এ অভ্যাস রয়েছে তাই যুদ্ধে জড়িত হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে পরীক্ষা করে নেয়া একান্ত প্রয়োজন যে, তাদের মধ্যে কারা ধৈর্য ও সাহসের সাথে জিহাদের দায়িত্ব পালন করে আর কারা পিছু হটে যায়।
আল্লাহ পাক তালুতের চাহিদা অনুসারে বনী ইসরাইলদের পরীক্ষায় পন্থা ওহীর মাধ্যমে হযরত শামভীল (আঃ)-এর প্রতি নাযিল করলেন। হযরত শামভীল (আঃ) তালুতকে জানিয়ে দিলেন যে, তাদের যাচাই করার পথ হল ফিলিস্তিন যাওয়ার পথে জর্ডান নদী পড়বে। সেখানে পৌঁছার পর সকল মানুষ পিপাসার্ত হয়ে পড়বে।
তখন যারা জর্ডান নদী হতে পিপাসা নিবারণ পরিমাণ পানি পান করবে অথবা পানিই একেবারে পান করবে না তারা ধৈর্য ও সাহসের সাথে যুদ্ধ করতে পারবে। তারা আল্লাহর অনুগত বান্দাহরূপে প্রমাণিত হবে।
যার যারা সেখান থেকে তৃপ্তির সাথে পানি পান করবে তারা সীমালঙ্ঘনকারী বলে গণ্য হবে। তারা অতিব দুর্বল হয়ে পড়বে এবং ভীরু কাপুরুষের ন্যায় পিছনে সরে আসবে। কোন কোন বর্ণনায় এ পন্থাটি হযরত শামভীল (আঃ)-এর প্রতি অবতীর্ণ হয়নি এবং আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে তালুতের অন্তরে ইলহাম হয়েছিল।