টোল

যখন রমনা পার্কে পৌছালাম তখন তিনটার মত বাজে ! সাড়ে তিনটার সময় নিশির সাথে দেখা করার কথা । ভাগ্য ভাল আগেই এসে পৌছেছি । দেরি হয়ে গেলে আবার নিশি বেশ চিৎকার চেঁচামিচি শুরু করে দেয় ! বড্ড ঝামেলা শুরু করে দেয় ! তবে নিশি অন্য দিক দিয়ে বেশ ভাল । অন্তত অন্যান্য প্রেমিকাদের তুলনায় নিশিতো অনেক ভাল ! এই যে এই দুপুর বেলাতেও কি সুন্দর এই রমনা পার্কে দেখা করতে রাজি হয়ে গেছে ! অন্য কেউ হলে তো কেএফসি কিংবা বিএফসি ছাড়া দেখাই করতো না ! সেখানে জিনিস পত্রের দাম তো আছেই সাথে এখন সেখানে ঢুকতে সরকারী টোল দেওয়া লাগে ! উন্নয়ন মূলক কাজের জন্য সরকারি টোল ! অবশ্য রমনা পার্কেও ঢুকতে টোল দেওয়া লাগে ! তবে সেটা টাকার পরিমানে অনেক কম ! আর আজকাল কোথায় টোল লাগে না বল ! সব জায়গায় টোল ! আরে দেশের উন্নয়নের জন্য আমরা জনগন টাকা দেব না তো কে দিবে ! এই মোহাম্মাদ পুর থেকে শাহবাগ থেকে বাসে করে এলাম এখানে টোলের টাকা টা টিকিটের সাথে কেটে রেখেছে ।
তার আর তারপর শাহবাগ থেকে এখানে হেটে এলাম এইটুকু রাস্তা হাটার জন্য টোল দিতে হয়েছে মাত্র ১০ টাকা ! ১০ টাকা কোন টাকা হল ? এবং যাতে এই টোল নেওয়াটা স্বচ্ছ হয় এই জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে স্বয়ংকৃত রোবট স্থাপন করা হয়েছে । এরা দেখতে মানুষের মতই তবে কাজ কারবার বেশ পরিস্কার ! আগে তো শুনতাম কেবল সেতু কিংবা ফ্লাইওভারে উঠতেই টোল দেওয়া লাগতো ! তাও আবার কেবল বড় বড় গাড়ি গুলোতে ! তখন দেশের এতো উন্নয়নমূকল কাজের জন্য টাকা আসতো কোথা থেকে কে জানে ? তবে সেটা অনেক আগের কথা ! সেই ২০১৪র কথা ! এখন ২০২৪ ! দিন বদলিয়েছে ! আমি রমনা পার্কের গেটের কাছে হেটে গেলাম ! এই সময়টাতে ভিড় বেশ কম ! দেখলাম গেটের কাছে টোল গ্রহনকারী রোবট দাড়িয়ে রয়েছে ! আমি কাছে আসতেই বোরট বলে উঠলো -সুস্বগতম মিস্টার অপু তানভীর ! একটু চমকে উঠলাম ! কিন্তু পরক্ষনেই নিজেকে সামনে নিলাম ! আসলে নতুন এই প্রযুক্তি চালু হয়েছ তো যাতে সবার চোখের ছবি ন্যাশনাল ডাটাবেজে সেট করা থাকে ! এবং এই রোবট গুলোর ব্রেন বা কপ্ট্রোন তো সেই মেইন ডাটাবেজের সাথে সংযুক্ত থাকে ।
সুতরাং এরা যে কারো নাম পরিচয়ই জেনে যেতে পারে মুহুর্তেই ! ১০ বছর আগেও এমন ছিল না ! এখন হয়ে গেছে ! দেশে উন্নয়ন হচ্ছে ! এটা তারই প্রমান ! আমি একটু হাসি দিলাম ! জানি রোবট আমার হাসির অর্থ বুঝলো কি না ! রোবট বলল -আপনি কি পার্কে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক ? না পার্কে কেন প্রবেশ কেন করবো ? আমি তো হাওয়া খাইতে আইছি । আমি মুখে হাসি নিয়ে বললাম -হুম ! এই রোবট গুলোর সাথে খারাপ ব্যবহার করার উপায় নেই ! ইলেক্ট্রিক শক খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ! রোবট হাসি মুখে বলল -পার্কে ঢুকার ক্ষেত্রে আমাদের আছে তিন টাইপের টোল ব্যবস্থা ! সিঙ্গেল প্রবেশ, কাপল প্রবেশ এবং ফ্যামিলি প্রবেশ টোল সিস্টেম ! -বাহ ! ভাল তো ! -সিঙ্গেল ঢুকলে টোল রেট ৪০ টাকা, কাপল এক সাথে ঢুকলে ৬০ টাকা এবং ফ্যামিলি ঢুকলে ১০০ টাকা ! বাহ ! আসলেই মন টা ভাল হয়ে গেল ।
দেশের সরকার দেশের উন্নয়েনর জন্য টোল নিচ্ছে সাথে সাথে আমাদের কথাও ভাবছে । বাহ ! আমি বললাম -আমি কাপল টিকেট নিবো ! -আচ্ছা ধন্যবাদ ! আপনার সঙ্গি কি আপনার ওয়াইফ, বন্ধু নাকি গার্লফ্রেন্ড ? -কেন ? -তিন জনের ক্ষেত্রে রেট তিন রকম ! -ও আচ্ছা ! আমার গার্লফ্রেন্ড ! -আপনি কি কেবল পার্কে হাটবেন নাকি কোথাও বসবেনও ! -জি পুরোটা সময় তো আর হাটা যায় না ! একটু তো বসতেও হবে ! -তাহলে সিমেন্টের বেঞ্চের উপর বাসার টোলও দিতে হবে ! -জি আচ্ছা ! -আপনি কি কেবল পাশিপাশি বসবেন নাকি খুব কাছাকাছি বসবেন ? খাইছে রে ! এইটা আবার কি কথা ! বসলেই হল ! -জি ! একটি কাছাকাছি তো বসবোই ! বোঝেনই তো ! প্রেমিকা ! -হুম ! কেবল পাশাপাশি বসলে এক টোল রেট এবং বেশি কাছাকাছি বসলে আরেক টোল রেট ! -ও আচ্ছা ! -আপনি কি তার হাত ধরবেন ? -জি কেন ধরবো না ! অবশ্য ধরবো ! -তাহলে আপনাকে ১১ টাকা বেশি দিতে হবে ! -ও ! -তাকে কি চুম খাওয়ার ইচ্ছে আছে ? -জি ছিল তো ! অনেক দিন হয়ে গেল ! তা এর জন্যও বুঝি আলাদার টোল দিতে হবে ? -আশ্চর্য আপনি সরকারি জায়গায় বেসরকারি কাজ করবেন আর টোল দিবেন না ! এটা হল চুম টোল ! -ও ! -ওকে ! কত গুলো চুমো খাবেন ? -এটা কিভাবে বলবো ? -পার চুম ১৫ টাকা ! আমরা জানি তো পার্কে সিসিটিভিতে প্রায়ই ধরা পড়ে ।
সবাই এভারেজে ৫টা করে চুপ খায় ! সেই হিসাবে টাকা নিয়ে নেই ! ৫ টার সাথে একটার টোল ফ্রী ! -জি । অনেক ধন্যবাদ ! সব হিসাব পত্র করে রোবট একটা টোলের রশিদ বের করে দিল ! সেখানে দেখলাম সব হিসাব মত আমার টোলের পরিমান আসছে ২৭২ টাকা ! খারাপ কি ! পকেট থেকে টাকা বের করে দিয়ে গেটের সামনে অপেক্ষা করতে লাগলাম নিশির জন্য ! তিনটা থেকে সাড়ে তিনটা, সাড়ে চারটা বেজে গেল তার দেখা নাই ! কয়েকবার ফোন দিয়ে শেষে ফোন ধরে বলল -আরে শুনো আব্বু বাসায় ! এখন বের হতে পারবো না ! তুমি অন্য কোন দিন দেখা করতে এসো কেমন ! বাবু আমার ! কি আর বলবো ! গার্লফ্রেন্ড বাবু আমার বললে আর কিছু বলার উপায় থাকে না ! তার উপর যে ঝগড়া করবো তারও উপায় নেই ! ঝগড়া করলে নিশি আবার আমার সাথে ব্রেক আপ করতে পারে ! তখন নতুন গার্লফ্রেন্ড বানানোর জন্য আবার নতুন করে গার্লফ্রেন্ড টোল দিতে হবে !
গেলাম আবার টোল রোবটের কাছে ! পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করলাম ! রোবট হাসি মুখে বলল -সরি আমাদের এখানে প্রদানকৃত টোল ফেরৎ দেওয়ার নিয়ম নেই ! -আরে কিছু তো একটা করেন ! রোবট কিছু একটা ভাবলো ! তারপর বলল -ঠিক আছে টাকা ফেরৎ দিতে পারি তবে আমাকে ৫% কমিশন দিতে হবে ! -আপনি না রোবট ! রোবটও ৫% কমিশন খায় ? রোবট মুচকি হেসে বলল -এখানে সবাই কমিশন খায় ! কি আর করা ! ৫% কমিশন দিয়ে টাকা ফেরৎ নিয়ে হাটা শুরু করলাম ! সামনেই আবার টোল বক্স ! শাহবাগ পর্যন্ত হেটে যেতে ১০ টাকা টোল দিতে হবে !

আরো পড়তে পারেন...

রসিক গোপালের চালাকি

একবার গোপাল পাড়ার এক দোকান থেকে বাকি খেয়েছে। অনেকদিন হয়ে গেল দেনা সে শোধ করে…

নবাবের অষ্টাদশ পর্ব মহাভারত কথা –গোপাল ভাঁড়ের গল্প

একবার মুর্শিদাবাদের নবাবের খেয়াল হল, হিন্দুদের মত আমাকে নিয়ে মহাভারত রচিত হোক। যেমনি ভারা তেমনি…

উল্টো জব্দ

গ্রামের এক বড়সড় বাজার। মানুষজনের আগমন, বেচাকেনার ধুমধাম; আর পকেটমার, চাপাবাজ, টাউট-বাটপারের আনাগোনাও কম নয়।…