জুল করনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজ-৩য় পর্ব
জুল করনাইন ও ইয়াজুজ মাজুজ-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
জুলকরনাইন কয়েকদিন পথ চলার পরে এক সমুদ্র তীরে এসে পৌঁছালেন। সেখান থেকে সম্মুখে যাত্রার কোন ব্যবস্থা পেলেন না। অতএব তিনি সমুদ্র তীর ধরে অগ্রসর হলেন। সম্মুখে এক বিরাট নদী দেখলেন নদীর ওপারে এক শহর দৃশ্যমান হল। উক্ত শহরবাসী জুলকরনাইনের ভয়ে সমস্ত নৌকা ও যানবাহন লুকিয়ে রেখে ছিল। জুলকরনাইন সেখানে পৌঁছে নদী পার হবার ইচ্ছা করলেন। কিন্তু কোন নৌকা না থাকায় তার খুবই সমস্যা হল। তখন এমন নিকটস্থ জঙ্গল থেকে বিভিন্ন প্রকার গাছ কেটে নদীতে ভাসালেন। হঠাৎ এমন এমন একগাছ পেয়ে গেলেন যা পানিতে আদৌ ডুবে না তখন তিনি সেনা বাহিনীকে সে গাছ কেটে ভেলা তৈরির হুকুম দিলেন। সেনা বাহিনী তড়িৎ গতিতে গাছ কেটে বহু ভেলা তৈরি করে ফেললেন। তখন জুলকরনাইন স্বসৈন্য ভেলায় চড়ে নদী পার হলেন। জুলকরনাইন নতুন শহরে পৌঁছে দেখলেন সেখানের মানুষ খুবই দুর্বল, কৃষ্ণকায়।
তিনি তখন তাদের জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা এতটা দুর্বল কেন? তারা উত্তর দিল, আমাদের এখানে সম্পদ যথেষ্ট আছে কিন্তু খাদ্যের খুবই অভাব। আমরা রেশন পদ্ধতিতে খাদ্য পেয়ে থাকি। একথা বলে তারা জুলকরনাইনকে সম্মান প্রদর্শন করে বহু মতি, মানিক্য, হীরা ও মূল্যবান পাথর এনে উপঢৌকন হিসেবে প্রদান করে। জুলকরনাইন মানুষের নরম মেজাজ ও ভদ্রতা দেখে খুশী হলেন। তাদেরকে সংক্ষিপ্ত ভাবে ইসলামের বিধি নিষেধের তালীম প্রদান করে হিন্দুস্তানের দিকে অগ্রসর হলেন। হিন্দুস্তান পৌঁছে তিনি সেখানকার রাজাদের নিকট পত্রসহ দূত প্রেরণ করলেন।
পত্রে তিনি লিখলেন, আমি জুলকরনাইন হিন্দুস্থানে এসেছি। আমি চাই না যে আপনারা যুদ্ধে জড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। অতএব আপনারা অতিসত্বর আমার নিকট আত্মসমর্পণ করুন এবং উপযুক্ত খাজনা খেরাজ পাঠিয়ে আমাকে অন্যত্র চলে যাবার সুযোগ করে দেন। অন্যথায় পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করতে বাধ্য হব। হিন্দুস্তানের হিন্দু, আর্য ও বৈদিক রাজাগণ জুলকরনাইনের পত্র পেয়ে ভয়ে থরকম্পবান হল। তারা তড়িৎ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে জুলকরনাইনকে সন্তুষ্টির সাথে বিদায় করবে সিদ্ধান্ত নিলেন। সে মর্মে তারা রাজদূত প্রেরণ করে করে আত্মসমর্পণের সম্মতি জানিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাজনা ও উপঢৌকন প্রেরণ করল। জুলকরনাইন রাজাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে হিন্দুস্তান ছেড়ে সূর্য উদয়ের দেশে রওয়ানা করলেন। যাত্রাকালে একপত্রে তিনি সকল রাজাকে জানিয়ে যে, তিনি তার একজন ধার্মিক প্রতিনিধি এখানে রেখে গেলেন। তিনি সারা দেশময় সফর করবেন এবং মানুষকে দ্বীন কবুলের প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে জ্ঞানদান করবেন।
হিন্দুস্তানের রাজা বাদশাহ যেন তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন তার কাজে যেন কেউ বাধার সৃষ্টি না করেন। যদি কেউ এ প্রতিনিধির প্রতি দুর্ব্যবহার করে অথবা তাঁকে অমর্যাদা করে তার পরিমাণ হবে সারা হিন্দুস্তানের জন্য অতি ভয়াবহ। এরপরে জুলকরনাইন সূর্য উদয়ের দেশে রওয়ানা করলেন, বেশ কয়েকদিন পথ চলার পরে তিনি এমন এক জাতির মাঝে গিয়ে উপস্থিত হলেন। যাদের কোন ঘরবাড়ী ছিল না। মরুভূমির মাঝে তারা বসবাস করত। তারা উলঙ্গ থাকত। জীব-জানোয়ার ধরে তারা আহার করত। এদের মাথায় কোন বুদ্ধি জ্ঞান ছিল না। পশুর ন্যায় এরা প্রকাশ্যে সঙ্গম করত। জুলকরনাইনকে দেখে এরা বালুর মধ্যে পাহাড়ের গর্তে গিয়ে আশ্রয় নিল।
এখানে তিনি সময় ব্যয় না করে সম্মুখে অগ্রসর হলেন। পূর্ব দিকে অনেক দূর চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি দেখলেন এক বিরাট পার্বত্য এলাকা। এলাকার সীমা নির্ণয় করা কঠিন। সেখানে দুটো সুউচ্চ বড় পাহাড়ে রয়েছে। এ পাহাড় দুটিকে ঐতিহাসিকগণ উদয়াচল বলে উল্লেখ করেছেন।
সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী