ছাগল ও সিংহ

ক্লাসে কিছু ছাত্র থাকে যারা- যেমন বুদ্ধিমান তেমনি জ্ঞানী। আবার কিছু ছাত্র আছে যাদের স্মৃতি শক্তি একেবারে দুর্বল এবং অনেক পড়াশুনার পরও কিছুই মনে রাখতে পারে না। তাদের মূল সমস্যা হলো বুদ্ধি বা কৌশলের অভাব। তারা যদি সঠিক নিয়মে অর্থাৎ বুদ্ধি খাটিয়ে পড়াশুনা করতো তাহলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। পড়াশুনায় ভাল রেজাল্টের জন্য যেমন বুদ্ধি, কৌশল ও পরিশ্রম দরকার ঠিক তেমনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হলে দরকার সাহস। এ গুণগুলো কেবল মানুষের জন্য নয়, পশুপাখিদের মধ্যেও থাকা চাই। তা না হলে ছোট ছোট ও কমশক্তির অধিকারী প্রাণীরা হিংস্র প্রাণীদের কবল থেকে বাঁচতে পারবে না।

রংধনু আসরে আমরা এক হিংস্র সিংহের কবল থেকে এক চালাক ও সাহসী ছাগলের প্রাণ রক্ষার কাহিনী প্রচার করেছি। গল্প ছিল তেহরান সফররত এক বাংলাদেশী বন্ধুর সাক্ষাৎকার।

একবার একদল ছাগল পাহাড়ের কাছে একটি সবুজ ভূমিতে ঘাস খেতে গেল। ওই দলে ছিল একটি বুড়ো ছাগল। সব ছাগল খাওয়া-দাওয়া সেরে বাড়ি ফিরে গেলে বুড়ো ছাগল নিজের দল থেকে আলাদা হয়ে পড়ল। তখন ছিল সন্ধ্যা বেলা। একটু পড়েই রাতের আঁধার নেমে আসবে ভেবে ছাগলটি চিন্তায় পড়ে গেল। খুব তাড়াতাড়ি নিজের গ্রামে ফেরার জন্য পা বাড়াল। কিছুদিন যাওয়ার পর সে বুঝতে পারল যে, অন্ধকারে তার পক্ষে আস্তানায় পৌঁছা সম্ভব হবে না। তখন ধারে-কাছে কোথাও রাতটা কাটিয়ে দেবে বলে ঠিক করল ছাগলটি।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। ছাগলবুড়ো আবার ফিরে এল আগের জায়গায়। পাহাড়ের কাছে সে একটি গুহা দেখতে পেল। সেখানেই রাতটি কাটিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল এবং এদিক-ওদিক দেখেশুনে তারপর গুহার ভেতর প্রবেশ করল। গুহার ভেতর ঢুকে সামনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল এক সিংহ বসে আছে। ছাগল বুঝতে পারল-সিংহটি এই গুহাতেই থাকে।

সিংহকে দেখে ছাগলবুড়োর অন্তরাত্বা শুকিয়ে গেল। কারণ গুহা থেকে দৌড়ে পালানো কিংবা সিংহের সঙ্গে লড়াই করা- কোনটার ক্ষমতাই তার নেই। এ সময় চট করে তার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল। ছাগল সামনের পা দুটো খাড়া করে চোখ দুটো বড় করে গুহার দরজার কাছে এসে ভয়ংকর চেহারা নিয়ে দাঁড়াল। এ দৃশ্য দেখে সিংহ অবাক হয়ে গেল। তার নিজের চোখকেও বিশ্বাস করাতে পারছিল না। সিংহ কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখল ছাগলকে। তারপর বলল :

“এই কে তুই? আমার এখানে এসেছিস কেন?”

ছাগল সাহসের সঙ্গে জবাব দিল :

“আমি হচ্ছি মহারণ্য-ছাগবাহিনীর মহারাজ। আমি প্রতিজ্ঞা করেছি-পঞ্চাশটি বাঘ, কুড়িটি হাতি আর দশটি সিংহ চিবিয়ে খাব। এ পর্যন্ত পঞ্চাশটি বাঘ আর কুড়িটি হাতি চিবিয়ে খেয়েছি। এখন দশটি সিংহ খুঁজে বেড়াচ্ছি। দশটি সিংহ পেলে আমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা হয়।”

এ কথা শুনে সিংহ ভয় পেয়ে গেল। কারণ, সে ভাবল-ছাগলটা সত্য কথাই বলছে।

সিংহ ভয়ে কাচুমাচু হয়ে বলল : ঠিক আছে মহারাজ! আপনি আমাকে যেভাবে ইচ্ছা খাবেন। তবে মৃত্যুর আগে আমি একবার গোসল করতে চাই।
কাছেই একটা জলাধার আছে আপনি অনুমতি দিলে সেখান থেকে গোসল করে এক্ষুনি চলে আসব। ছাগল বুড়ো সিংহের অনুরোধে তাকে যাওয়ার অনুমতি দিল।
সিংহও দিল এক ভৌ-দৌড়। পথে এক শেয়ালের সঙ্গে সিংহের দখা হল।
শেয়াল জানতে চাইল : ওহে বনের রাজা, এভাবে দৌড়ে কোথায় যাচ্ছেন? সিংহ জবাব দিল : ছাগলের মত দেখতে এক আজব জানোয়ার আমার গুহায় এসেছে।
এই জানোয়ারটা নাকি সিংহও ধরে খায়। প্রাণ বাঁচাতে গোসলের কথা বলে চলে এসেছি।
সিংহের কথা শুনে ধুর্ত শেয়ার মুচকি হেসে বলল: ও এই কথা।
আমার মনে হচ্ছে-ছাগলটা আপনাকে বোকা বানিয়েছে। চলুন না, গুহায় গিয়ে ছাগলটাকে উচিত শিক্ষা দিয়ে আসি।
সিংহ ছাগলের প্রস্তাবে রাজি হওয়ার পর তারা গুহার দিকে রওনা হল।
দূর থেকে ছাগল দেখতে পেল-সিংহটা গুহার দিকে এগিয়ে আসছে, তার সঙ্গে একটি শেয়ালও দেখা যাচ্ছে।
বুড়ো ছাগল ওদের দেখে ভয় পেল কিন্তু বুকের বল হারাল না।
সিংহ ও শেয়াল গুহার কাছে আসার পর ছাগল চেঁচিয়ে বল : ওরে অপদার্থ ছাগল! তোকে না বলেছিলাম দশটি সিংহ আনতে আর তুই কিনা নিয়ে এলি মাত্র একটা সিংহ! দাঁড়া বেয়াদবির মজা দেখাচ্ছি!! ছাগলের কথা শুনে সিংহ ভাবল, শেয়াল নিশ্চয়ই তার সঙ্গে প্রতারণা করেছে।
সিংহ তখন লাফ দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল শেয়ালের ওপর। নিমিষেই ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল শেয়ালটাকে।
তারপর লেজগুটিয়ে দিল এক দৌড়। আর একবারও পিছু ফিলে তাকাল না। ছাগল এ দৃশ্য দেখে জোরে জোরে হাসতে লাগল।
সাহস ও বুদ্ধি দিয়ে সিংহকে পরাজিত করায় তার আনন্দের সীমা রইল না।

অনাহুত অতিথি

উম্মুল মোমেনীন হযরত খাদিজা (রাঃ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *