গাধার সংগীতচর্চা

এক গাঁয়ে এক ধোপার ছিল একটা গাধা। তার নাম অদ্ভূত। দিনভর গাধা ধোপার কাপড়ের বোঝা বইত। সন্ধ্যায় যখন ফিরত, তখন কৃপণ ধোপা তাকে খাবার দিত খুবই অল্প। তাতে তার খিদে মিটত না। তাই পেটের জ্বালায় গাধা রোজই রাতে সকলে ঘুমিয়ে পড়লে পাশের ক্ষেতে গিয়ে চাষীদের ফসল খেত। এক শেয়াল, সে-ও গাঁয়ে এটা সেটা চুরি করে খেত। চোরে চোরে ভাব হয় সহজে। গাধা ও শেয়ালে দারুণ ভব জমে উঠল। একদিন জোছনা রাতে দুই বন্ধুতে এক তরমুজের ক্ষেতে গিয়ে ঢুকল। অমন ফুটফুটে রাত, তারওপর সুস্বাদু তরমুজ পেটে পড়তেই গাধার মনে ফূর্তি ফুরফুর করে উঠল। সে শেয়ালকে বলল, বন্ধু আমার বড় গান গাইতে ইচ্ছে করছে, কী গান করব বল।

শেয়াল গাধার কথা শুনে চমকে উঠল। বলল, সর্বনাশ, অমন কাজও করো না, চাষীরা জেগে উঠলে পিটিয়ে হাড় ভাঙবে। বরং কাল সকালে যত খুশি গান গেয়ো। জান তো, ঘুমের রোগ, কথা বলার রোগ, কাশির রোগ থাকলে চুরি করা যায় না– বিপদ হয়। ওসব মতলব ছেড়ে পেট ভরে তরমুজ খাও। শেয়ালের কথায় গাধা খুবই দুঃখ পেল। বলল, ভাই! তুমি মানুষের গাঁয়ে যাতায়াত কর বটে– কিন্তু বুনো স্বভাব এখনো যায়নি। তাই সঙ্গীতের রস বুঝতে পার না। শেয়াল এবারে একটু রেগে গেল। বলল, ভাই, সঙ্গীতের রস ঠিকই আছে, কিন্তু তোমার গলা থেকে যা বেরোবে তা তো সঙ্গীত নয়….। ওসব তোমাকে সাজে না। গান নিয়ে কথা! গাধা ক্ষেপে গেল। বলল, কী অত বড় কথা। আমার গলায় গান হয় না? বেশ তাহলে শুনেই দেখ— শেয়াল অমনি তড়াক করে লাফিয়ে উঠে পড়ল।

তারপর পালাতে পালাতে বলল, একটু সবুর কর ভাই, আমি ক্ষেতের বাইরে চলে যাই তারপর যত পার তোমার সঙ্গীতচর্চা কর। শেয়াল ক্ষেতের বাইরে গিয়ে ঝোপের ভেতরে লুকিয়ে রইল। আর আড়াল থেকে গাধার কান্ড দেখতে লাগল। গাধা তো ততক্ষণে মনের আনন্দে গলা ছেড়ে গান গাওয়া শুরু করেছে। সেই বাজখাই চিৎকারে কিছুক্ষণের মধ্যেই চাষীদের ঘুমের দফা রফা হয়ে গেল। হৈ হৈ করে রেগেমেগে লাঠি হাতে সকলে ছুটে এল ক্ষেতের দিকে। তারপর গাধাটাকে ধরে আচ্ছারকম লাঠিপেটা করে মাঠ পার করে দিয়ে এল। উপদেশ: যার কাজ তারই সাজে, অন্য লোকের লাঠি বাজে।

আরো পড়তে পারেন...

প্রতারণার কোয়ান্টাম মেথড

কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি মিলনায়তনের একটি অনুষ্ঠানের খবর আমরা জানতে পারি পরদিন প্রকাশিত দেশের…

সৌভাগ্যের ভেজাল চিঠি

কয়েকদিন আগে একটা চিঠি পেয়েছি, ডাকযোগে। টাইপ করা চিঠিটাতে কোন নাম ঠিকানা ছিল না, খামের…

বুনো রাজা ও রাজকুমারী– শ্রী ক্ষিতীশচন্দ্র কুশারী

এক বুনো রাজা। বনেই তাঁর রাজত্ব। যত অসভ্য জংলী তাঁর প্রজা। প্রজাদের ঘর নেই, দোর…