খলীফা পুত্রের ঈর্ষান্বিত জীবন-২য় পর্ব
খলীফা পুত্রের ঈর্ষান্বিত জীবন-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কোথাও কোন আনন্দমুখর পরিবেশ, যেখানে সকলেই আনন্দে মত্ত, সেখানে রাজপুত্র প্রবেশ করা মাত্রই খামোশ হয়ে মজলিসের রূপ পাল্টে যেত। লোকেরা বাদশাকে বলত, আপনার সন্তানের অভিজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। কারণ সে কারো সাথে কথা বলে না। সর্বদাই তাসবীহ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এতে মনে হচ্ছে, তার কোন রোগ আছে। চিকিৎসা না করে এভাবে চলতে থাকলে শারীরিক ভাবে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবেন।
বাদশা নিজেই একদিন ছেলেকে নিয়ে বুঝাতে বসলেন। তিনি বলেন, দেখ বেটা! রাজদরবারে বহু লোকেরা সমাগম হয়ে থাকে। তোমার অবস্থা দেখে সকলেই আমাকে তিরস্কার করে। তোমার জন্য আমার লোক সমাজে অপমানিত হতে হয়। বাহ্যিক ভাবে হলেও তুমি একটু পরিবর্তন হও। আল্লাহ আমাকে বহু সম্পদের মালিক বানিয়েছেন।
তুমি ভাল ভাল কাপড় পরেও সৎ থাকতে পার। রাজপুত্র উত্তর দিলেন, বাবা! যখনই এসব নিয়ামত ব্যবহার কবর তখনই তো হিসাব দিতে হবে। কুরআন মাজিদে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيمِ এরপর কিয়ামতের দিনে তোমাদের প্রাপ্ত নিয়ামতের হিসাব দিতে হবে। আব্বাজান! আমি তো হিসাব দিতে পারব না। তাই আমি চাচ্ছি দুনিয়াতে সাথে ভাব খানাপিনা করে চলতে। দুনিয়ার সাথে ভাব না জমিয়ে পরকালের সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করছি। পরকালে আল্লাহ আমাকে উত্তম খাবার ও সাথে পোশাক এবং উত্তম জীবন দান করবেন।
দীর্ঘদিন বুঝানোর পরও বাগে আনতে না পেরে বিরক্ত হয়ে বললেন, বেটা তুমি দুনিয়াতে আমাকে মানুষের সামনে অপমানিত করলে? ছেলে বলতে লাগলো, বাবা! আমার কারণে যদি আপনাকে অপমানিত হতে হয় তবে আমি কোথাও চলে যাব, আপনি চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন।
কিয়ামতে আল্লাহর সামনে আমাকে একাই উপস্থিত হতে হবে আমার সাথে কেউ থাকবে না। আপনিও থাকবেন না, আমার মাও আমার সাথে থাকবেন না। যেমন কুরআনে বলেনঃ جِئْتُمُونَا كَمَا خَلَقْنَاكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ আমার কাছে তোমরা একজন একজন করে উপস্থিত হবে। বাবা! যেহেতু আমার একাই যেতে হবে, প্রশ্নের উত্তর আমাকেই দিতে হবে তাহলে এমন জীবন কেন গ্রহণ করবো না, যার জবাব আমি দিতে পারব। ছেলে চলে যাবে একথা জানতে পেরে মা একটি স্বর্ণের আংটি সাথে দিয়ে দিলেন। যেন প্রয়োজনের সময় কাজে লাগতে পারে।
আরেকটি কুরআন শরীফ দিয়ে বললেন যখন কুরআন তিলাওয়াত করবে মাকে স্মরণ করবে, কারণ মা তোমাকে ভুলতে পারবে না। রাজপুত্র এগুলো নিয়ে দূর এলাকায় একজন আল্লাহ ওয়ালার সাহচর্যে চলে গেলেন। সপ্তাহে একদিন মজদুরী করে তাতে এক সপ্তাহ চলে, আর ইবাদত বন্দেগী করে। এক দিনের উপার্জন দিয়ে সাতটি রুটি খরিদ করতে পারে। প্রতিদিন একটি করে রুটি পানিতে ভিজিয়ে খেয়ে নেন। এ ভাবেই চলছে তার জীবন।
আবু আমের বসরী বলেন, একদিন আমার বাড়ীর দেয়াল নির্মাণের জন্য একজন মিস্ত্রীর খোঁজে বের হয়েছি। সাধারণত যে স্থানে কাজের লোক পাওয়া যায় সেখানে গিয়ে দেখি এক যুবক বসে তিলাওয়াত করছে। আমি তার কাছে গিয়ে বললাম যুবক তোমাকে আমার বাড়িতে কাজের জন্য নিতে চাই। আমাকে নামাজের সুযোগ দিতে হবে আর কাজের বিষয়ে আমাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। আমি তার সব শর্ত মেনে খুশি হয়ে তাকে বাড়ী নিয়ে গিয়ে নির্মাণের কাজ বুঝিয়ে দিলাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দুই জনের কাজ যুবক একাই করে ফেলল। আমি মনস্থ করলাম যে, যেহেতু যুবক নামাজও পড়েছে আবার একাই দুই জনের কাজ করেছে তাই তাকে আমি মজুরী বাড়িয়ে দেব। যুবক অতিরিক্ত পয়সা নিতে অস্বীকার করল। মালিক বলছে আমি খুশি হয়ে দিলাম গ্রহণ কর।
খলীফা পুত্রের ঈর্ষান্বিত জীবন-৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন