কুহক জাতক

এক গ্রামে এক ধূর্ত সাধু থাকত। ঐ গ্রামের জমিদার সাধুর ভেলকি দেখে ভুলে যায়। সে সাধুর জন্য একটি কুটির বানিয়ে দেয়। সাধু যাতে রোজ পেট ভরে ভালোমন্দ খেতে পারে জমিদার তার পাকা ব্যবস্থা করে রেখেছিল। জমিদারের বাড়ি থেকে সাধুর জন্য রোজ খাবার দাবার পাঠান হত। সাধুর ওপর জমিদারের ছিল অগাধ বিশ্বাস। আশপাশের গ্রামে একবার খুব দস্যুর উৎপাত শুরু হল। জমিদার তখন একশ সোনার মোহর এনে সাধুর কুটিরের মধ্যে গর্ত করে পুঁতে রাখল। সাধুকে বলল, ‘প্রভু, আপনি একটু নজর রাখবেন।’ শুনে সাধু বলল, ‘দেখ বাছা, আমরা তপস্বী, আমাদের এসব কথা বলতে হয় না। পরের জিনিসে আমাদের কক্ষনো লোভ হয় না।’ জমিদার সাধুর কথায় আরও ভরসা পেল। সাধুকে ভূয়সী প্রশংসা করে নিশ্চিন্তে মনে বাড়ি ফিরে গেল।

ধূর্ত সাধু তখন মনে মনে হিসেব দেখল, ‘এই মোহরগুলো দিয়ে একজনের সারাটা জীবন আরামে আয়েসে কাটতে পারে।’ দিনকতক মনে মনে ভেবে একদিন সে গর্ত খুঁড়ে মোহরগুলো তুলে নিল। পরে রাস্তার ধারে এক জায়গায় আবার মোহরগুলো পুঁতে রাখল। কয়েকদিন চুপচাপ সেই কুটিরেই থেকে গেল। কদিন ধরে জমিদারের বাড়িতে গিয়ে খাওয়া দাওয়া সারল। তারপর জমিদারকে বলল, ‘বাছা, অনেকদিন ধরে তোমার অন্ন ধ্বংস করছি। এক জায়গায় অনেকদিন থাকলে তপস্বীদের লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করতে হয়। অথচ তপস্বীদের পক্ষে তা করা ঠিক নয়। ঠিক করেছি এবার অন্য জায়গায় চলে যাব।’ জমিদার তাকে বহু অনুরোধ করল। কিন্তু সাধু সঙ্কল্পে অটল। তখন জমিদার বলল, ‘আপনি যদি একান্তই থাকতে চান, তাহলে আর কি-বা বলব। বেশ, যেখানে যেতে চাইছেন যা।’ এই বলে জমিদার তাকে গ্রামের সীমানা পর্যন্তে এগিয়ে দিয়ে এল।

কিছুদূর যাওয়ার রপ সাধু ভাবল, ‘এই জমিদারটাকে একটু ঠকানো যাক।’ তখন যে জটার মধ্যে এক টুকরো খড় গুঁজে নিয়ে আবার জমিদারের কাছে ফিরে এল। জমিদার তাকে দেখে বলল, ‘এ কি বাবা, আপনি ফিরে এলন যে!’ তখন সাধু বলল, ‘দেখ বাবা, তপস্বীরা যা দান হিসেবে পায়নি তা তারা নিয়ে যেতে পারে না। তাই এই খড়গাছা তোমাকে ফেরৎ দিতে এসেছি।’ জমিদার বলল,‘আপনি খড়গাছা ফেলে দিন।’ আর ভাবল, ‘সত্যি কি মাহাপুরুষ! পরের কুটোটি পর্যন্ত নিতে চান না!’ সাধুর গুণে মুগ্ধ হয়ে তাকে প্রণাম করল। ভক্তি গদগদভাবে বিদায় দিল। বোধিসত্ত্ব তখন বাণিজ্য করতে করতে ঐ গ্রামে এসে উঠেছেন।

তাঁর কানে এই মহত্বের বিবরণ এর। তখন তাঁর কেমন সন্দেহ হল। তিনি জমিদারের সঙ্গে দেখা করে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আচ্ছা মশাই, আপনি ঐ সাধুর কাছে কখনও কিছু গচ্ছিত রেখেছেন কি?’ ‘হ্যাঁ। আমি ওঁর কাছে একশ সোনার মোহর গচ্ছিত রেখেছিলাম।’ ‘তাহলে তাড়াতাড়ি গচ্ছিত ধন নিয়ে আসুন।’ জমিদার কুটিরে ছুটে গেলেন। শত খোঁড়ুখুঁড়ির করে সে একটিও মোহর পেল না। ফিরে এসে বোধিসত্ত্বকে বলল, ‘না, মশাই, পেলাম না। বোধিসত্ত্ব বললেন, ‘আপনার মোহর ঐ সাধুই নিয়ে পালিয়েছে। চলুন তাকে ধরি।’ সাধু বেশিদূর যেতে পারে না। তল্লাসি করতেই মোহর বেরিয়ে পড়ল। ভন্ড সাধু খেল বেধড়ক মার। এই জাতকের মর্মকথা: ভেলকি দেখিয়ে চিরকাল কেউকে বোকা বানানো যায় না।

আরো পড়তে পারেন...

প্রতারণার কোয়ান্টাম মেথড

কয়েক মাস আগে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি মিলনায়তনের একটি অনুষ্ঠানের খবর আমরা জানতে পারি পরদিন প্রকাশিত দেশের…

সৌভাগ্যের ভেজাল চিঠি

কয়েকদিন আগে একটা চিঠি পেয়েছি, ডাকযোগে। টাইপ করা চিঠিটাতে কোন নাম ঠিকানা ছিল না, খামের…

বুনো রাজা ও রাজকুমারী– শ্রী ক্ষিতীশচন্দ্র কুশারী

এক বুনো রাজা। বনেই তাঁর রাজত্ব। যত অসভ্য জংলী তাঁর প্রজা। প্রজাদের ঘর নেই, দোর…