কালো বিড়াল

কালো বিড়াল নাকি অশুভ হয় দাদী ছোট বেলায় বলত।
বিড়াল, আমার খুব পছন্দের একটা জীব। আমি ছোট বেলা থেকে বিড়াল পালতাম, কিন্তু এখন বিড়াল দেখলে ভয় করে। মানুষ অনেক প্রকার পভিয়া (phobia) মানসিক রোগে ভুগে যেমন- waterphobia, gynophobia, darkphobia ইত্যাদি।

তারেক খুব ডানপিটে ছেলে, সব সময় বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করে বেড়ায়। রাত আর দিন তাঁর কাছে সমান। পরিবারে সবার ছোট সে। দুই ভাই ও এক বোন, বাবা হাই স্কুলের মাস্টার। তারেক সব সময় নানা কাজে ব্যস্ত থাকে কক্ষনও কবুতর, বা পাখি কক্ষনও বা মাছ ধরা নিয়ে। পরিবারের সবাই তারেককে নিয়ে খুব চিন্তিত থাকে কারণ প্রায় প্রতিদিন তাঁর বাবার কাছে তাঁর নামে একটা না একটা বিচার আসে।

রাতে খাবারের সময় –
বাবা, আমি আর দুষ্টুমি করব না, তুমি যদি আমাকে একটা বিড়াল এনে দেয়।
– তুই বিড়াল দিয়ে কি করবি?
– পুষবো
তারেক, একটা সহ্যর সীমা আছে। তুই যদি পড়াশুনা ঠিক মত না করছ, তাহলে তোকে মাদ্রাসাতে দিয়ে দিব।
তারেক, চুপ করে থাকল, কোন কথা বলল না। তারেক সপ্তম শ্রেনিতে পড়ে। পরের দিন তারেকের বন্ধু মাসুদ। তারা প্রাইমারি স্কুল থেকে খেলার সাথি। বলতে গেলে সব সময় তারা এক সাথে থাকে, শুধু ঘুম আর খাওয়া ছাড়া।

– তারেক, পাশের বাড়ির বাঁশ ঝাড়ে একটা কালো বিড়ালের বাচ্চা দেখেছি। চল বিড়ালটাকে ধরে আনি। তুই না বিড়াল পুষবি?
– হুম চল।
বিড়ালের বাচ্চাটা দেখতে পুরো কালো। তারেক প্রথম ভয় পায়। কিন্তু, বিড়ালটা তারেক কে দেখা মাত্র, নিজে নিজে বাঁশ ঝাড় থেকে বের হয়ে তারেকের কাছে এসে পড়ে। তারেক, সযত্নে বিড়ালটাকে শার্টের নিচে করে বাড়িতে নিয়ে আসে। কিন্তু কি অদ্ভুত, বিড়ালটা তারেককে একটু আঁচড় দিল না।

তারেকের, বাবা বিড়ালটা দেখে ফেলে এবং তিনি বিড়ালটাকে তারেক কাছ থেকে নিয়ে কোন এক জায়গায় ফেলে আসেন। তারেকের কোন প্রকার কান্নাকাটি করে লাভ হলনা। আর সেই দিন থেকে শুরু হয় তারেকের সাথে সব অদ্ভুত ঘটনা।

তারেকের রুম আলাদা, সে একা ঘুমায়। তাঁর ঘাটের পাশে জানালা, যেহেতু গরমকাল ছিল জালনাটা খোলা রাখা হতো। ঠিক মাঝ রাতে, বিড়ালের ডাকে তাঁর ঘুম ভেঙ্গে যায়, সে ঘুম থেকে উঠে, কিন্তু অন্ধকারের জন্য বুঝতে পারছিল না। আওয়াজটা কোন দিক থেকে আসছে। অবশেষে তাঁর চোখ গেল জালনার দিকে, সে দেখল ঠিক তাঁর কালো বিড়াল মত, একটা বিড়াল তাঁর জালনার পাশে বসে আছে…। বিড়ালটার চোখ রক্তের মত লাল। তবুও সে ভয় পেলনা। সে আস্তে আস্তে বিছানার উপর দিয়ে জালনার কাছে গেল। বিড়ালটা জালানার কাছে বসে রইল। তারেক যেই জালনার ফাঁকে দিয়ে বিড়ালটাকে ধরতে গেলো, আর বিড়ালটা হিংস্রভাবে শব্দ করতে শুরু করল। এই শুনে তারেক লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে মা-বাবার রুমে চলে গেল আর ভয়ে কাঁপতে শুরু করল।

তারেকের বাবা, মা কিছু বুঝতে পারছিলনা। তারেক কে বার বার জিজ্ঞাসা করল, কিন্তু তারেক কোন উত্তর দিতে পারছিলনা। পরেরদিন তাজুল সাহেব (তারেকের বাবা)…
-কাল রাতে এমন করলি কেন?
– তারেক চুপ করে থাকে।
– কথা বলবি ত?
– বাবা, আমি মার কাছে আজ থেকে রাতে ঘুমাব।
– কি হয়ছে?
– কিছু না, বাবা।
তারেক গত রাতের ঘটনা ভুলতে পারছিল না। আজ সে বাবা- মার সাথে ঘুমিয়েছে। তারেক, স্বপ্নে দেখল আবার সেই কালো বিড়ালটাকে…। তাঁর রুমে বিছানার উপর বসে আছে আর কিছু একটা খাচ্ছে। সে আস্তে আস্তে তাঁর বিছানার দিকে এগিয়ে গেল… বিড়ালটা আকারে অনেক বড় দেখা যাচ্ছে, যখন সে বিড়ালটার কাছে গেল……।

বিড়ালটা তাঁর দিকে ফিরে তাকাল, বিড়ালটার মুখের দু পাশে দিয়ে রক্ত পড়ছে আর বিছানাতে পরে আছে তারেকের বন্ধু মাসুদের খণ্ড বিখণ্ড নিথর দেহ। এই স্বপ্ন দেখে তারেক চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে উঠে যায় এবং কাঁদতে শুরু করে।

তারেকের বাবা-মা কি করবে বুঝতে পারছিলনা আর তারেককে যে কিছু জিজ্ঞাসা করবে সেই অবস্থা তারেকের ছিল না। অন্য দিক দিয়ে মাছুদকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না, অনেক খোঁজাখুজির পর মাসুদের লাশ পাওয়া যায় বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে আর লাশের অবস্থা খুব খারাপ ছিল। চোখ নেই, শরীরের বাঁ দিকটা ছিল ছিন্নবিচ্ছিন্ন।

তারেক, মাসুদের লাশের অবস্থা দেখে জোরে জোরে বলতে থাকে এই সব করেছে কালো বিড়াল। এরপর আমার পালা…।

তারেকের, বাবা দুশ্চিন্তায় পরে যান। তিনি মসজিদের ইমামের সাথে কথা বলেন। ইমাম সাহেব বলেন আপনার ছেলেকে খুব খারাপ জিনিস ধরেছে। এই তাবিজটা রাখেন, ছেলের ডান হাতে বেঁধে দিবেন। আর, এই পবিত্র কালিমার তাবিজ কক্ষনও যাতে হাত থেকে না খুলে, তাহলে আপনি আপনার ছেলে কে হারাবেন।

তারেক এখন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। এখনও প্রায়ই সে কালো বিড়ালটাকে স্বপ্নে দেখে। বিড়ালটা তাঁর দিকে খুব রাগি ভাবে তাকিয়ে থাকে কিন্তু কাছে আসে না। তারেক আজ বন্ধুদের সাথে কলেজের মাঠে ফুটবল খেলেছে, খেলার ছলে হাতের তাবিজটা পরে গেছে। তা খেয়াল নেই তারেকের…। আজ খুব ক্লান্ত লাগছে…। আজ তারাতারি ঘুমিয়ে পরতে হবে।

রমজান মাসে কিভাবে ওজন কমাবো?

রমজান মাসে কিভাবে ওজন কমাবো?

ভয়ানক ভূত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *