কাবুসের চরম অধঃপতন- পর্ব ৩
কাবুসের চরম অধঃপতন- পর্ব ২ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কাবুস কথাটি বলার সঙ্গে সঙ্গে তার মুখ হতে যেন তা হামান লুফে নিল। সে কাবুসের মুখে এ জাতীয় বাক্যেরই কামনা করেছিল। সুতরাং এরূপ সুবর্ণ সুযোগ প্রাপ্ত হয়ে কাবুসের কথার জবাবে বলল, বন্ধু! তুমি এ সাধবীপনা বা সতীত্ব কথাটি একেবারেই ভুলে যাও। তা শুধু মানুষের একটি বানানো কথা ছাড়া আর কিছু নয়।
নারীদের সতীত্ব বলে কোন বস্তুই নেই। তুমি কি হামানের পুরাতন স্মৃতিগুলো সব ভুলে গিয়েছ? কত নারীকেই না আমরা দেখলাম। তাদের কেউ কেউ তো এমনও ছিল যে, দেশের সকলে অত্যন্ত সাধ্বী ও পবিত্র বলে পরম ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে তাদের নাম উচ্চারণ করত। কিন্তু আমরা সে সকল নারীর আসল খবর উদ্ধার করিনি কি?
হামানের কথাগুলো শ্রোতা কাবুস অতি একাগ্র মনে শুনে চলছিল। আর সে হামানকে বলতে বাধা দিল না। তাই হামানও অনেক কথাই বলে ফেলল। বলতে বলতে একবার সে বলে উঠল, বন্ধু কাবুস! মনে কর তোমার স্ত্রী সতী আছিয়া এখন তোমাকে ভিন্ন অন্য কারও চিন্তাও মনে স্থান দেয় না। কিন্তু রমণীদেরকে আমরা যেরূপ জেনেছি তার উপর ভিত্তি করে এ কথা কি বলা যায় না যে, এমনও হতে পারে যখন তোমার আছিয়ার মনে তোমার একটু ঠাঁইও মিলবে না।
এমন অবস্থা হয় এবং অহরহ হচ্ছে। এটা দুনিয়ার নর ও নারীর চিরন্তন রীতি ও স্বাভাবি প্রকৃতি। আর এ জন্যই আমি অনেক ভেবেছি দু’দণ্ডের সাধ্বীপনায় কোন লাভ নেই। যা মানুষের প্রকৃত স্বভাব তার হাতেই নিজেকে সঁপে দেব এবং তা দিয়েছিও। তুমিও তো এমন ছিলে, কিন্তু দুদিনের জন্য কেন যে এরূপ ভন্ডামীপনা শুরু করেছ বুঝতে পারছি না।
আজ কাবুসের মনে পূর্বের মত জোরের অভাব ছিল। তদুপরি হামানের ক্ষুরধার কথাগুলো যে অপূর্ব যুক্তির সাথে সে বলে যাচ্ছিল তাতে কাবুস আজ তন্ময় হয়ে গেল। হামানের কথা আজ অন্তরে তার ভীষণ প্রভাব বিস্তার করল। ফলে পূর্বদিনের আলোচনা তার অন্তরে যে সামান্য ঘুন ধরিয়েছিল, আজকের আলোচনায় তথায় বিরাট গর্তের সৃষ্টি করল। সে যেন তার অজ্ঞাতসারেই বলে ফেলল, বন্ধু তোমার কথাই ঠিক। তুমি আজ আমার জ্ঞান চক্ষুর উন্মিলন ঘটিয়ে দিলে।
শুনে হামানের মনে আনন্দের উদয় হল কিন্তু সে বাইরে তা প্রকাশ না করে কাবুসকে বলল, বন্ধু! যা বললাম তা সত্য না হলে আমার কথার জবাব দাও।
কাবুস বলল, তুমি যা বললে কিছুই মিথ্যা নয়। এটা একেবারেই সত্য এবং খাঁটি।
পরিতাপের বিষয়, আজ হামানের কুট প্ররোচনার মাধ্যমে এভাবে হতভাগা কাবুসের অদৃষ্ট-চাকা পুনঃ বিপথে চালিত হল।
কৈশরে ও প্রথম যৌবনে যে দুর্বৃত্ত যুবক ধবংসের দিকে এগিয়ে চলেছিল, পুণ্যশীলা আছিয়ার সংস্পর্শে এসে সে বাঁচার পথ পেয়েছিল। কিন্তু আজ সে পরম সতী ও সাধ্বী নারীর প্রতি অন্যায় আশংকা পোষণ কর হৃদয়ে পাপের প্রশ্রয় দিল। তাতে তার স্বভাবে আবার দৌবল্যের সূচনা ঘটল। এ সুযোগ প্রাপ্ত হয়ে পুরাতন দুষ্ট বন্ধুর দল আবার তাকে ঘিরে ধরল।