কাদিসিয়ার যুদ্ধ

পারসিকগণ তাঁদের সে বুওয়ায়েবের যুদ্ধের পরাজয় মেনে নিতে পারেন নি। এ কারণে তাঁরা পুনরায় মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত হতে লাগল। হযরত ওমর (রাঃ) তাঁদের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে পেরে সমগ্র দেশব্যাপী যুদ্ধের পয়গাম ঘোষণা করে দিলেন।  তখন মুসান্না (রাঃ) জীবিত ছিলেন না। 

মুসান্না (রাঃ) জীবিত না থাকার কারণে সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাঃ)- কে মুসলিম সৈন্যবাহিনীর সেনাপতি নিয়োগ করা হয়েছিল। হযরত ওমর (রাঃ) যুদ্ধ শুরু করার পূর্বে তাঁকে কাদিসিয়ার প্রান্তরে তাঁবু ফেলে দূতের মাধ্যমে পারস্যর রাজ দরবারে ইসলামের দাওয়াত দেবার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। 

হযরত ওমর (রাঃ) এর নির্দেশ অনুযায়ী সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস ইয়াযদিজার্দ দূতকে অপমান করে সেখান হতে বিতাড়িত করে দিলেন। পারস্য রাজের এই খারাপ আচারণের জন্য আরও দ্রুত যুদ্ধ শুরু করতে হল। পারস্যের বিখ্যাত বীর রুস্তুমের নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনীর মোকাবেলার জন্য সৈন্য প্রেরণ করা হল। মুসলমানদের পক্ষ হতে ইসলাম গ্রহণ করে তাঁদেরকে মুসলমানদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি করার জন্য আহ্বান করা হল। 

 রুস্তুম তখন গর্ব করে এ প্রস্তাবে নাকোজ করে দিলেন এবং তিনি পুরো আরবকে বিছিন্ন করার কথা বলেন। রুস্তম বলেন, আমি সমগ্র আরবের দল চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেব।  এরপর মুসলমান পক্ষের কোন এক সৈন্য বললেন, আল্লাহ্‌ তায়ালার যদি ইচ্ছা হয়। মহাবীর রুস্তম ১,২০,০০০ সৈন্য বাহিনী সহ মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য অগ্রসর হল। 

তখন মুসলিম সেনাপতি হযরত সা’দ (রাঃ) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়াতে এর স্থানে খালিদ বিন  আলতাফ (রাঃ) কে তদস্থলে নিযুক্ত করা হল। সেনাপতি হযরত সা’দ (রাঃ) যুদ্ধক্ষেত্রের খুব কাছে একটি পুরাতন রাজ প্রাসাদের ছাদে শোয়া অবস্থায় যুদ্ধ দেখছিলেন আর দরকার হলে হযরত খালিদ (রাঃ) নির্দেশ নিচ্ছিলেন। 

কাদিসিয়া প্রান্তরে ৬৩৫ ঈসায়ী সনের নভেম্বর মাসে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তিন দিন এ যুদ্ধ স্থায়ী ছিল।  প্রথম দিনের যুদ্ধ আরব বাহিনীদের কাছে বিশৃঙ্খলার দিন। আর দ্বিতীয় দিনের যুদ্ধ হল সাহায্যের দিন এবং তৃতীয় দিনের যুদ্ধ হল দুর্দশার দিন নামে খ্যাত। কাদিসিয়ার যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে মহাবীর ক’কার নেতৃত্বে এক বিরাট সৈন্যবাহিনী এসে পৌঁছে। এ যুদ্ধে পারস্য সৈন্য বাহিনীর খুব বীরত্ব সহকারে যুদ্ধ করলেও মুসলমানদের কাছে তাঁরা পরাজয় বরণ করল।  

মুসলমানদের এবং বিশ্বের ইতিহাসে এক চূড়ান্তকারী যুদ্ধ কাদিসিয়ার যুদ্ধ। এ যুদ্ধের কারণে পারস্যের মূল শক্তি ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায়। মুসলমানদেরও এ যুদ্ধের জন্য অনেক ক্ষতি হয়েছিল।  প্রথম দু’দিনের যুদ্ধে মুসলমানদের ২৫০০ মুসলিম সৈন্য নিহত হয়। আর সর্ব শেষ দিনে ৬০০০ হাজার সৈন্য প্রাণ হারায়। কাদিসিয়ার যুদ্ধের কারণে মুসলমানদের হাতে অনেক মালামাল হস্তগত হয়েছিল। এ কাদিসিয়ার যুদ্ধের কারণে পারস্য এবং ইসলামের ইতিহাসে পুরাপুরি মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং সাসানীয় সাম্রাজ্যের সমাপ্তি ঘটে এরপর সেখানে মধ্যযুগে ইসলামী সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপন করা হয়। 

কাদিসিয়ার যুদ্ধের মাত্র কয়েক মাস পরে হযরত সা’দ (রাঃ) হযরত ওমর (রাঃ) এর অনুমতি মাধ্যমে পারস্যের রাজধানী মাদায়েনের দিকে এগিয়ে তা দখল করে ফেলেন। ৬৩৭ ঈসায়ী সনে দজলা ও ফোরাতের মধ্যবর্তী সমস্ত এলাকা মুসলমানদের অধিকারে চলে আসে। 

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।