কবরে রসগোল্লা মাত্র দুইটি
প্রকৃত বিষয় বোঝার পূর্বেই অনেক সময় আলেমদেরকে দোষারোপ করা হয়। অথচ আলেমগণ আল্লাহর নির্দেশটির প্রতিধ্বনি করেন মাত্র। যথেষ্ট জ্ঞান না থাকার কারণে এরা আল্লাহর বানী বুঝতে পারে না।
যেমন এক গ্রাম্য লোক জ্বালানি সংগ্রহ করতে একটি গাছে উঠলো। সে ডালের আগার দিকে বসে গোড়ার দিকে কাটতে লাগলো। বোকা ছেলেটির এ বিপদজ্জনক কাজ দেখে এক বৃদ্ধ লোক রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় চিৎকার করে বললেন, তুই, মরেছিস, তুই মরেছিস, তুই মরেছিস।
এ চিৎকার শুনে লোকটি গাছ থেকে নেমে এলো। বৃদ্ধ লোকটি কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, হুজুর আমি কি সত্যি মরে গেছি?
বৃদ্ধ লোকটি বললেন, এ লোকটিকে বোঝানো যাবে না। সুতরাং তিনি লোকটির কথার কোণ জবাব না দিয়েই চলে গেলেন।
লোকটি ভাবলো, মরা মানুষের সাথে কথা বলা যায় না এ জন্য মুরুব্বী আমার কথার
কোন জবাব না দিয়েই চলে গেলেন।
সুতরাং আমি মরে গেছি এতে কোণ সন্দেহ নেই।
এ ভেবে লোকটি পাড়ার সবাইকে হাত জোড় অনুরোধ করতে লাগলো। আপনারা আমাকে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আমি মারা গেছি।
কিন্তু তার কথায় কেউ সাড়া দিল না। অগ্যতা সে নিজেই কোদাল সংগ্রহ করলো এবং
নদীর তীরে গিয়ে কবর খুড়তে লাগলো। কবর খোড়া শেষ হলে কোদালটি রেখে কবরের ভিতরে মরার মত পড়ে রইল।
ঐ নদী নিয়ে লঞ্চ যাতায়াত করতো। একটি লঞ্চ এসে এক ইংরেজ সাহেবকে নদীর ঘাটে নামিয়ে দিল। সাহেবটি সরকারী চাকুরী নিয়ে ঐ গ্রামে এসেছিলেন কি একটা কাজের তদন্ত করতে। তিনি ডাক বাংলায় যাবে। সাথে রয়েছে বিছানাপত্র ও একটি বাক্স। কিন্তু এগুলো কে বয়ে নিয়ে যাবে। আশে পাশে কোন লোকজনও নেই। অবশেষে দূরে চোখ চড়ল একটি কোদাল। এখনই মাটি কাটা হয়েছে। কোদালটি এখনও সরানো হয়নি। যে মাটি কেটেছে সে নিশ্চয় আশে পাশে আছে।
কোদালটি লক্ষ্য করে সাহেব এগিয়ে গেলেন। দেখেন সেখানে একটি গর্ত। গর্তের ভিতরে একটি লোক শুয়ে আছে
সাহেব তাঁকে ডাকলেন, এদিকে এস।
লোকটি ভাবলো, আমি যে মরে গেছি হয়তো ভদ্রলোক জানে না।
তাই আমার সাথে কথা বলছে। সুতরাং কবরের ভিতরে লোকটি কোন সাড়া দিল না। চুপ করে শুয়ে পিট পিট করে তাকিয়ে রইলো।
ভদ্রলোক কয়েকবার ডাকলেন। কোন সাড়া না পেয়ে বিরক্ত হয়ে কাছে গিয়ে লোকটির কোমরে এমন জোরে লাথি মারলেন যে লোকটি তড়াক করে উঠে বসে পড়লো।
লোকটি ভাবলো, কবরে মুনকের-নকীর ফেরেশতা আসে শুনেছি। এ লোকটি নিশ্চয় মুনকের-নকীর ফেরেশতা হবে। এর কথা অমান্য করা যাবে না। যা’ বলবে তাই শুনতে হবে।
সাহেব বললো, আমার সাথে এস।
লোকটি তার সাথে নদীর ঘাটে গিয়ে দাঁড়ালো।
সাহেব ওর মাথায় বাক্স ও বিছানা- পত্রের পোঁলাটি চাপিয়ে দিলেন এবং একটি মিষ্টির হাড়িঁ ছিল সেটাও হাতে দিয়ে বললেন, “ চলো।”
সাহেব ওকে নিয়ে ডাক বাংলায় পৌঁছলেন। লোকটির মাথা থেকে জিনিস- পত্র নামিয়ে নিয়ে ওকে আট পয়সা দিলেন। আর মিষ্টির হাড়িঁ থেকে দুটি রসগোল্লা হাতে দিয়ে বললেন, যাও।
লোকটি খুশিতে গদ গদ হয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো।
তখন সন্ধ্যা পেরিয়ে গেছে। রাস্তায় এক ওয়াজ-মাহফিল হচ্ছে এক মাওলানা সাহেব মঞ্চে দাঁড়িয়ে ওয়াজ করছেন, আমাদের সকলকে মরতে হবে। মুনকীর- নকীরের তিনটি প্রশ্নের জবাব সঠিকভাবে না পারলে কবরে দোযখের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে, বিষাক্ত সাপ ও বিচ্ছু অনন্ত কাল দংশন করে জীবনকে যন্ত্রণায় তুলবে।
লোকটি এ কথা শুনে আর স্থির থাকতে পারল না। এক লাফে মঞ্চে উঠে দাঁড়ালো। সমবেত লোকদের লক্ষ্য করে বললো, ভাই সব এ মৌলবি সাহেবের কোন কথা বিশ্বাস করবেন না। কবরে এসব কিছুই হয়না। আমি এইমাত্র কবর থেকে উঠে এসেছি। কবরে ফেরেশতা কোন প্রশ্ন করে না। কোনরূপ আগুন জ্বালানো হয় না। কোন সাপ আসে না। কোন বিচ্ছু দংশন করে না।
কবরে যা ঘটে তা হলো, একজন মুনকের-নকীর বুট জুতা পায়ে এসে এমন জোরে কোমরে এক লাথি মারে যে মৃতব্যক্তি শোয়া থেকে উঠে বসে।
তারপর তার সাথে কিছু দূর গিয়ে সেখান থেকে বাড়ি পর্যন্ত বোঝা নামানোর পর বিদায় করে দেয়। বিদায়ের সময় আট আনা পয়সা দেয়। আর দেয় মাত্র দুটি রসগোল্লা। কবরে এর চেয়ে বেশি আর কিছুই নয় না।
সুতরাং এ গ্রাম্য লোকটি কবরের বিষয়টি বুঝতে যেমন ভুল করেছে সেরূপ আজকাল অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন যারা আলেমদের উক্তিকে হাল্কাভাবে নিয়ে বিচার করেন। বস্তুতঃ আলেমদের নয়, বরং আল্লাহর বানীর প্রতি তাদের শ্রদ্ধার প্রকট অভাব রয়েছে।
( আল-এফাযাতুল য়্যাওমিয়্যাহ, খন্ড-২ পৃষ্টা-১৭৫)