একটি আশ্চর্য ঘটনা-পর্ব ২
জাহান্নামীদের ডাক দিবেন-
হে জাহান্নামবাসীরা!
জান্নাতবাসী মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকবে। এরপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আবার ডাক দিবেন, হে জান্নাতবাসী!
দুনিয়াতে কত দিন অতিবাহিত করে এসেছে?
জান্নাতবাসীগণ জবাব দিবেন-
ইয়া আল্লাহ! একদিন অথবা তাঁর অর্ধেক দিন। দেখুন, ষাট সত্তর বছর নয়, হাজার হাজার বছর নয়। মাত্র অর্ধ দিবস। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন বলবেন- তোমরা এক দিন বা অর্ধদিনে কত সওদা করেছ।
আল্লাহ পাক আরোও বলবেন- তোমরা অর্ধ দিনের কষ্টের বিনিময়ে আমার জান্নাতকে অর্জন করেছ। আমার ছায়ায় আশ্রয় পেয়েছে। আমরা মেহমানদেরী অর্জন করেছ।
অতএব ভাই ও বোনেরা! আসুন, আমরা আল্লাহর কাজে মন লাগাই। আল্লাহ পাকের চেয়ে বড় বন্ধু আর কেউ নেই। আল্লাহ পাকের চেয়ে বড় দয়াশীল কেউ নেই। আল্লাহর চেয়ে ভালোবাসা দেওয়ার মত কেউ নেই।
দুনিয়াতে মা-যিনি পেটে ধারণ করেছেন, সে মা সন্তানের কথা শুনতে শুনতে অবশেষে বলে, বেটা এখন শেষ করো। আর শোনার মত ধৈর্য নেই। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন বলেছেন, হে বান্দা! বল, বল সমস্ত জিন্দেগী ভর শোনাও। আমি শুনবো। শুনতেই থাকবো। আমি বিরক্ত হব না। আমি দেব। আমার কাছে চাও।
অতএব ভাইয়েরা, আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন এর প্রতিশ্রুতি সত্য।
আল্লাহ পাকের ফয়সালার কোন পরিবর্তন হয় না।
তিনি যে ফয়সালা করেন তা পরিবর্তন হয় না।
যাকে দেন তা তাকে কেউ আটকাতে পারে না।
তিনি না দিলে কেউ দিতে পারবে না।
তিনি ধরবেন, কেউ রুকতে পারবে না।
তিনি যখন রহমতের দুয়ার খুলে দেন। তা কারো বন্ধ করার সাধ্য নেই।
এরপর আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, জাহান্নামীদেরকে ডাক দিবেন।
হে জাহান্নামের অধিবাসীগণ! দুনিয়াতে তোমরা কত দিন অতিবাহিত করে এসেছ? কত মন্দ পুঁজি নিয়ে এসেছ। কেবলমাত্র কয় দিনের আনন্দ ফুর্তির জন্য তোমরা ক্রয় করেছ আমার অভিসম্পাদকে। আমার আযাবকে। আমার জাহান্নামকে।
যাও, তোমরা চিরস্থায়ীভাবে তোমাদের জন্য নির্ধারিত জাহান্নামে। সেখানে ভোগ কর শাস্তি।
যে শাস্তি ভুলিয়ে দিবে তোমাদের আনন্দকে। ভুলিয়ে দিবে তোমাদের যৌবনের উন্মাদনাকে। যাও, সেখানে যাও। চিৎকার করে কাঁদে। আমার দরজা তোমাদের জন্য বন্ধ।
অতএব, ভাই ও বোনেরা! আমাদেরকে মহান প্রভুর দরবারে হাজির হতে হবে। আমাদের কর্মফল সেদিন আমাদের সামনে হাজির করা হবে। কি ভীতিপ্রদ সে দৃশ্য? সেদিন সেখানে বোন ভাইকে ছেড়ে পালাবে। সে দিন মা-কন্যাকে, স্বামী স্ত্রীকে পিতা সন্তানকে ভুলে যাবে, সবাই আলাদা আলাদা থাকবে। একে অপরের কাছেও আসতে পারবে না। আসবেও না। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। প্রত্যেকটা মানুষের কণ্ঠ থেকে একই আওয়াজ বের হবে। আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন। আর জাহান্নামের আগুনের লেলিহান শিখা জাহান্নামীদের গ্রাস করতে থাকবে।
হিসাব চলতে থাকবে। বিচারকের আসনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। তিনি বলতে থাকবেন, তোকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলাম, বল কি করে এসেছিস? তোকে সম্পদ দিয়েছিলাম, খাবার দিয়েছিলাম, আর দিয়েছিলাম আকল। বল কি করে এসেছিস? সমস্ত নারী পুরুষের অবস্থা হবে সে দিন করুণ।
চিন্তা ও ভয়ে কলিজা শুকিয়ে যাবে।
মানুষ ডান দিকে তাকাবে। নিজের আমল সামনে আসবে। বাম দিকে তাকাবে, নিজের আমল নজরে আসবে। সামনে তাকাবে দেখবে জাহান্নামের চিৎকার। অসহায় মানুষ সেদিন বলতে থাকবে, হায়! আজকের জন্য যদি প্রস্তুতি নিয়ে আসতাম! ঘাড়ে মাথায় চাপড়াতে থাকবে। মানুষ কাঁদতে কাঁদতে অস্থির হয়ে যাবে। চোখের পানিতে সে জাহান্নামের আগুন নিভাতে পারবে না।
সেদিন মানুষ বলতে থাকবে হায়! কোথায় লুকাব, কোন রাস্তা নেই। কেউ পালাতে চাইলেও পারবে না। কোথায় পালাবে? আল্লাহ পাক বলবেন, আজ তোমার পা বেঁধে দেওয়া হবে। আজ আমি তোমাদের বলে দিব, দুনিয়াতে কি কি পাপ করেছ।
আহ দেখুন, মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পৃথিবীতে কত দয়াশীল আমাদের প্রতি। গুনাহ করলে গোপন থাকছে। কেউ জানছে না। চোখ গুনাহ করছে ফেরেস্তা পাথর মারছে না। আমাদের পা ভুল পথে চলছে, ফেরেশতাগণ লাঠি মেরে পা ভেঙ্গে দিচ্ছে না। তিনি আল্লাহ পাক রাহমানুর রহীম আমাদের সুযোগ দিয়েছেন শোধরানোর। কিন্তু সে তিনি সব প্রকাশ করে দিবেন। আমাদের অকর্মগুলো একে একে সব আমাদের সামনে মেলে ধরবেন। অস্বীকার করার উপায় থাকবে না। হাত স্বাক্ষী দিবে, পা স্বাক্ষী দিবে, চোখ কান সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ স্বাক্ষী দিবে।
অতএব, ভাই ও বোনেরা! নিশ্চিত আমরা সবাই একদিন কবরবাসী হব। আমাদের কবরে রাখা হবে। সাড়ে তিন হাত সে গর্তই আমাদের শেষ মনজিল। সেখানে আমাকে যখন দাফন করা হবে। আমাকে দাফন করতে আসা লোকগুলোকেও আমি দেখব। যখন তারা মাটি দিবে আমার কবরে। প্রিয়জনের কান্নার আওয়াজও কানে আসবে। কিন্তু কিছই বলার থাকবে না। দাফন করে যখন স্বজনরা চলে যাবে তাদের পায়ের আওয়াজও কানে আসবে। এরপর ফেরেশতাগণ আসবেন। আমার আমল অনুযায়ী আমার সাথে আচারণ করা হেবে।
অতএব ভাইয়েরা! দুনিয়ার জিন্দেগী খুবই সংক্ষিপ্ত। ঠিক নেই কোন সময় শেষ নিঃশ্বাস ফেলি। কখন আমার জানাজা উঠে যায় স্বজনদের কাঁধে। আহ! আমাদের সমস্ত ইচ্ছা সাধনার সমাপ্তি ঘটবে। আমার রক্ত পানি করা সম্পদ আমার সাথে যাবে না। সে সম্পদ আমার কোন কাজেও আসবে না। কবি বলেন-
অর্থঃ ক্ষণস্থায়ী জগতের প্রতি ভরসা কর না। কারণ তুমি হঠাৎ মৃত্যুর শিকার হবে। মৃত্যু আসবেই আসবে মনে রেখ! তোমার প্রাণ চলেই যাবে মেন রেখ। দুনিয়াতে শত বছরও যদি বেঁচে থাক কবরের মধ্যে একাকী কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে।
কিমিয়ায়ে সায়াদাত কিতাবে ইমাম গাযালী (র.) লিখেছেন, যখন গুনাহগার ব্যক্তিকে কবরে রাখা হয়, তখন থেকেই তাঁর কবরের আযাব শুরু হয়ে যায়। তখন তাঁর প্রতিবেশী কবরবাসী মুর্দাগণ বলতে থাকে। হায় হতভাগা, তুমি আমাদের পরে দুনিয়া থেকে এসেছ, তুমি কি আমাদের মৃত্যু থেকে উপদেশ গ্রহণ করনি? আমাদের আসা ছিল, আমাদের মৃত্যু তোমাদের জীবিতদের জন্য উপদেশ গ্রহণের সুযোগ হবে। তাহলে তুমি এমনটি কেন করলে? খালি হাতে করে কেন এলে? মৃত্যু আমাদের আমল বন্ধ করে দিয়েছিল। কিন্তু তোমাদের আমল করার সুযোগ ছিল। আমরা যে নেকি করতে পারিনি, তুমি কেন তা ছেড়ে এলে?