একটি আশ্চর্য ঘটনা-পর্ব ১
হযরত উরওয়া বিন যোবাইয়ের (রা.) বলেন, আমি একবার মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী স্থানে সফরে ছিলাম। একটি কবর স্থানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পেলাম যে, এক ব্যক্তি কবর থেকে শিকল বাঁধা অবস্থায় বেরিয়ে এল । তার সমস্ত শরীরে আগুন জ্বলছে। দেখে মনে হচ্ছে, আগুনের কুণ্ডলী। লোকটি আমাকে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! আমার ওপর পানির ছিটা দাও। এমটা অবস্থায় তার পেছন থেকে আরেকজন লোক এসে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! সাবধান! এ ব্যক্তিকে এক ফোঁটা পানিও ছিটাবে না। এ দৃশ্য দেখে কিংকর্তব্যবিমুড় হয়ে গেলাম। সকাল বেলা দেখি আমার মাথার চুলগুলো সব সাদা হয়ে গেছে। সময়টা ছিল হযরত উসমান (রাঃ)-এর খেলাফতকাল। আমি হযরত উসমান (রাঃ) কে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। তিনি বললেন, আর কখনও একা সফর করবে না।
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন পাক কুরআনে বলেন-
অর্থঃ যে লোকদের আমার কাছে আসার ইচ্ছা নেই এবং জিন্দেগীর প্রতি রাজী খুশি এবং এতে তারা পরিতৃপ্তি হয়ে গেছে। এবং যে লোক আমার সতর্ক থেকে উদাসীন। এমন লোকদের ঠিকানা তাদের আমল অনুযায়ী জাহান্নামে। (সূরা ইউনুচ আয়াতঃ ৭-৮)
অতএব আমার মুহতারাম ভাইয়েরা! এ পৃথিবীর প্রত্যেকটা বিষয় আমাদের মনে করিয়ে দেয়, পৃথিবী ধ্বংস হবে। সুর্য উঠছে ডুবছে। আলো দিচ্ছে। আবার অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে। চন্দ্র উঠছে, সুন্দর জ্যোৎস্না ছড়াচ্ছে। এক সময় ম্লান হয়ে যাচ্ছে। মানুষ জন্ম নিচ্ছে, শিশু থেকে বালক, তারপর কিশোর, এরপর যৌবন, তারপর পৌঢ়, এরপর বৃদ্ধা, তারপর ঠিকানা। পৃথিবীর সফর শেষ। এসব আমাদের চোখের সামনে অহরহ ঘটছে।
অথচ এ দুনিয়ার ধনদৌলত বৃদ্ধি করার জন্য এ সম্পদের লোভে মানুষ নেক আমল থেকে উদাসীন। যদিও এ লোভে মানুষের চেষ্টার অন্ত নেই। শুধু সম্পদ জমা করতে করতে এক সময় দেখে মৃত্যুর সময় এসে গেছে। শুধু কষ্টই করল। ভোগ করা হল না। এরপর আফসোস নিয়ে চিরবিদায় নেয়। কবরস্থানে একা একা নিঃস্ব অবস্থায় থাকে।
আল্লাহ পাক কুরআনে বলেছেন-
হে মমিনগণ! তোমাদের সম্পদ এবং সন্তান-সন্ততি যেন তোমাদেরকে আল্লাহর যিকির থেকে উদাসীন না করে। যদি কেউ এমন করে তাহলে সে বিপদের সম্মুখীন হবে। (সূরা মুনাফিকুন-৯)
অতএব, প্রিয় ভাই ও বোনেরা আমার! এ পৃথিবীতে আমরা কেন এসেছি! জিন্দেগীর মাকছাদ কি? খানা-পিনার জন্য, দামী কপড় পরে ঘুরে বেড়ানোর জন্য? আমোদ-ফুর্তি করার জন্য? সুন্দর অট্টালিকা তৈরির জন্য? না। এসব তো ক্ষণস্থায়ী। যদি এটাই হতো জিন্দেগীর মাকছাদ। তাহলে মৃত্যুর কাছে সব নিঃশেষ হয়ে যেত না। এটা কেমন জিন্দেগী? যা মৃত্যুর পর আমার সঙ্গ ছেড়ে দিবে? এটা কেমন আনন্দময় জিন্দেগী? মৃত্যুর পর মুহূর্তেও আমাকে সাহায্য করতে পারবে না। কবরের নিঃসঙ্গতাই তো আমাদের আখেরী ফয়সালা।
আজ মোসলমানের অবস্থা তো এই যে, তারা জান্নাতের নেয়ামতসমূহের ভুলে গেছে। কোরআনের মর্যাদা ভুলে গেছে। তারা নিজেদেরকে পাপ পঙ্কিলতার মধ্যে নিমজ্জিত করে রেখেছে। নাচে গানে, আনন্দ-ফুর্তিতে মন উৎফুল্ল! আরে ভাই! আল্লাহর কালাম পাঠ করে দেখ, মন কত উৎফুল্ল হয়। আল্লাহর দরবারে চোখের পানি ফেলে দেখ কত প্রশান্তি। কিন্তু শয়তান সব বরবাদ করে দিয়েছে।
যতক্ষণ তুমি তোমাকে হারাম থেকে বাঁচাতে পারবে না। তবে কিভাবে আশা কর সে মহান সত্তার দীদার?
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জান্নাতবাসীদের ডাক দিবেন,
হে জান্নাতবাসীগণ!