এক আর্দশ বুজুর্গের কাহিনী

এক বুজুর্গ এক সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করলেন, কিন্তু আল্লাহ পাকের কি মেহেরবানী, কণে উঠিয়ে নেয়ার কয়েকদিন পূর্বে তার গুটি বসন্ত দেখা দিল। ক্রমে ঐ বসন্ত বৃদ্ধিপেয়ে নব বধুর চেহারা ও দেহের সৌন্দর্য একেবারেই নষ্ট হয়ে গেল। ঐ অভাবিত দূর্ঘটনায় কণে পক্ষ তার ভবিষ্যৎ অকল্যাণ আশংকায় বড় পেরেশান হলেন। তারা মনে মনে ভাবলেন, নিশ্চয়ই বর তাকে গ্রহণ করবে না।

এদিকে ঐ বুজুর্গ তার স্ত্রীর দুঃসংবাদ শোনার পর নিজের চক্ষু পীড়ার বাহানা করে কৃত্রিম অন্ধ সেজে গেলেন। পরে শশুর বাড়ীতে গিয়ে স্ত্রীর অবস্থা শোনার পর বললেন, যখন আমার চক্ষু ছিল তখন তো আমার স্ত্রীকে অপরুপ সুন্দরী হিসাবে দেখেছি। এখন তার সৌন্দর্য বিনষ্ট হলেই কি? আর থাকলেই কি? আমি তো আর তাকে দেখতে পাব না। পরে তিনি স্ত্রীকে ঘরে তুলে আনলেন, এ ঘটনার বিশ বছর পর তার স্ত্রীর ইন্তেকাল হয়।

স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি চক্ষু খুলে সবাইকে বললেন, আসলে আমি অন্ধ নই, বিশ বছর যাবৎ অন্ধ হওয়ার ভান করেছিলাম মাত্র। ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর মানুষের মধ্যে দারুন চাঞ্চল্য সৃষ্টি হল। লোকেরা এ ঘটনার কারণ জিজ্ঞেস করলে বুজুর্গ বললেন, বসন্তের ফলে আমার স্ত্রীর চেহারা বিকৃত হয়ে যাওয়ার পর আমার স্ত্রীসহ তার সব আত্মীয় স্বজনের এ ধারণা হয়েছিল যে, আমি হয়ত আর আমার স্ত্রীকে গ্রহণ করব না। এ ক্ষেত্রে আমার স্ত্রীর যথাযোগ্য সম্মানের সাথে ঘরে তুলে আনার পরও কোন ক্রমেই তাকে এ কথা বিশ্বাস করানো যেত না যে, আমি তাকে নিছক প্রবোধ দেওয়ার চেষ্টা করছি।

অতঃপর সে আজীবন আমার নিকট ছোট হয়ে থাকত এবং কোন সান্তনা দ্বারাই তার মনের সুকঠিন মর্মপীড়া দূরীভুত হতো না। এদিকে আমার জীবন সঙ্গীনীর এ মর্মজ্বালা প্রতিনিয়ত আমার মনেও শূলেরমত এসে বিদ্ধ হতো। আমার প্রিয় সহধর্মিনীর মনে যেন কখনো কোন  সংশয় সন্দেহ স্থান না পায়, তার যেন কখনো আমার নিকট ছোট হয়ে থাকতে না হয়- এই উপায় অবলম্বনে আমি নিজেকে অন্ধ করে ফেলা ছাড়া আর কোন পথই খুঁজে পাইনি।

প্রিয় জীবন সঙ্গীনীর মনতুষ্টির জন্য সূদীর্ঘ বিশটি বছর আমি পৃথিবীর আলো হতে নিজেকে বঞ্চিত করে তাকে খুশি করার চেষ্টা করেছি। সুবাহানাল্লাহ! মানুষের প্রতি মানুষের কি পরিমাণ মমত্ববোধ ও সহমর্মিতা থাকলে মানুষের জন্য মানুষ এতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারে?

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।