ইসমে আজম
হযরত ইউসুফ বিন হোসাইন (রহঃ) বলেন, একবার আমি লোকমুখে শুনতে পেলাম যে, হযরত জুন্নন মিশরী ” ইসমে আজম” জানেন। আমি মক্কা হতে রওয়ানা হয়ে মিশরে এক লঙ্গরখানায় গিয়ে তার সাথে সাক্ষাত করলাম। ঐ সময় আমার মুখে ছিল লম্বা দাড়ি, পায়ে জুতা, পরণে একটি লুঙ্গী, অপরটি গায়ে জড়ানো এবং হাতে ছিল একটি লোটা। মনে হল আমার এ দৃশ্য দেখে তিনি বিশেষ প্রীত হননি। আমি তাকে ছালাম করলাম। কিন্তু তিনি মন খুলে আমার সাথে কথা বললেন না।
এবার আমিও মনে মনে বিরক্তবোধ করলাম। আমি সেখানে তিনদিন অবস্থানের পর কোথা হতে এক ব্যক্তি এসে হযরত জুন্নন মিশরী (রহঃ) এর সাথে মোনাজারা (বিতর্ক) করে তাকে পরাভূত করে দিলেন। এ দৃশ্য আমার নিকট অসহ্য মনে হল। আমি এগিয়ে গিয়ে তার সাথে আলোচনা শুরু করলাম। ক্রমে বিতর্ক জমে উঠল। আমি এমন সুক্ষ্ম সুক্ষ্ম বিষয়ের অবতারণা করলাম যে, ঐ সকল বিষয়ে জবাব দানে সে নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করে অবশেষে অবনত মস্তকে পরাজয় স্বীকার করল। এ দৃশ্য দেখে হযরত জুন্নন মিশরী অত্যন্ত প্রীত হলেন। আনন্দের আতিশয্যে তিনি নিজের স্থান হতে উঠে একটু এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। অথচ তাকওয়া ও বুজুর্গীর বিবেচনায় তিনি আমার তুলানায় অনেক উর্দ্ধে ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, আমি তোমার এলমী যোগ্যতার যথার্থ মূল্যায়ন করতে পারিনি।
উপরোক্ত ঘটনার পর হতে হযরত শায়েখ সকলের তুলনায় আমাকে অধিক স্নেহ করতেন। ঐ অবস্থায় আমি একটানা ১২ মাস তার খেদমতে অবস্থান করার পর একদিন আরজ করলাম, হযরত! আমি একজন মুসাফির মানুষ দীর্ঘ এক বছরে আপনি আমার ভেতর-বাহির সবই দেখেছেন। আমার যোগ্যতা সম্পর্কেও আপনি অবগত হয়েছেন। আমি শুনতে পেয়েছি ইসমে আজম” আপনার জানা আছে। যদি সত্যই আপনার তা জানা থাকে তবে আমাকেও তা শিক্ষা দান করুন। আমার নিবেদন শুনে হযরত শায়েখ নীরব রইলেন। আমি তার নীরবতার কোন কারণ খুজে পেলাম না। পরে আমার ধারণা হল, হয়ত ইতিপূর্বে আমাকে ইসমে আজম” শিক্ষা দেয়া হয়েছে কিন্তু এর পরিচয় আমার নিকট গোপন রাখা হয়েছে।
যাই হোক আরো ছয় মাস হযরতের দরবারে অবস্থানের পর একদিন তিনি আমাকে ডেকে বললেন, হে আবু ইয়াকুব! তুমি কি আমার অমুক দোস্তকে চিন। যিনি অমুক স্থানে একটি ডেরাতে থাকেন এবং মাঝে মধ্যে আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন। আমি বললাম হ্যাঁ! আমি তাকে চিনি। অতঃপর তিনি আমার হাতে একটি মুখবন্ধ পাত্র তুলে নিয়ে বললেন, এই পাত্রটি তার নিকট পৌঁছে দিয়ে আস। পাত্রটি এত হালকা ছিল যে, আমার মনে হল যেন কিছুই নেই। যাইহোক, আমি ঐ পাত্রটি নিয়ে সেই ব্যক্তির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম।
পথে একটি সেতুর উপর উঠার পর আমি মনে মনে বললাম, আমি এই পাত্রটি বহন করে নিয়ে যাচ্ছি এর ভেতরে কি আছে? এ ধারণা হবার পর আমি পাত্রটি খুলামাত্র এর ভেতর হতে একটি ইঁদুর লাফিয়ে পড়ে পালিয়ে গেল। আমি মনে মনে ভীষণ অপ্রস্তুত হলাম যে, শায়েখ কি জন্য আমাকে এমন বোকা বানালেন? আমি তথা হতে ফিরে এলে শায়েখ আমার মলিন মুখ দেখে মিষ্টি মিষ্টি হেসে বললেন, হে আল্লাহর বান্দা! আমি তোমার নিকট একটি ইঁদুর আমানত রেখেছিলাম তুমি তাতেই খেয়ানত করেছ। সুতরাং ইসমে আজমের আমানত রক্ষা তোমার কাজ নয়। এ মুহুর্তে তুমি আমার সামনে থেকে চলে যাও এবং আর কখনো এখানে এসো না। অবশেষে বাধ্য হয়ে আমি তথা হতে ফিরে এলাম।