
রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে গোপাল বাজি ফেলেছিল, নদীর ঘাট থেকে ঝাঁ-চকচকে ইলিশ ঝোলাতে ঝোলাতে নিয়ে আসবে, অথচ কেউ রা-ও কাটবে না, জিজ্ঞেসও করবে না, ‘‘বাপু, ক’পয়সায় কিনলে?’ যেমন কথা, তেমন কাজ। মাছ কিনেই কোমরের কাপড়টি খুলে মাথায় গামছার মতো করে বেঁধে গোপাল রাজবাড়ির দিকে হাঁটা দিল। কয়েকটা বাচ্চা হাততালি দিতে দিতে পিছু নিল, কিন্তু মাছের দাম কেউ জিজ্ঞেস করল না। বরিশাল বা পাবনার খাল-বিল অঞ্চলে হরবখত বাড়ির চারপাশ জলে ভেসে যায়, লোকেরাও গোপালের মতোই ধূতি মাথায় জড়িয়ে জলে-ভাসা এক অঞ্চল থেকে আর এক অঞ্চলে টুক টুক করে চলে যেত। এই সর্বজনীন প্র্যাকটিসটার নামই হয়ে গেল ‘গোপাল কাছা’। গোপালের বঙ্গাল জয় একেই বলে। গোপাল ভাঁড় থেকে গোপাল কাছা। গল্প থেকে একটা জলজ্যান্ত ‘প্র্যাকটিস’, বরিশাল, পাবনা ও ফরিদপুরের লোকেরা হামেশাই করত। গোপাল তো খাঁটি ঘটি, কৃষ্ণনগর-এর সভা থেকে মুর্শিদাবাদের নবাববাড়ি পর্যন্ত তার দৌড়। অথচ, ইলিশ মাছের দাপটে তার এই কীর্তিটা পদ্মার ওপারেও ছড়িয়ে পড়েছিল। একেবারে লা-জবাব বাঙালি গল্প, দিল্লীর বীরবল, লখনউ-এর শেখ চিল্লি অথবা দক্ষিণের তেনালি রায়, কারও পুঁজিতেই রহস্যটি জমা নেই। –সংগৃহীত