ইবলিশ ‘অভিশপ্ত শয়তান’ হল কীভাবে
বর্ণনায় হযরত ইবনু আব্বাস (রাঃ) ইবলীশ ছিল ফিরিশতাদের গোত্রগুলির মধ্যে এক গোত্রের অন্তগত, যে গোত্রকে জ্বিন বলা হত। তাঁদের সৃষ্টি করা হয়েছিল লু- এর আগুন দিয়ে। ইবলীশের নাম ছিল হারিস। সে ছিল জান্নাতের এক দারোয়ান। ফিরিশতাদের এই গোত্র (জ্বিন) ছাড়া বাকি সকলকে সৃষ্টি করেছেন নূর দিয়ে। আর জ্বিনদের সৃষ্টি করা হয়েছে আগুনের শিখা দিয়ে। পৃথিবীতে সবার আগে এই জ্বিনেরাই বসবাস করত।
তাঁরা যমীনের বুকে দাঙ্গা-ফাসাদ করে, রক্তপাত ঘটায় এবং একে অপরকে হত্যা করে। তাঁদের দমন করার জন্য আল্লাহ্ তায়ালা ফিরিশতা বাহিনী দিয়ে ইবলীশকে পৃথিবীতে পাঠান। ইবলীশ ফিরিশতা বাহিনী নিয়ে সেই জ্বিনদের সাথে যুদ্ধ করে এবং তাঁদেরকে সাগর-মহাসাগরে দ্বীপপুঞ্জে ও পাহাড়ে পর্বতের দিকে তাড়িয়ে দেয়। একাজ করার পর তার অন্তরে অহংকার এসে যায়। সে বলে আমি এমন এক কাজ করেছি, যা আর কেউ করতে পারেনি।
আল্লাহ্ তায়ালা ইবলীসের মনের কথা তো জেনে যান। কিন্তু ফিরিশতাঁরা জানতে পারেনি। তাই আল্লাহ্ যখন ফিরিশতাদের বলেন, আমি পৃথিবীতে আমার প্রতিনিধি সৃষ্টি করতে চাই। তখন ফিরিশতাঁরা নিবেদন করে আপনি কি এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যারা সেখানে দাঙ্গা-ফাসাদ করবে এবং রক্ত বহাবে যেমন জ্বিনরা করেছিল। উত্তরে আল্লাহ্ বলেন, আমি এমন কথা জানি যা তোমরা জানো না। অর্থাৎ আল্লাহ্ বলেন, আমি ইবলীশের অন্তরে গর্ব অহংকারের উপস্থিতি দেখছি। যা তোমরা দেখ নি। এরপর আল্লাহ হযরত আদমকে শুকনো খনখনে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেন। এবং তাই সেই মাটির তৈরি দেহকাঠামো চল্লিশ দিন যাবত ইবলীশের সামনে রেখে দেন। ইবলীশ, হযরত আদমের সেই দেহকাঠামো কাছে আসত।
সেটিকে পা দিয়ে ঠোকর মারত। মুখ দিয়ে ঢুকে পিছনের রাস্তা দিয়ে বেরিয়ে যেত এবং পিছন দিয়ে ঢুকে মুখ দিয়ে বেরিয়ে যেত। আর বলত- তোর কোন গুরুত্ব নেই। তোকে সৃষ্টি করা না হলে কি এমন হত! আমাকে যদি তোর উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে তোকে আমি ধ্বংস করে দেব। তোর পিছনে আমাকে লাগানো হলে, তোকে আমি নানান অপমানে জড়িয়ে দেব। আল্লাহ্ তায়ালা হযরত আদমের দেহে প্রাণ সঞ্চারিত করার পর ফিরিশতাঁদের নির্দেশ দেন আদমকে সাজদা করার। তো সবাই সাজদা করে। কিন্তু অস্বীকার করে কেবল ইবলীস। তার অন্তরে যে গর্ব অহংকার সৃষ্টি হয়েছিল, যার দরুন সে ঔদ্ধত্য দেখায় এবং বলে- আমি ওকে সাজদা করব না। আমি ওর চাইতে সেরা। বয়সে বড় এবং শক্ত-সামর্থ শরীরের মালিক।
সেই সময় থেকে আল্লাহ্ তার থেকে সদগুনগুলো ছিনিয়ে নেন, যাবতীয় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করেন এবং তাঁকে অভিশপ্ত শয়তান বলে অভিহিত করেন।