ইউসুফ এস্টেস
শেখ ইউসুফ এস্টেস (জন্ম: জোসেফ এস্টেস, ১৯৪৪):
শেখ ইউসুফ এস্টেস একজন আমেরিকান ইসলামিক প্রচারক ও টেক্সাস থেকে আসা চ্যাপলেন। এস্টেস ১৯৯১ সালে খ্রিস্টান ধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহণ করেন। শেখ ইউসুফ এস্টেসের ইসলাম গ্রহণ এবং তার ইসলামিক যাত্রা অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও প্রেরণামূলক। তিনি ১৯৪৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে জোসেফ এস্টেস নামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার ছিল ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান এবং তিনি নিজেও একজন খ্রিস্টান পাদ্রী ছিলেন। তবে তার জীবনে এমন কিছু ঘটনা ঘটেছিল যা তাকে ইসলাম সম্পর্কে জানতে এবং শেষ পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ করতে প্রভাবিত করে।ইউসুফ এস্টেস ইসলাম গ্রহণের আগে খ্রিস্টান ধর্মে গভীরভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং তিনি একজন ইভানজেলিস্ট পাদ্রী হিসেবে কাজ করতেন। তিনি খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি নিজের পরিবারের সাথে মিলিত হয়ে একটি সংগীত ব্যবসা পরিচালনা করতেন।
ইসলাম গ্রহণ এবং তার পরবর্তী সময়:
১৯৯০-এর দশকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কারা বিভাগের মুসলিম চ্যাপলেন হিসেবে কাজ করেছেন এবং ২০০০ সালের সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে অনুষ্ঠিত ধর্মীয় নেতাদের বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে একজন প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন।এস্টেস বিভিন্ন ইসলামিক অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তা এবং প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। ১৯৯১ সালে একজন মুসলিম ব্যবসায়ী এবং একজন প্রাক্তন খ্রিস্টান যাজকের সাথে তার একটি গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎ ঘটে। এই সাক্ষাতের মাধ্যমে তিনি প্রথমবারের মতো ইসলাম সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হন। ইসলাম সম্পর্কে তার প্রথম পরিচয় একটি মুসলিম ব্যবসায়ী এবং একজন প্রাক্তন ক্যাথলিক যাজকের মাধ্যমে হয়। তারা একসাথে সময় কাটাতে শুরু করেন এবং ক্রমাগত ধর্মীয় আলোচনা এবং বিশ্বাস নিয়ে মতবিনিময় করেন। এসব আলোচনার মধ্য দিয়ে এস্টেস বুঝতে পারেন যে ইসলামের শিক্ষাগুলো খ্রিস্টান ধর্মের মতোই একেশ্বরবাদী এবং সম্পূর্ণ যুক্তিসংগত। এই আলোচনা ও গবেষণার ধারাবাহিকতায়, ইউসুফ এস্টেস ইসলামিক ধর্মগ্রন্থ কুরআন অধ্যয়ন করা শুরু করেন। কুরআনের বাণী তাকে এতোটাই প্রভাবিত করে যে তিনি গভীরভাবে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হন। শেষ পর্যন্ত, ১৯৯১ সালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং নিজের নাম পরিবর্তন করে ইউসুফ এস্টেস রাখেন। ইসলাম গ্রহণের পর, তার স্ত্রী এবং বাবা-মাও ইসলাম গ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পর, ইউসুফ এস্টেস তার জীবনের বাকি অংশ ইসলামের প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজে উৎসর্গ করেন। তিনি একজন মুসলিম চ্যাপলেন হিসেবে কাজ করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারগুলিতে বন্দীদের ইসলামের শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়াও, তিনি জাতিসংঘে ধর্মীয় নেতাদের বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে একজন প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। ইউসুফ এস্টেস একটি ইসলামিক টিভি চ্যানেল “গাইড ইউএস টিভি” প্রতিষ্ঠা করেন, যা ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইসলামিক প্রোগ্রাম সম্প্রচার করে। তিনি ইসলামের শান্তি ও সহনশীলতার বাণী ছড়িয়ে দিতে এই চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করেন। ইসলাম গ্রহণের পর থেকে ইউসুফ এস্টেস বিশ্বের বিভিন্ন ইসলামিক সম্মেলনে বক্তৃতা দিয়েছেন। ৮ আগস্ট ২০১২ সালে, দুবাই আন্তর্জাতিক পবিত্র কুরআন পুরস্কার অনুষ্ঠানে তাকে “ইসলামিক ব্যক্তিত্ব” হিসেবে সম্মানিত করা হয়। এছাড়াও, তিনি বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছেন এবং শীর্ষ ৫০০ প্রভাবশালী মুসলমানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।নভেম্বর ২০১৭ সালে, সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এস্টেসকে সিঙ্গাপুরে প্রবেশ করতে বাধা দেয়, কারণ তার কিছু মতামতকে “অগ্রহণযোগ্য” এবং সিঙ্গাপুরের বহুজাতিক ও বহু-ধর্মীয় সমাজের মূল্যবোধের বিরুদ্ধে হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। তিনি মুসলমানদের ক্রিসমাস ও হানুকা উদযাপন না করার পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা ইসলামিক বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। তার এই মতামতকে সামাজিক সম্প্রীতি ক্ষুণ্ন করার এবং সম্প্রদায়গুলোকে বিভাজিত করার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এস্টেসের সমালোচনা হয়েছিল কারণ তিনি বক্তা হিসেবে নয়, বরং পর্যটক হিসেবে সিঙ্গাপুরে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন।
ইসলামিক জীবনে তার অবদান:
ইউসুফ এস্টেস তার ইসলাম গ্রহণের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং যাত্রার গল্প শেয়ার করে লাখো মানুষকে প্রভাবিত করেছেন। তার অভিজ্ঞতা এবং সাদাসিধা, বন্ধুত্বপূর্ণ শৈলীর কারণে তিনি অনেকের মন জয় করেছেন এবং অনেক অমুসলিমকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করেছেন। ইসলাম গ্রহণের পর থেকে ইউসুফ এস্টেস নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ইসলামের প্রচারে উৎসর্গ করেছেন। তিনি পশ্চিমা দেশগুলোতে বিশেষ করে ইংরেজি ভাষাভাষী মানুষের মধ্যে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তার বক্তৃতা ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি ইসলামের সঠিক শিক্ষা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ইউসুফ এস্টেস “গাইড ইউএস টিভি” নামক একটি ইসলামিক টিভি চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করেন। এই টিভি চ্যানেলটি ফ্রি-টু-এয়ার ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কিত প্রোগ্রাম প্রচার করে। এর লক্ষ্য হলো ইসলামের সঠিক শিক্ষা এবং জীবনযাপনের নিয়মগুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই চ্যানেলটি বিশেষ করে পশ্চিমা সমাজে ইসলামের বার্তা প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০১২ সালে, দুবাই আন্তর্জাতিক পবিত্র কুরআন পুরস্কার অনুষ্ঠানে তাকে “ইসলামিক ব্যক্তিত্ব” হিসেবে সম্মানিত করা হয়। এটি তার ইসলামিক প্রচার ও শিক্ষামূলক কাজের জন্য একটি বড় স্বীকৃতি। ইউসুফ এস্টেস তার বক্তৃতা ও লেখনীর মাধ্যমে ইসলামের শান্তি ও সহনশীলতার বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি সবসময় ইসলামের সহজবোধ্য ও সাধারণ জীবনযাপনের রীতিনীতির ওপর জোর দেন এবং মানুষকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা বোঝানোর চেষ্টা করেন। ইউসুফ এস্টেস ইন্টারনেট ও সামাজিক মাধ্যমেও সক্রিয়। তিনি ইসলামের ওপর বিভিন্ন শিক্ষামূলক ভিডিও, প্রবন্ধ এবং প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। তার ইউটিউব চ্যানেল এবং অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তিনি লাখো মানুষের কাছে ইসলামের বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। ইউসুফ এস্টেস তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের প্রচার ও শিক্ষা প্রসারে অবদান রেখে যাচ্ছেন এবং তার কর্মের মাধ্যমে তিনি ইসলামের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে বড় ভূমিকা পালন করছেন।
ইউসুফ এস্টেস এখনো জীবিত আছেন এবং ইসলামিক প্রচার ও শিক্ষামূলক কার্যক্রমে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি তার টিভি চ্যানেল “গাইড ইউএস টিভি” এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ইসলাম প্রচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।