আসহাবে কাহাফের প্রকৃত ঘটনা-পর্ব ২

এদিকে যুবকদের বন্ধুরা দিবাভাগে যথেষ্ট ব্যস্ততা প্রদর্শন করে সকল কর্মচারীর সাথে তাল মিলিয়ে সকল কাজ কর্ম সমাধান করলেন এবং গোপনে সকলে পরামর্শ করে রাজ দরবার পরিত্যাগের সংকল্প গ্রহণ করলেন। তাঁরা আস্তাবলের কয়েকটি ঘোড়া প্রস্তুত করে রাখল। কোন পথে কিভাবে অগ্রসর হতে হবে তার সূক্ষ্ম একটি প্রোগ্রাম ঠিক করে নিলেন।

সন্ধ্যার পর রাজ দরবারের প্রোগ্রাম অনুসারে নাচ-গানের আসর আরম্ভ হল। রাজা রবং রাজ কর্মচারীবৃন্দ এবং রাজার বহিরাগত বন্ধু মহল সকলে যথাসময়ে আসরে যোগদান করল। যুবকদের বন্ধুরা ঐদিন অতি সুকৌশলে রাজাকে ও তার ঊর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দকে অধিক পরিমানণ মদ্য পরিবেশন করতে সক্ষম হয়। যাতেকরে রাজা ও তার পরিষদবৃন্দ অধিক নেশাগ্রস্ত হয় এবং তাদের স্বাভাবিক বিবেক বুদ্ধি লোপ পায়। নিস্তব্দ রজনীতে উপযুক্ত সুযোগ হাতছাড়া না করে যুবকেরা ও তাঁদের তিন বন্ধু অতি সন্তর্পণে পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে রাজদরবার পরিত্যাগ করে আস্তাবলের নিকট গিয়ে ঘোড়ার পিঠে উঠে পার্বত্য অঞ্চলের দিকে রওনা করলেন। সারা রাত তাঁরা অতি ব্যস্তভাবে দ্রুততার সাথে পথ অতিক্রম করে ভোরবেলা এক সুউচ্চ পর্বত্মালার পাদদেশে এসে হাজির হলেন। এমন সময় সেখানে কয়েকজন মেষচালক এসে উপস্থিত হল। তারা এ অপরিচিত ঘোড়া সোয়ারীকে দেখে তাঁদের পরিচয় এবং গন্তব্য স্থানের ঠিকানা জিজ্ঞেস করল। যুবকগণ ধর্মদ্রোহী রাজা দাকিয়ানুসের অত্যাচারের কথা বর্ণনা করে বললেন, “ আমরা ভূয়া খোদা কবল থেকে নিস্কৃতি লাভ করার জন্য মহান স্রষ্টা আল্লাহ রব্বুল আ’লামীনের এবাদত বন্দেগীতে আত্ননিয়োগ করার উদ্দেশ্যে দেশ ত্যাগ করে অরণ্যবাসী হতে যাচ্ছি।” আগন্তুকদের মুখে এ কথা শুনে রাখালেরা বলল, আমরাও আপনাদের সঙ্গী হতে চাই। আগুন্তকেরা বললেন, আমাদের আপত্তি নেই। তবে বিলম্ব না করে এ মুহূর্তেই চল।

রাখালেরা তাদের মেষগুলোকে ময়দানে ছেড়ে দিয়ে আগন্তুক যুবকদের সাথে পথ চলতে উদ্যত হল। এমন সময় তাদের সঙ্গের একটি কুকুর তাদের পিছন ধরল। তখন আগন্তুক যুবকেরা বলল, কুকুরটিকে এখানে রেখে চল, না হয় সে আমাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করবে। রাখালেরা কুকুরটিকে বাধা দিল। কিন্তু কুকুরটি সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে তাদের পিছনে ছুটতে আরম্ভ করল। তখন তারা কুকুরটিকে প্রহার করল, তার পা গুড়িয়ে দিল। তবুও কুকুরটি তাদের পিছন ছাড়ল না। একজনে প্রস্তাব করল কুকুরটিকে মেরে ফেল। এ সময় কুকুরের জবান খুলে গেল, সে কাকুতির সাথে বলল, “হে আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণ! তোমরা যাঁর সৃষ্টি আমিও তাঁর সৃষ্টি। তোমরা যাঁর উবাদত কর আমিও তাঁর ইবাদত করি। অতএব তোমাদের পুণ্য সহচর্য থেকে আমাকে দূরে ফেলে দিও না। আমি তোমাদের কাজে কোনরূপ বিঘ্ন সৃষ্টি করব না। বরং যতটুকু সম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করব।”

উপস্তিহ সবাই কুকুরের মুখের বর্ণনা শুনে অবাক হলেন এবং কুকুরটিকে কোলে তুলে পথ চলতে আরম্ভ করলেন। দিনের বাকি অংশ এবং সারারাত পথ চলার পরে পার্বত্য এলাকায় একটি বড় গুহার নিকট গিয়ে তাঁরা পৌঁছলেন। শ্রান্ত, ক্লান্ত অবস্থায় সকলের শরীরে এক ভীষণ আবসাদ নেমে এল। তাই সকলে একটু বিশ্রাম গ্রহণের উদ্দেশ্যে গুহার ভিতরে কিছুদূর অগ্রসর হয়ে শুয়ে পড়লেন। আর তাদের সঙ্গের কুকুরটি একটু দূরত্বে অবস্থান নিল।

সূত্রঃ কুরআনের শ্রেষ্ঠ কাহিনী

আসহাবে কাহাফের প্রকৃত ঘটনা-পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।