আসহাবে কাহাফের নিদ্রা ভঙ্গের ঘটনা- পর্ব ২

তখনকার দিনে রোমের বাদশাহ ছিলেন একজন দীনদ্বার মুসলমান। তাঁর কথা বার্তা ও আচার আচরণে ছিল নমনীয়তা, ভদ্রতা, সহনশীলতা। তিনি এমলেখার আগমনের খবর পেয়ে তাঁকে সম্মুখে নিয়ে আসার হুকুম দিলেন। যখন এমলেখা বাদশার সম্মুখে হাজির হলেন তখন তিনি কিছু সময় তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকলেন। এরপর তিনি তাঁকে সসম্মানে নিজের পাশে বসালেন এবং এমলেখাকে প্রশ্ন করে খুটিয়ে খুটিয়ে সমস্ত বৃত্তান্ত শুনলেন। বাদশা ইতোমধ্যে আসহাবে কাহাফের ঘটনা সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন। তবুও তিনি সন্দেহ মুক্ত হবার জন্য দরবারের আলেমগণকে ডেকে সমস্ত ঘটনা শুনালেন। আলেমগণ এমলেখাকে আসহাবে কাহাফের একজন শীর্ষস্থানীয় লোক বলে মত প্রকাশ করলেন। তখন বাদশা এমলেখাকে বললেন, ভাই সাহেব আমি আপনার সঙ্গে গুহায় যাব, আপনার সঙ্গীদের থেকে দোয়া নিব এবং তাদেরকে আপ্যায়ন করব। এমলেখা বাদশার কথায় রাজি হলেন।

বাদশা, এমলেখা ও বাদশার কতক সঙ্গী নিয়ে একত্রে রওনা করলেন। দীর্ঘ সময় পথ চলার পরে তার উক্ত গুহার দরজায় গিয়ে পৌঁছলেন। এমলেখা তখন বাদশাকে বললেন, হুজুর! আমার সঙ্গীগণ অত্যাচারী রাজার দাকিয়ানুসের জুলুমে অত্যন্ত ভীত, সস্ত্রস্ত অবস্থায় দিন গুজরান করছেন। এখন হঠাত গুহার মধ্যে আপনাকে জাঁকজম সহকারে দেখলে অবশ্যই তাঁরা জ্ঞান হারাবেন। অতএব আপনি গুহার দ্বারে একটু সময় অপেক্ষা করুন। আমি প্রথমে গুহার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বন্ধুদেরকে আপনার ন্যায় একজন দীনদ্বার বাদশার আগমনের খবর দেই। আপনার রাজ্যে আমাদের কোন সমস্যা নেই সে বিষয় তাঁদেরকে অবগত করি। তাহলে আপনার উপস্থিতিতে ওদের মাঝে কোন সমস্যার দেখা দিবে না।

বাদশা এমলেখার কথায় রাজি হলেন। বাদশা গুহার মুখে দণ্ডায়মান থেকে তাঁকে ভিতরে প্রবেশে অনুমতি দিলেন। এমলেখা গুহার ভিতরে প্রবেশ করে বন্ধুদেরকে সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। বন্ধুরা এমলেখার কথা শুনে আরো ভীত হলেন এবং বললেন, কোন রাজা-বাদশার সংশ্রবা আমাদের প্রয়োজন নেই। আমরা এখন কিছুই খাব না। আমরা যে মহান রব্বুল আ’লামিনের রহমত লাভের উদ্দেশ্যে এখানে এসেছি, তাঁরই নাম নিয়ে আমরা পুনরায় ধ্যানমগ্ন হব। একথা বলে তাঁরা এমলেখাকে নিয়ে পুনঃরায় ধ্যানমগ্ন হলেন।

বাদশা দীর্ঘ সময় এমলেখার অপেক্ষা করলেন। সেখানে রাত্রিযাপন করলেন এবং অধির আগ্রহে গুহাবাসীর পানে তাকিয়ে থাকলেন। দীর্ঘ তিন দিন অতিবাহিত হল কিন্তু গুহাবাসীর আর কোন খবর এল না। কয়েক পা অগ্রসর হয়ে তিনি আর কোন পথ পেলেন না। গুহার অভ্যন্তরে তিনি ছোট ছোট সুড়ঙ্গগুলি পরিক্ষা করে দেখলেন। কিন্তু কোথাও প্রবেশ করা তার পক্ষে সম্ভব হল না। তখন তিনি ভাবলেন এ সমস্ত কিছু কুদরতের খেলা। মহান সৃষ্টিকর্তা হয়ত এই মনিষীগণের সঙ্গে পৃথিবীর কোন মানুষকে যোগাযোগ করার সুযোগ দিবেন না। তাই আমার অদৃষ্টেও তাঁদের সহচার্য লাভ করা সম্ভব বয়। একথা ভেবে তিনি গুহার উপরে উঠে এলেন।

বাদশা গুহার উপরে এসে নামায আদায় করলেন এবং দীর্ঘ সময় আল্লাহর ধ্যানে কাটালেন। অতঃপর তিনি জিয়ারতগাহ হিসেবে আসহাবে কাহফের গুহার মুখে একটি ফলক তৈরী করে দিলেন এবং নিজে কাছে থেকে অদূরে একটি মসজিদ নির্মান করলেন। এ মসজিদে এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে জীবন কাটিয়ে দিলেন।

আসহাবে কাহাফের নিদ্রা ভঙ্গের ঘটনা- পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন

আসহাবে কাহাফের সংখ্যা সম্পর্কে পড়তে এখানে ক্লিক করুন

You may also like...

দুঃখিত, কপি করবেন না।