আল্লাহর কুদরতী উটনী-৩য় পর্ব
আল্লাহ্র কুদরতী উটনী-২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ছামুদ সম্প্রদায়ে ওনায়যা বিনতে গনম বিন মুজলাম নান্মী এক বুড়ী ছিল। তাঁকে উম্মে উসমানও বলা হত। সে কাফের ছিল এবং হযরত ছালেহ (আঃ) এর ঘোরতর শত্রু ছিল। সে প্রচুর সম্পদের অধিকারীনী ছিল। তাঁর অতি রুপসী কয়েকটি কন্যা ছিল। সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা যাওয়ার বিন আমর ছিল তাঁর স্বামী। সাদাকা বিনতে মাহইয়া বিন যুহায়র বিন মুখতার নান্মী অন্য একজন পরমা সুন্দরী ধনাঢ্য নারী ছিল। প্রথমে যার সাথে তাঁর বিবাহ হয়েছিল সে ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হয়েছিল। ইসলাম গ্রহণের পর তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
ওনায়যা ঘোষণা করে ছিল যে, সম্প্রদায়ের যে লোক এ উটনীকে হত্যা করতে পারবে সে তাঁর যে কোন কন্যাকে বিবাহ করতে চায় তাঁকে সে সুযোগ দেয়া হবে। আর ছাদকা ঘোষনা দিল যে, সম্প্রদায়ের যে কেউ উটনীকে হত্যা করতে সক্ষম হবে সে তাঁর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে। সাদাকা প্রথমে আল হাবাব নামক সম্প্রদায়ের এক নেতার নিকট গিয়ে তাঁর ইচ্ছা করল যে, সে যদি উটনী হত্যা করতে সক্ষম হয় তা হলে সে নিজেকে তাঁর হাতে সোপর্দ করবে। কিন্তু আল হাবাবতা অস্বীকার করল। অবশেষে সাদাকা তাঁর স্বীয় চাচাত ভাই মেসদাকে এ কার্যের জন্য আহবান করল। মেসদা তাঁর প্রস্তাবে সম্মতি প্রকাশ করল। এদিকে ওনায়যা কেদার বিন সালেফকে এ কার্যের জন্য আহবান করল। কেদার বিন সালেফ অতি শুশ্রী, লাল বর্ণের খাট দেহবিশিষ্ট ব্যক্তি ছিল। অনেকের ধারণা যে, কেদার বিন সালেফের জন্ম অসৎ উপায়ে হয়েছে। যদিও সে সালেফের বিবাহিত স্ত্রীর গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে সেহবাদ নামক এক ব্যক্তির সন্তান। তাঁর ঔরশ থেকেই জন্মগ্রহণ করেছে। কিন্তু সালেফের স্ত্রী গর্ভে জন্মগ্রহণ করেছে বলে তাঁকে সালেফের পুত্র বলা হত।
ওনায়যা তাঁর নিকট প্রস্তাব পেশ করল যে, যদি কেদার উটনী হত্যা করতে সক্ষম হয় তা হলে ওনায়যা স্বীয় কন্যাদের থেকে যে কোন এক কন্যা তাঁকে দান করবে। কেদার বিন সালেফ তাঁর প্রস্তাব কবুল করে মেসদাকে সাথে করে উটনী হত্যা করার জন্য চলল। পরে তাঁদের সাথে আরও সাতজন যোগ দিয়ে নয়জন হল। তারা সকলেই উক্ত সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় লোক ছিল। এভাবে সমস্ত কাফেররা তাঁদের কার্যে সহযোগিতা করল। তারা লক্ষ্য রাখল কখন উটনী পানি পান করে ফিরে আসে। কেদার বিন সালেফ পথের এক পার্শ্বে একটি পাথরের গা ঘেষে চুপ করে দাড়ায়ে রইল। আর মেসদা অন্য একটি পাথরের আড়ালে ওৎপেতে বসে রইল। যখন উটনী মেসদার নিকট দিয়ে যাচ্ছিল তখন সে ওটার প্রতি তীর নিক্ষেপ করল। তীর উটনীর পায়ে বদ্ধ হল। এমতাবস্থায় ওনায়যা তার এক কন্যাকে কেদারের সম্মুখে আসার নির্দেশ দিল। তাঁর এ কন্যাটি অতুলনীয় সুন্দরী ছিল। সে মন ভুলানো সুখশ্রী নিয়ে কেদারের সামনে উপস্থিত হওয়ার পর কেদার তাঁকে পাওয়ার আশায় তলোয়ার নিয়ে উটনীর উপর ঝাপায়ে পড়ল। তলোয়ারের আঘাতে উটনীর পায়ের নীচের অংশ কেটে গেল। উটনী খুব জোরে আওয়াজ করে মাটিতে পড়ে গেল। অতঃপর কেদার বর্শা দ্বারা উটনীকে হত্যা করল। এদিকে উটনীর বাচ্চা এ বিপদ দেখতে পেয়ে দৌড়ায়ে পাহাড়ে চলে গেল। পাহাড়ে গিয়ে একটি পাথরের উপর উঠল। তিনবার খুব জোরে আওয়াজ দেয়ার পর পাথরটি ফেটে গেল। আর উটনীর বাচ্চাটি ঐ পাথরের ফাটার ভিতর ঢুকে পড়ল। এভাবে উটনীর বাচ্চা লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে গেল।
হযরত ছালেহ (আঃ) উটনীর হত্যার খবর পেয়ে খুব দুঃখীত হলেন এবং সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদিগকে একস্থানে সমবেত দেখতে পেলেন। তিনি উটনী মৃত দেখে খুব কাঁদলেন। আর হযরত ছালেহ (আঃ) তথায়ই আল্লাহ্র হুকুমে বলে দিলেন যে, তিন দিন পর তোমাদের প্রতি আযাব অবতীর্ণ হবে। এটা আল্লাহ্ পাকের ওয়াদা। এটা অবশ্যই হবে। এটা না হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। যে সম্প্রদায়ের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, স্বভাব বিগড়ায়ে যায়, তাদিগকে কোন নছীহত ও সতর্কবাণী ফল দিতে পারে না। বরং তারা তাঁর বাণীর প্রতি উপহাস ও ঠাট্রা করতে লাগল। আর বলতে লাগল যে, এ আযাব কিরূপ? কোথা হতে আসবে? এর আলামত কি? হযরত ছালেহ (আঃ) বললেন যে, আযাবের আলামত শুনে রাখা আগামীকাল বৃহস্পতিবার তোমাদের চেহারা হলুদ বর্ণ ধারণ করবে, নারী পুরুষ, বাচ্চা-বৃদ্ধ, কেউই-এটা হতে রক্ষা পাবে না।
অতঃপর শুক্রবারে তোমাদের সকলের চেহারা লাল বর্ণ হয়ে যাবে। আর শনিবার তোমাদের চেহারা ঘোর কৃষ্ণ বর্ণ ধারণ করবে। এটাই তোমাদের শেষ দিন হিসাবে পরিগণিত হবে।
কিন্তু এ সম্প্রদায় এ আযাবের কথা শুনেও আল্লাহ্ পাকের নিকট গুনাহ মাফ চাওয়াতো দূরের কথা বরং হযরত ছালেহ (আঃ) কে হত্যা করার সিধান্ত গ্রহণ করল। তারা বলতেছে যে, যদি হযরত ছালেহ (আঃ) সত্যবাদী হন তা হলে তো অবশ্যই আমাদের প্রতি আযাব নেমে আসবে। সুতরাং আমরা ধ্বংস হওয়ার পূর্বে হযরত ছালেহ (আঃ) কে ধ্বংস করে ফেলব। আর যদি তিনি মিথ্যাবাদী হন তা হলে মিথ্যার শাস্তি স্বরূপ তাঁকে হত্যা করার জন্য পুনরায় নয়জন একত্রিত হল।