আল্লাহর কুদরতী উটনী-২য় পর্ব
আল্লাহ্র কুদরতী উটনী-১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
হেজর শহরে একটি কুপ ছিল। ঐ কুপেই পানিই শহরবাসী পান করত। কিন্তু আল্লাহ্র প্রেরিত সে কুদরতি উটনী সে কুপের পানি পান করলে কুপের সমস্ত পানি শেষ হয়ে যেত। সম্প্রদায়ের লোকেরা কুপে অবশিষ্ট কোন পানিই পেত না। সুতরাং সম্প্রদায়ের লোকদের জন্য এটা মুশকিল হয়ে পড়ছিল। যদিও সম্প্রদায়ের অধিকাংশ লোকই ঈমান গ্রহণ করে নেই। কিন্তু ভয়ে উটনী সম্পর্কে কোন কথা বলত না। হযরত ছালেহ (আঃ) বুঝতে পারলেন যে, উটনীর পানি পান করা দ্বারা সম্প্রদায়ের লোকদের কষ্ট হচ্ছে। তাই তিনি আল্লাহ্ পাকের অনুমতি সাপেক্ষে এ সম্বন্ধে ফয়সালা করলেন যে, একদিন উটনী কুপের পানি পান করবে সেদিন সম্প্রদায়ের লোকেরা কুপের পানি পান করতে পারবে না। আর একদিন সম্প্রদায়ের লোকেরা ঐ কুপের পানি পান করবে সেদিন উটনী পানি পান করবে না।
নির্ধারিত পালাক্রমে পানি পান শুরু হল। একদিন উটনী ও তাঁর বাচ্চা পানি পান করত আর দ্বিতীয় দিন সম্প্রদায়ের লোকজন ও তাঁদের পশুগুলি পানি পান করত। কিন্তু যেদিন উটনী পানি পান করত সেদিন সম্প্রদায়ের লোকজন পানির পরিবর্তে উটনী হতে দুধ দোহন করে নিত। তারা নিজেদের ইচ্ছেমত যে পরিমাণ দুধ দোহন করতে চাইত সে পরিমানই দুধ দোহন করে নিতে পারত। এমনকি পূর্ণ সম্প্রদায়ের সমস্ত লোকের সর্ব প্রকার দুধের প্রয়োজন উতনীর দুধের দ্বারাই মিটে যেত।
অতঃপর হযরত ছালেহ (আঃ) স্বীয় ঐদ্ধত্য ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী সম্প্রদায়কে আল্লাহ্ পাকের আযাব হতে বাচানোর উদ্দেশ্যে তাঁদের প্রতি আল্লাহ্ পাকের প্রদত্ত নিয়ামতের কথা স্বরণ করায়ে দিতেছেন যাতে তারা আল্লাহ্ পাকের নাফরমানী হতে ফিরে আসে।
ছামুদ সম্প্রদায়ের লোকগণ খুব সম্পদশালী ও আরাম প্রিয় এবং শিল্প কর্মে খুব পটু ছিল। তাই তারা গ্রীষ্মকালে নরম যমীনের উপর ঘর নির্মাণ করে তথায় বসবাস করত। আর শীতকালে পাহাড়ের পাথর কেটে ঘর প্রস্তুত করে তথায় দিন যাপন করত। যদিও তারা উটনীর পানি পান করার পালা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু হযরত ছালেহ (আঃ) এর বিরোধিতা পরিত্যাগ করে নি বরং যারা ঈমান গ্রহণ করেছিল তাদেরকে ঈমানের পথ হতে সরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন পন্থায় জর্জরিত করতেছিল। কখনও কখনও এমন আচরণ করত যা দ্বারা ঈমানদারদের মনে দুর্বলতা দেখা দেয়। এবং তাঁদের ঈমানের প্রতি সন্দেহের সৃষ্টি হয়। অদিকন্তু তারা ঈমানদারদেরকে দুর্বল মনে করত। কিন্তু ঈমানদারগণ তাঁদের ঈমানে অটল ও অবিচল ছিল। যদিও তারা সংখ্যায় খুবই কম ছিল। কিন্তু তারা খুব ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সাথে কাফেরদের মোকাবেলা করত।
হযরত ছালেহ (আঃ) এর সম্প্রদায়ের যে সকল নেতারা গর্ব ও অহংকারে মত্ত হয়ে গিয়েছিল তারা তাঁদের মধ্যে যারা ঈমান গ্রহণ করেছিল তাদিগকে দুর্বল মনে করত এবং বলতো তোমরা বিশ্বাস কর ছালেহ তাঁর প্রভুর পক্ষ হতে রাসূল হিসেবে প্রেরিত হয়েছে? ঈমানদার লোকেরা বলতো যে, নিশ্চয় তাঁকে যা সহ প্রেরণ করা হয়েছে আমরা তাঁর প্রতি বিশ্বাস রাখি।
ঈমানদারের এরূপ উত্তরে কাফেরদের ঔদ্ধতা আরও বেড়ে গেল। এমনকি তারা আল্লাহ্ পাকের প্রেরিত কুদরতী উটনী হত্যা করার পরিকল্পনা করল। প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় এ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। কিন্তু বাহ্যিক কারণ হিসেবে যা গ্রহণ করেছিল তা হল যে উটনী উক্ত সম্প্রদায়ের বিভিন্ন উপত্যকায় ঘাস খাওয়ার জন্য চড়ে বেড়াত। এটা এক রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করত আর অপর রাস্তা দিয়ে ফেরত আসত। এটা এমন এক দেহবিশিষ্ট ছিল যে, যখন এটা অন্যান্য জন্তুর নিকট দিয়ে চলত তখন অন্যান্য জন্তু এটাকে দেখে ভয়ে পালাত। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর তারা বাহ্যিক কারণ দেখায়ে উটনী হত্যা করার জন্য পরিকল্পনা করল।