আযান ও আশুরার রোযা-১ম পর্ব
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর হিজরতের পর চতুর্দিক হতে বিভিন্ন কবিলার লোকজন দরবারে নববীতে উপস্থিত হয়ে পবিত্র ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হতে লাগলেন এবং যে সমস্ত মুসলমান মক্কাতে আবদ্ধ ছিলেন, তারাও চুপে চুপে হিজরত করে মদীনায় উপস্থিত হতে লাগলেন। এভাবে মুসলমানের সংখ্যা যখন বৃদ্ধি পেয়ে গেল, তখন নামাজের জামাতে একই সময়ে উপস্থিত হওয়ার জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের আশু প্রয়োজন দেখা দিল।
এ উদ্দেশ্যে একদিন মুহাম্মাদ (সাঃ) সাহাবায়ে কিরামকে করে একটি পরামর্শ সভার আয়োজন করলেন। কিভাবে মানুষকে নামাজের নির্দিষ্ট সময় সম্বদ্ধে অবগত করানো যায় এ ব্যাপারে সকলের নিকট পরামর্শ চাওয়া হল। প্রত্যেকেই মতামত প্রদার করলেন। কেউ বললেন, ঘন্টা বাজানো হউক। আবার কেউ বললেন, সিঙ্গা ফুঁক দেয়া হউক। কেউ বললেন, আসসালাতু জামেয়াতুন বলে উচ্চঃস্বরে চিৎকার করা হউক।
কেউ বললেন, অগ্নি প্রজ্বলিত করা হউক। রাসূল (সাঃ) এ সমস্ত প্রস্তাবের কোনটিই পছন্দ করলেন না। কারণ অগ্নি প্রজ্বলিত করে উপাসনার প্রতি লোকজনের আহবান করা অগ্নি পূজকদের স্বভাব। ঘন্টা বাজানোর নাসারাদের স্বভাব। এভাবে এক একটি প্রস্তাব এক এক বিধর্মীদের স্বভাব। মুসলমানদের কোন আমল কাফেরদের আমলের ন্যায় হতে পারে না। অমীমাংসিত অবস্থায় সকলে চলে গেলেন।
রাত্রে প্রায় এগারজন সাহাবী স্বপ্নে আযানের কালেমাগুলো গায়েবী ঘোষণার মাধ্যমে শুনতে পান। সর্বপ্রথম আবদুল্লাহ বিন জায়েদ ভোর বেলায় দরবারে উপস্থিত হয়ে স্বপ্নের কথা বয়ান করেন। তার পর অন্যান্য সাহাবীও উপস্থিত হয়ে স্বপ্নের বর্ণনা দিলেন। তাদের বর্ণনার দ্বারা রাসূল (সাঃ)-এর আযানের কালেমাগুলো স্মরণ হয়ে গেল, যা মে’রাজের রাত্রে বায়তুল মুকাদ্দাসে তিনি শুনতে পেয়েছিলেন। হযরত ওমরও অনুরূপ স্বপ্ন দেখেছিলেন।
রাসূল (সাঃ) বিলালকে ডেকে বললেন, তুমি উঁচু দণ্ডায়মান হও। আবদুল্লাহ তোমাকে আযানের শব্দগুলো বলে দেবে। তুমি তার সঙ্গে সঙ্গে উচ্চঃস্বরে শব্দগুলো উচ্চারণ করবে। হযরত বিলালের কন্ঠস্বর অত্যন্ত বুলন্দ ছিল। রাসূল (সাঃ)-এর নির্দেশনুযায়ী হযরত বিলাল অতি উচ্চস্বরে আযান দিলেন। হযরত বিলালের মধুর সুরলহরী আযান রাত্রিশেষের নিস্তব্ধতাকে ভেদ করে দিক-দিগন্ত কাঁপিয়ে তুলল। ফজরের সময় এ প্রথম আযান হল।