
একবার এক মরুপ্রান্তরে হযরত বড়পীর (রহ.) ভ্রমণ করছিলেন। ইবাদত-বন্দেগী ও ধ্যানসাধনার এক বিশেষ ক্ষণে অদৃশ্য থেকে একটি আওয়াজ ভেসে এলো—
“হে আবদুল কাদের! আমি তোমার প্রতি সন্তুষ্ট। সাধনার মাধ্যমে তুমি আজ এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছ যে, আমি, আল্লাহ, তোমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে গিয়েছি। অতএব, এখন থেকে শরীয়তের কোনো বিধান তোমার উপর বাধ্যতামূলক নেই। তুমি ইবাদত করো বা না করো, এতে কিছু আসে-যায় না। যে কোনো কাজে তুমি এখন থেকে স্বাধীন।”
এ কথা শুনে হযরত জিলানী (রহ.) অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বললেন—
“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”
অমনি অদৃশ্য আওয়াজটি বন্ধ হয়ে গেল। এরপর তিনি বলতে লাগলেন—
“হে অভিশপ্ত শয়তান! আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি। তোদের এই কুমন্ত্রণা থেকেই আমি বুঝতে পারলাম, এটি তোদের ভয়ংকর কৌশল। আমাকে পথচ্যুত করার এক মারাত্মক কূটচাল। কারণ, পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট বলা হয়েছে, আল্লাহ কোনো মানুষের সাথে সরাসরি কথা বলেন না। তাছাড়া, সাধনার কোনো স্তরেই ইবাদত-বন্দেগীর দায়িত্ব কারো উপর থেকে তুলে নেওয়া হয় না। শরীয়ত অমান্য করার নির্দেশ আল্লাহ কখনো কাউকে দেন না। তাই তোদের কথা শোনামাত্রই আমি নিশ্চিত হয়ে গেছি, এটি আল্লাহর বাণী নয়; বরং এটি শয়তানের প্রতারণা।”
এই কথা শুনে শয়তান বলল—
“এই মরুপ্রান্তরেই আমি এর আগে অন্তত ২৭ জন সাধককে ধোঁকা দিয়ে পথভ্রষ্ট করেছি। কিন্তু আজ আপনি নিজ প্রজ্ঞা, জ্ঞান ও উচ্চপর্যায়ের সাধনাবলে রক্ষা পেয়ে গেলেন, হে যুগশ্রেষ্ঠ ওলী!”
তখন হযরত জিলানী (রহ.) আবার বললেন—
“লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ”
অর্থাৎ, আল্লাহর খাস রহমত ছাড়া ধূর্ত প্রতারক শয়তান থেকে বেঁচে থাকার কোনো শক্তি ও ক্ষমতা আমার নেই।
এরপর তিনি বললেন—
“ঘটনার শেষ অংশে এসেও তুই আমাকে নতুন করে ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করছিস, হে বিতাড়িত শয়তান! তুই বুঝাতে চাইছিস যে, আমার জ্ঞান ও প্রজ্ঞার দ্বারা আমি রক্ষা পেয়েছি। অথচ আমি যে দোয়াটি পড়েছি, তাতে স্পষ্ট বলা আছে— আল্লাহর সাহায্য ও করুণা ছাড়া বান্দার রক্ষা পাওয়ার কোনো উপায় নেই।”
এ কথা শুনে শয়তান বলল—
“সত্যিই আপনি আল্লাহর প্রকৃত খাস বান্দা। কোনোভাবেই আমি আপনাকে খোদাবিমুখ করতে পারলাম না।”
এই কথা বলে শয়তান ব্যর্থ হয়ে দূরে সরে গেল।