আদম (আঃ)- কে সিজদা করার কাহিনী
এরপর আল্লাহর পক্ষ থেকে জিব্রাইল (আঃ) এর প্রতি হুকুম হল- তিনি যেন হাঁচি দেন। আল্লাহ পাক এও বললেন, আমি আদম থেকে এক বান্দা হযরত ঈসা-ইবনে মারইয়াম কে সৃষ্টি করব। হযরত আদম (আঃ) মাটি থেকে উঠে সুসজ্জিত পোশাক ও স্বর্ণখচিত মুকুট পরিধান করে বেহেশতে অবস্থিত এক আসনে গিয়ে উপবেশন করেন, যা গহনাপত্র হীরা, জহরত দ্বারা সুসজ্জিত।
এ সময় তার চেহারার নূর আল্লাহর আরশ পর্যন্ত চমকাতে থাকে। আর তাই ছিল নূরে মুহাম্মদী (সাঃ)। অতঃপর সকল ফেরেশতাদের প্রতি হযরত আদম (আ)-কে সিজদা করার জন্য আল্লাহ তাআলা আদেশ হল। আর এ সিজদা ছিল আদমতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে ইবাদতের সিজদা নয়। পবিত্র কালামে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন-
অর্থঃ আর আমি যখন আদমকে সিজদা করতে ফেরেশতাদের বললাম, তখন ইবলীস ব্যতীত সকলেই সিজদা করল। সে সিজদা করতে অস্বীকার জানাল এবং অহংকার করল ও কাফেরদের দলভুক্ত হল।
ফেরেশতারা সিজদা থেকে মস্তক উত্তলন করে বুঝতে পারলেন, সিজদা করতে অস্বীকার করল অস্বীকারকারী ইবলীস। তখন ফেরেশতারা পুনরায় সিজদায় পতিত হয়। ফেরেশতারা দ্বিতীয় সিজদা ছিল আল্লাহর নির্দেশ পালনের শুকরিয়া স্বরূপ। এবার আল্লাহ পাক ইবলীসকে লক্ষ্য করে বললেন,
অর্থঃ হে ইবলীস! আমি যাকে আপন হস্তে সৃষ্টি করেছি, তাকে সিজদা করতে কিসে তোমার বাঁধা দিল? এটা তো তুমি অহংকার করলে। মর্যদায় কি সে উচ্চ না তুমি? ইবলীস বলল-
অর্থঃ আমি তার (আদম) চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আপনি আমাকে আগুন দিয়ে আর তাঁকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এবার আল্লাহ পাক তাকে লক্ষ্য করে ইরশাদ করলেন-
অর্থঃ হে ইবলীস! তুই এখান থেকে বেরিয়ে যা, কারণ তুই অভিশপ্ত হয়েছিস।
তোর ওপর কিয়ামত পর্যন্ত আমার লা’নত
ইবলীসের উপর বহিষ্করাদেশের প্রয়োগ ক্ষেত্রে সম্পর্ক ওলাময়ে কিরাম ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। কারো মতে বের হয়ে যা’ এ অর্থ থেকে বেরিয়ে যা। কেউ বললেন, ফেরেশতাদের দল থেকে বের হয়ে ইবলীস হয়ে যা। এসময় আল্লাহর গযবে তার আকৃতি পরিবর্তিত হয়ে চক্ষুদ্বয় চলে আসে বক্ষে। অতঃপর কেউ যখন তাকে দেখত, তখন বলত-এ আল্লাহর দরবার থেকে বিতাড়িত, অভিশপ্ত, লাঞ্ছিত ও অপমানিত। অতঃপর শয়তান ইবলীস আল্লাহর সমীপে নিবেদন করল , হে আল্লাহ! আমি আপনার দরবার থেকে বিতাড়িত হয়েছি আদমের কারণে।
এটা আমার দুর্ভাগ্য। আল্লাহ পাক বললেন, হে ইবলীস! তুই তোর লিপির প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ কর। সেদিকে দৃষ্টিপাত করে সে দেখতে পেল তাতে লেখা রয়েছে- আল্লাওর যে বান্দা তার নির্দেশ অমান্য করে তার শাস্তি হচ্ছে না’নত- অর্থাৎ আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হওয়া। সে লিপি পাঠান্তে ইবলীস নিরাশ ও লজ্জিত হয়ে বলল,
অর্থঃ হে রব! আমাকে অবকাশ দিন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত। হে আল্লাহ! আপনার সমীপে আমার দ্বিতীয় আবেদন- আমাকে আদম সন্তানের অস্থিমজ্জা ও রগসমূহে প্রবেশের সুযোগ দিন, আর আমাকে তাদের দৃষ্টির আড়ালে রাখুন। ইবলীসের এ আবেদন উত্তরে আল্লাহ পাক ইরশাদ করলেন,-
অর্থঃ তোমাকে অবকাশ দেয়া হল পুরুত্থান দিবস পর্যন্ত। আল্লাহ পাকের এ ঘোষণায় ইবলীসের লক্ষ্য সফল হল।
সে আদম এর অবস্থানস্থলে গিয়ে বসে সুযোগ তালাশ করতে থাকে। এবার ইবলীস বলল ( আল্লাহর ভাষায়)
অর্থঃ আপনার ইজ্জতের কসম, তাদের সবাই কে পথভ্রষ্ট করব। তবে আপনার বান্দাহদের মধ্যে যারা মনোনীত তাদেরকে নয়। তার কথার জবাবে আল্লাহ পাক বলেন-
অর্থঃ এটাই হক কথা এবং আমি হক কথাই বলি। আমি দোযখ ভর্তি করব তুই এবং তোর অনুসারীদের দিয়ে।