আদব

আদব-কায়দা এমন একটি জিনিস, যেটি দ্বারা অন্য কোনো প্রাণী থেকে মানুষকে আলাদা করা যায়। সমাজে ভালোভাবে থাকতে হলে মানুষকে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। তা না হলে সে প্রতি পদে বিপদের সম্মুখীন হয়। আর মানুষকে কর্মক্ষেত্রে সফলতা লাভের জন্য বিভিন্ন আদব-কায়দা মেনে চলতে হয়। যদি সেসব আদব-কায়দা মেনে চলে, তাহলে সব ক্ষেত্রেই সফলতা লাভ সম্ভব। ১. কাউকে দেখা যায় যে, অন্যের জিনিস বিনা দ্বিধায় ব্যবহার করে এমনকি অনেক সময় অনুমতি ছাড়াই ব্যবহার করে। এটাও বর্জনীয়। বিনা অনুমতিতে অন্যের জিনিস ব্যবহার করা তো নাজায়েয। আর এই ধারণা করা যে, সে কিছু মনে করবে না-এটা একটি শয়তানি কুমন্ত্রণা। যা গ্রহণযোগ্য নয়। অন্যের জিনিস অনুমতি সাপেক্ষে ব্যবহার করাও তো ‘সুওয়ালে’র অন্তর্ভুক্ত, যা নিন্দনীয় কাজ। এমনকি ‘মাউন’ (গৃহস্থালির ছোটখাটো বস্ত্ত) জাতীয় বস্ত্তও চাওয়া উচিত নয়। কেননা, এ জাতীয় বস্ত্ত না দেওয়া নিন্দনীয়, কিন্তু তা চাওয়া তো প্রশংসনীয় বা বাঞ্ছনীয় নয়। ২. কখনো চলার পথে কিংবা মাদরাসার আঙ্গিনায় দেখা যায়, দুজন তালিবে ইলম একে অপরের হাত ধরে অথবা একে অন্যের কাঁধে বা গলায় হাত রেখে হাঁটছে বা বসে আছে। মনে রাখা উচিত, এটা অনুচিত আচরণ। বিশেষ করে নববী ইলম অন্বেষণকারীদেরকে তো এ থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। কেননা এটা তাদের ভাব-গাম্ভীর্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তাছাড়া এটা পথচলার আদবেরও পরিপন্থী। ৩. বিশেষ করে অন্যের লুঙ্গি পরিধান করা তো একেবারেই অরুচিকর। এ থেকে বেঁচে থাকা অপরিহার্য। ৪. অনেককে দেখা যায়, দস্তরখানে পানির জগ এক পাশ থেকে অন্য পাশে নিতে চাইলে খাবারের পাত্রের উপর দিয়ে নিয়ে যায়। এটাও দৃষ্টিকটু, বিশেষত যদি জগের নিচের অংশ প্রতিদিন ভালোভাবে পরিষ্কার না করা হয়। ৫. পাত্রে হাত ধোয়ার সময় আস্তে আস্তে হাত ধোয়া উচিত। যেন পানির ছিঁটা আশপাশের লোকদের শরীর বা কাপড়ে না পড়ে। এমনকি দস্তরখানের উপর কোনো পাত্র থাকলে তাতেও যেন না পড়ে। ৬. দস্তরখানের উপর চিলিমচিতে কুলি করা উচিত নয়, বিশেষত যদি দস্তরখানে অন্য কোনো লোক থাকে। কেউ কেউ খাওয়ার আগে কুলি করাকে সুন্নত বা মুস্তাহাব মনে করে থাকে-এটা ভুল। এক্ষেত্রে কোনো কোনো বুযুর্গের এই পরামর্শটি বেশ উপযোগী যে, হাত ধোয়ার পর্বটি দস্তরখানা বিছানোর আগেই সেরে নিবে। যদি এমনটি না করা হয় তাহলে কমপক্ষে দস্তরখানে খাবার পরিবেশনের আগে তো অবশ্যই হওয়া উচিত। কোথাও দেখা যায়, দস্তরখানে খাবার পরিবেশনের পর হাত ধোয়ানো হয়। এতে ব্যবহৃত পানির ছিঁটা দস্তরখানে, কখনো কখনো খাবারের উপরও পড়ে যায়। এটা রুচি ও আদবের পরিপন্থী। ৭. চিলিমচির ভিতর ও বাহির উভয় অংশ ভালোভাবে পরিষ্কার করা উচিত। দস্তরখানা ও তাতে রাখা প্রতিটি বস্ত্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হওয়া উচিত। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি উদাসীনতা এমনিতেই অপছন্দনীয় ও সুন্নতপরিপন্থী। আর খাবার ও পানীয়র ক্ষেত্রে তো তা আরো বেশি গর্হিত ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ৮. খাওয়ার আগে বা পরে লবন খাওয়াকে সুন্নত মনে করা ভুল। এটি মূলত রুচি ও চিকিৎসার বিষয়, ফেকহের কোনো বিষয় নয়। লবন সত্তরটি রোগের ঔষধ-এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট বর্ণনা। ৯. দস্তরখানে কিংবা দস্তরখানের বাইরে খাবারের কোনো অংশ, কোনো দানা অথবা সব্জির কোনো টুকরা পড়ে গেলে তা উঠিয়ে খাওয়া, প্রয়োজনে পরিষ্কার করে খাওয়া সুন্নত। দস্তরখানা বিছাতে তৎপর থাকা আর এই সুন্নতের প্রতি উদাসীন হওয়া খুবই অপছন্দনীয়। খাবারের প্রতিটি দানাই গুরুত্বপূর্ণ ও শোকরযোগ্য। তাই ঝুটার সাথে তা ফেলে দেওয়া কিংবা বরতন ধোয়ার জায়গায় তা রেখে দেওয়া খুবই গর্হিত আচরণ এবং অত্যন্ত দৃষ্টিকটু ও মর্মান্তিক। ১০. হাড্ডি, কাটা কিংবা অন্য কোনো অতিরিক্ত অংশ পানিতে ফেলা উচিত নয়। কেননা, এগুলো আল্লাহ তাআলার কোনো না কোনো মাখলুকের খাবার। পানিতে ফেললে এর স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। আমার শ্রদ্ধেয় আববাজান এবং হযরত মাওলানা মুমিনুল্লাহ ছাহেব আমাকে এই উপদেশ করেছেন। আর মাওলানা রুকনুদ্দীন ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম এই কথাটি হযরত মাওলানা মুফতী মুহিউদ্দীন (বড়কাটারা) রাহ.-এর উদ্ধৃতিতে একটি ঘটনার সাথে শুনিয়েছেন। শব্দের ভিন্নতা থাকলেও প্রত্যেকের মূলকথা একটাই-যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। ১১. কাউকে, বিশেষত কোনো মুরববীকে পানির গ্লাস দেওয়ার সময় গ্লাসের নিচের অংশে ধরা উচিত। যেন ঐ ব্যক্তি গ্লাসের উপরের অংশে ধরতে পারেন। অন্যথায় তার হাত গ্লাসের নিচে থাকবে আর খাদেমের হাত থাকবে উপরে। তাছাড়া গ্লাসের উপর অংশে হাত ধরা এজন্যও উচিত নয় যে, ঐ জায়গায় মুখ রেখে পান করতে হবে। তাই এ অংশে আঙ্গুল না লাগাই উচিত। চায়ের কাপ দিতে হলে কোনো পাত্রে রেখে সামনে দেওয়া উচিত। আর হাতে দিতে হলে প্রথমত উপরের অংশ ধরবে না আর দ্বিতীয়ত পাত্রের হাতল ধরে মেহমানের সামনে রেখে হাতলের অংশ তার দিকে করে দিতে হবে। চায়ের কাপ গরম থাকে তাই তা নিজেও ধরবে না আবার কাউকে ধরতে বাধ্য করাও উচিত নয়। দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজ সুন্দর ও অর্থপূর্ণ করার জন্য এজাতীয় অসংখ্য আদব রয়েছে। যদি কেউ সচেতনতার সাথে রুচি ও বিবেক প্রয়োগ করে এবং বড়দের নিকট থেকে শেখার চেষ্টা করে তাহলে বিষয়টি সহজ হয়ে যায়। কিন্তু কেউ যদি গাফলতের চাদর মুড়ি দিয়ে বসে থাকার জন্যই পণ করে তাহলে এর তো কোনো ঔষধ নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন। আমীন। ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহীত

“জান্নাতের অপরূপা সুন্দরী কুমারী রমণী”

কুসংষ্কার !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *