আছিয়ার ধনলাভ ও কাবুস বহিষ্কৃত
দুরাচার কাবুসের দুষ্কৃতিসমূহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে পাগল। হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ প্রভৃতি ভীষণ ও জঘন্য কার্যদ্বারা সে দেশের লোককে এমন ভাবে উত্যক্ত করে তুলল যে, তারা সকলে দেশ ছেড়ে পালাবার উপক্রম করল। দলে দলে লোকগণ এসে কাবুসের পিতার সমীপে এর একটি প্রতিকার কামনা করতে লাগল।
কিন্তু সে বৃদ্ধ, অক্ষম ব্যক্তি। তার হাতে করার মত কিছু ছিল না। অবশ্য লোকদের এরূপ দুর্দশা দেখে দুঃখে ও লজ্জায় তাঁর মৃত্যুবরণ করার ইচ্ছা হচ্ছিল। আর পাপিষ্ঠ পুত্রের প্রতি ক্রোধে ও নিষ্ফল আক্রোশে শুধু হাঁপিয়ে উঠছিল এবং দিবানিশি সৃষ্টিকর্তার কাছে তার জন্য শাস্তি কামনা করছিল।
শেষ পর্যন্ত তার মনের অবস্থা চরম আকার ধারন করল। সে তার পুত্রের সাথে সম্পর্ক ত্যাগের ইচ্ছা করে মনে মনে এক সঙ্কল্প স্থির করল। অতঃপর তার অতিশয় নিকট আত্নীয়কে ডেকে সে বলল, তোমরা আমার পুত্রের ক্রিয়া কলাপ তো চক্ষেই দেখছ, তা আর বলতে হবে না। তার চরিত্র সংশোধনের আশায় দেশের সর্বাপেক্ষা সুন্দরী ও উত্তম পাত্রীকে তাকে বিবাহ করিয়েছিলাম। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হল না।
সে যেমনটি ছিল, তেমনই রয়ে গেল; বরং পূর্বাপেক্ষাও এখন সে যেন অধিক নষ্ট হয়েছে। দিন রাত নিষ্পাপ বধুটির চোখে জল ঝরতেছে তা দেখে এখন আর সহ্য হচ্ছে না। একেক সময় আল্লাহর কাছে বলি, হে প্রভু! তুমি এমন কুসন্তানকে আমার গৃহে কেন দিয়েছিলে? এটা অপেক্ষা দিঃসন্তান থাকা তো অনেক উত্তম ছিল।
যা হোক এখন আমার সিদ্ধান্ত এই যে, এহেন কুপুত্রের সাথে আমি আর কোন সংস্রব রাখব না। অদ্য হতে আমি তাকে ত্যাজ্য পুত্র বলে ঘোষণা করে দিলাম, তোমরা আমার এ ঘোষণা বাণীটি লিখে নিয়ে আমার হাতের দস্তখত রাখ এবং তোমরা এর স্বাক্ষী হয়ে থাক। আমার মৃত্যুর পরে আমার এ বিপুল ধন সম্পদ হতে সে এক কানা কড়িরও মালিক হবে না। এর সম্পূর্ণই এ মুহূর্তে আমি দুঃখিনী আছিয়ার নামে দান করতেছি। তোমরা সাক্ষী থেকে তা লিখে নাও।
আত্নীয় ব্যক্তিগণ কিছু বলতে যাচ্ছিল; কিন্তু কাবুসের পিতা সেদিকে কর্ণপাত করলেন না। অতঃপর সত্য সত্যই লিখিতভাবে কাবুসকে ত্যাজ্য পুত্র ঘোষণা করে দিল এবং তার স্থাবর-অস্থাবর সম্পূর্ণ ধন সম্পদ বিবি আছিয়ার নামে দানপত্র লিখে দিলেন।
শীঘ্রই একথা সকলের কাছে প্রচার হয়ে গেল; কাবুসও শুনতে পেল।
কিন্তু সে যত অন্যায়ই করুক না কেন তার পিতা যে এমন ভীষণ কঠিন আচরণ প্রদর্শন করবে এটা সে কল্পনাও করেনি। সে যে প্রচন্ড একটি আঘাত পেয়ে হঠাত বসে পড়ল-তার মনের অবস্থা এরূপ ঘটল। পিতা পত্নীর প্রতি বিক্ষুব্ধ অভিমানে সে কঠিন হয়ে গেল। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল সে পিতার জীবিতকালেও তার একটি কপর্দকও স্পর্শ করবে না। আর সে পিতার গৃহেও অবস্থান করবে না।
স্ত্রী আছিয়ার সাথে তার কোনরূপ সম্পর্ক বা যোগাযোগ ছিল না পূর্ব হতেই; সুতরাং এ বিষয় আর তাঁর কাছেও জিজ্ঞাসাবাদ না করে সে বের হয়ে পড়ল।