আছিয়ার দুঃখ-পর্ব ১
বিবি আছিয়ার দুঃখের আর সীমা নেই। তিনি পরম ধার্মিকা নারী, বিশ্বনিয়ন্তা আল্লাহর প্রতি তাঁর অধাধ বিশ্বাস। তিনি আল্লাহর একান্ত অনুগত দাসী। অথচ স্বামী তাঁর সে আল্লাহরই ঘোর বিদ্রোহী; এমন কি নিজেই সে খো খোদাইত্বের দাবীদার। এটা অপেক্ষা আছিয়ার আর অস্বস্তি ও দুঃখের বিষয় কি থাকতে পারে? কিন্তু এতেই শেষ নহে। আছিয়া বনী ইসরাইল বংশীয়া নারী।
আর সে বংশীয় লোকদেরই প্রতি চলেছে নিষ্ঠুর স্বামীর অমানুষিক অত্যাচার-যাতে তারা নিদারুণ ভাবে পিষ্ট হতেছে। এ দৃশ্য দেখতে দেখতে আছিয়ার মনে দুঃখের দহন দাউ দাউ করে জ্বলছিল। কিন্তু তিনি যে অক্ষমা নারী। প্রতিরোধের কোন উপায় ছিল না। এ বিষয় কিছু স্বামীর নিকট প্রকাশ করবে তেমনও সাধ্য নেই। স্বামীর নির্দেশ ছিল, বনী ইসরাঈলদের পক্ষে যে কেউ সুপারিশ করবে, তারও বিপদ ঘনিয়ে আসবে। কিন্তু ভয় ও আতংক যতই থাকুক সুশীলা নারীর মন বিদ্রোহী হয়ে উঠল।
বনী ইসরাঈলদের কোন অপরাধ নেই, তারা দুষ্কৃতিকারী বা দুরাচার নয়, তাদের স্বভাব চরিত্রে কোন দোষ নেই, বরং সুসভ্য এবং ভদ্র মানুষ তারা। দেশ এবং দেশের শাসন নীতির প্রতি তাদের আনুগত্যেরও এতটুকু অভাবে নেই, তাঁদের দোষ শুধু এই যে, তারা বাদশাহর অন্যায় খোদাই দাবীকে মেনে নিতে পারে নাই। তাকে তাঁরা খোদার সৃষ্ট মানুষ বলে মনে করছে।
আর সর্বস্রষ্টা বিশ্ব প্রভুর উপাসনা করা ন্যায় ভাবছে। এরূপ একটি নির্দোষ সম্প্রদায়ের উপরে স্বামী ফেরাউনের অবিচারে আছিয়ার মনে দুর্বিসহ যাতনার সৃষ্টি হয়ে এবার তা প্রকাশ পাবার উপক্রম হল।
একদা বাদশাহ ফেরাউন আছিয়ার সাথে স্বাক্ষাত করতে তার কক্ষে প্রবেশ করে শ্লেষের সাথে বলল, আছিয়া! তোমার জ্ঞানী-বান্ধব এবং আমার শক্রু বনী ইসরাইলগণ দিন দিন যেরূপ আমার অবাধ্য হয়ে উঠেছে তাতে আমার পক্ষে ধৈর্য ধারণ করা আর সম্ভব হচ্ছে না। এবার আমার সিদ্ধান্ত এই যে, মিশর ভূমিতে আর তাদের অস্তিত্ব রাখব না। সম্পূর্ণরুপে নির্মূল করে ফেলব।
এবার আছিয়া নীরব না থেকে অত্রস্ত ধীর এবং স্নিগ্ধ কন্ঠে বললেন, স্বামী! তাদের নির্মূল না করে মিশর হতে বের করে দিন; অযথা এরূপ নিষ্ঠুর আচরণ দ্বারা জগতে আপনি দুর্ণাম কুড়াবেন কেন?