আছিয়ার কঠোর পরীক্ষা শুরু-পর্ব ২
আছিয়ার কঠোর পরীক্ষা শুরু-পর্ব ১ পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আমার সে দুঃখ এই যে, তোমাদের পিতাকে আমি পাপ পথ হতে ফিরায়ে আনতে পারলাম না; মৃত্যুর পূর্বে তাকে সৎপথের উপরে দেখে যেতে পারলাম না। তোমাদের পিতার এ পাপ কাহিনী শুনে জগতের লোক অনন্তকাল ধরে তাকে ধিক্কার দিবে।
আর পরকালে তাকে এ মহাপাপের বদলে চিরকাল ধরে জাহান্নামের অনলে জ্বলে পুড়ে ভষ্ম হতে হবে। এটা যে আমার কত বড় ব্যাথা তা আমি তোমাদের বলে বুঝাতে পারবো না।
জননীর কথা শ্রবণ করে পুত্রগণ বললো, আম্মা! এজন্য এরূপ দুঃখ করে কি লাভ হবে? জগতে এসে যে যেমন কার্য করবে ইহকালে পরকালে সে তেমন প্রতিফল ভোগ করবে। যার অদৃষ্ট লিপিতে যা লিখা আছে তা নিশ্চয়ই ঘটবে। সে জন্য আফসুস করা বৃথা।
ফেরাউন তার পত্নী এবং পুত্রদের প্রতি ক্রোধ যতই হয়ে থাকুক তাঁদিগকে প্রাণে হত্যা করা তার অভিপ্রেত ছিল না। তা থাকলে অনেক পূর্বেই তাদের প্রাণ হরণ করতে পারতো। তার জেদী মনের আকাঙ্ক্ষা ছিল, সে অসহনীয় নির্যাতন চালিয়ে এবং প্রাণনাশের আতংক সৃষ্টি করে তাদের নিকট হতে নিজের দাবীর স্বীকৃতি আদায় করবে এবং এ ভাবে তাদিগকে জব্দ করতঃ নিজের মনকে তৃপ্ত করে তুলবে!
এ আশায় সে ব্যর্থ হয়েও সম্পূর্ণরূপে হাল ছাড়ল না। সে মন্ত্রী হামনকে নির্দেশ দিল, প্রতিদিন একবার গিয়ে সে যেন আছিয়ার মত পরিবর্তনের চেষ্টা করতে থাকে।
হামান বাদশাহর নির্দেশানুযায়ী প্রতিদিনিই একবার করে কারাগারে গেল এবং বিবি আছিয়াকে বাইরে এনে নানাভাবে তাঁকে বুঝিয়ে শুনিয়ে উদ্দেশ্য সাধন করার চেষ্টা করে দেখল। কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। বিবি আছিয়া অচল অটলই রইলেন।
অবশেষে একদিন স্বয়ং বাদশাহকে সহ হামান কারা প্রাচীরের ভিতরে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট কক্ষ হতে আছিয়াকে বাইরে আনলো এবং তাঁকে লক্ষ্য করে বললো, মাননীয়া বেগম সাহেবা! বহুদিন আপনার কাছে আগমন করেছি এবং অনেক কথাই বলেছি, আজ শেষদিন আমি আপনার কাছে সে একই উদ্দেশ্য নিয়ে হাজির হয়েছি।
জানি আপনি আমার অপেক্ষা অনেক বুদ্ধিমতি; যথেষ্ট বিচক্ষণা। তবু আজ আবার আপনাকে আমি দুটি কথা বলতে চাই। এ জন্য আমার ধৃষ্ঠতা ক্ষমা করবেন। দেখুন! পত্নীর নিকটে স্বামী অসীম শ্রদ্ধার পাত্র।
স্বামীর যে কোন নির্দেশ পালন করাই পত্নীর কাজ এবং তার এমন কোন কাজ করা উচিত নয় যাতে স্বামীর হৃদয়ে আঘাত লাগতে পারে। আপনার স্বামীকে আল্লাহ বলে মানলেই যখন তিনি খুশী হন তখন তা আপনার নিশ্চয় মানা উচিত।
যাকে দেশের প্রতিটি লোকই আল্লাহ বলে মানছে তাকে আপনি আল্লাহ স্বীকার করতে আপত্তি কেন? আপনি চোখের সামনেই দেখছেন শুধু আপনার কারণেই আপনার এ সন্তানগণও কঠোর শাস্তি ভোগ করছেন। আপনার মত পরিবর্তন করলে সাথে সাথে এরাও আপনার পথ ধরত।