আছিয়ার কঠোর পরীক্ষা শুরু-পর্ব ১
বাদশাহ দেখল, আছিয়ার স্পর্ধা এখনও কমে নেই। সে এখনও সোজা হয় নেই। এতে বাদশাহর মনের জেদ বৃদ্ধি হল। যেভাবেই হয় পত্নী ও পুত্রগণকে তার নিকট নতি স্বীকারে বাধ্য করতে সে আরো ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল।
কারা প্রহরীগণকে আদেশ করল, তোমরা প্রতিদিন গিয়ে বন্দীগণকে দীর্ঘ সময় চাবুক দ্বারা প্রচণ্ড বেগে প্রহার করবে ও রাত্রে যাতে মেঝের উপরে শুইতে না পারে সে জন্য উহাদের দু হাতে রশি বেঁধে ছাদের শূন্যের ঝুলিয়ে রাখবে যেন নিচে ভূমির সাথে স্পর্শ না করে।
বাদশাহর এ নিষ্ঠুর আদেশ পালিত হতে লাগল। প্রহরিদের নিদারূণ শাস্তি প্রদান ও প্রহারেরে আঘাতে আছিয়ার দুর্বল সন্তানগণ বুক ফাটা চিৎকার আরম্ভ করল; কিন্তু কোন স্থান হতে একটি লোক এসে তাদের এ ভীষণ কষ্ট হতে উদ্ধার করল না। তবু আল্লাহর কি অপূর্ব মর্জী! তারা এ অসহ্যকর শাস্তির মাঝেও তাদের ঈমান মজবুত রাখল। তাদের মনে এতটুকু মাত্র দুর্বলতা দেখা দিল না। বিবি আছিয়াকে স্বামীর আদেশে কারাকক্ষের মেঝের উপরে শোইয়ে তার বক্ষের উপরে ভারী পাথর দেয়া হতে লাগল তাতে তার শ্বাস প্রশ্বাস প্রায় রুদ্ধ হয়ে আসত।
কিন্তু এতেও তিনি কোন কষ্ঠ বলেই বোধ করতেন না। তবে একদা তাঁর চোখের উপরে অস্থি চর্মসার পুত্রগণ প্রহরিদের প্রহারের আঘাতে জর্জরিত হয়ে হাত পা আছড়াতে লাগল। তা দেখে আছিয়া তাঁর চোখের অশ্রু সংবরণ করতে পারলেন না। তা লক্ষ্য করে পুত্রগণ তাঁকে বলল, আম্মা! আপনার চোখে অশ্রু আসল কেন?
আছিয়া বললেন, বাবাগণ! তোমাদের এরূপ কষ্ঠ দেখে আমার হৃদয়ে সহ্য হচ্ছিল না। তজ্জন্য আমার চক্ষে দুফোটা অশ্রু এসে পড়ল।
শুনে তাঁর পুত্রগণ বলল, আম্মা! আমাদের কষ্ঠ যতই হোক না কেন তাতে কি আছে? আমরা নিশ্চিতরূপে বিশ্বাস করি এ সাময়িক কষ্ট কিছুই নহে এতে আমাদের যদি প্রাণও নিঃশেষ হয়, তা হোক। কিন্তু এ কষ্ঠ সহ্য করে যদি আমাদের ঈমান বাঁচাতে পারি তবে পরকালে দয়াময় প্রভুর কৃপা আমরা অবশ্যই লাভ করবো।
পুত্রদের এরূপ মনোবল এবং বিশ্বাস দেখে বিবি আছিয়া অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং এবার তাঁর চক্ষু হতে দুফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। হঠাত এ মুহূর্তে আছিয়ার আবার কি একটি কথা মনে পড়ে তিনি অঝোরে কেঁদে ফেললেন। এটা দেখে তাঁর পুত্রগণ বলল, আম্মা! আপনি আবার কাঁদলেন কেন?
আছিয়া বললেন, বাবারা আমার! এ ক্রন্দনের কথা আমাদের কি বলবো, আমি নিজের কষ্ঠ কিংবা তোমাদের প্রতি এ অকথ্য নির্যাতন দেখেও কাঁদছি না কিন্তু আমার অন্তরে সদা সর্বদা যে ভীষণ দুঃখের আগুন জ্বলছে তাতেই কখনও কখনও আমাকে এরূপ কাঁদিয়ে ফেলে। সে দুঃখ যে কি ভয়াবহ, বললে তোমরাও তা বুঝতে পারবে।