একবার মগধের রাজগৃহ নহরে বোধিসত্ত্ব বণিককুলে জন্ম নেন। তিনি তখন মগধ রাজের শ্রেষ্ঠী ছিলেন। বোধিসত্ত্বের প্রচুর সোনারূপা ধনদৌলত ছিল বলে তাঁর নাম হয় ‘শঙ্খ শ্রেষ্ঠী’। বারাণসীতে তখন বোধিসত্ত্বের মতই ধনবান আরেক বণিক ছিল। তার নাম পিলয় শ্রেষ্ঠী। দুজনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব। একদির পিলয় তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বারাণসী থেকে পায়ে হেঁটে মগধে এল। হঠাৎ তার সম্পত্তি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পিলয় মহা সমস্যায় পড়ে বন্ধুর কাছে এসেছে। শঙ্খ তাকে মহা সমাদরে রাখলেন।
তারপর একদিন জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার এই হঠাৎ আমার কারণ কি বল।” ‘আমি খুব বিপদে পড়েছি।’ ‘খুলে বল’ ‘বাণিজ্যে এমন ক্ষতি হয়েছে যে আমি এখন সর্বস্বান্ত।’ ‘অত দুশ্চিন্তা করো না।’ ‘এখন তুমি সাহায্য না করলে আর দাঁড়াতে পারব না।’ ‘নিশ্চয় করব।’ শঙ্খ তখন তাঁর সমস্ত সম্পত্তি দাসদাসী সমান দুই ভাগে ভাগ করে একভাগ পিলয়কে দিলেন।
পিলয় সেই সম্পত্তি নিয়ে বারাণসীতে ফিরে গেল। সুখে দিন কাটাতে লাগল। কিছুদিন পরে শঙ্খের খুব বিপদ দেখা দির। হঠাৎ বাণিজ্যে এমন লোকসান হল যে, শঙ্খশ্রেষ্ঠীর পরনের কাপড়টুকু ছাড়া নিজের বলতে আর কিছুই রইল না। অনেক ভেবে তিনি ঠিক করলেন বন্ধুর কাছে যাবেন। বন্ধুর বিপদে তিনি তাকে দেখেছেন, বন্ধু কি আর তাঁকে দেখবে না। স্ত্রী আর সঙ্গীদের নিয়ে শঙ্খ বারাণসীর দিকে রওনা হলেন। বারাণসীতে পৌছে ভাবলেন স্ত্রীকে এভাবে হাঁটিয়ে না নিয়ে গিয়ে পান্থশালায় রেখে যাই।
তারপর বন্ধু পাল্কী পাল্কী পাঠিয়ে তাঁর স্ত্রীকে প্রাসাদে আনাবেন। এই ভেবে স্ত্রীকে পান্থশালায় রেখে লোকজন নিয়ে তিনি রওনা হলেন। পিলয় শঙ্খকে দেখে মোটেই খুশি হলেন না। সে তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘হঠাৎ কি মনে করে?’ ‘তোমাকে দেখতে এলাম।’ ‘উঠেছ কোথায়?’ ‘বাসা ঠিক হয়নি এখনও, স্ত্রীকে ধর্মশালায় রেখে এসেছি।’ ‘এখানে তো ভাই জায়গা নেই, তুমি বাসার ব্যবস্থা কর আগে।
তারপর রেঁধে বেড়ে খাও। ঘোরাঘুরি করে চলে যাও। তবে, আমার কাছে একদম এস না।’ এই বলে পিলিয় তার কর্মচারীকে ডেকে বলল,‘ওরে, একে এক বাটি আটার ভূসি নিয়ে দে।’ শঙ্খ তখন ভাবলেন, এই বন্ধুর ব্যবহার! এক বাটি আটা চাইছে। না নিলে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়। শঙ্খ তা করতে চান না। ফলে কাপড়ের খুঁটে এক বাটি আটা নিয়ে ফিরে এলেন। শঙ্খর স্ত্রী সব কিছু শুনে কাঁদতে লাহলেন। তখন শঙ্খর এক পুরনো চাকর, যে পিলিয়র কাছে ছিল, সে দেখতে এল ব্যাপার কি। সব শুনে তার খুব কষ্ট হল। শঙ্খ ও তাঁর স্ত্রীকে সে নিজের বাসায় নিয়ে গেল। শঙ্খর আগেরকার চাকরদের ডেকে জানাল কি ঘটেছে।
তারপর আগেরকার মনিব-মনিবপত্নির যত্ন-আত্তি করল। তারপর রাজার কাছে শঙ্খকে নিয়ে গেল। রাজার কাছে নালিশ করায় রাজা পিলিয়কে ডেকে পাঠালেন। পিলিয় শঙ্খের অভিযোগ অস্বীকার করতে পারল না। রাজা তখন হুকুম দিলেন পিলিয়র সমস্ত সম্পত্তি শঙ্খ পাবে। কিন্তু শঙ্খ বললেন, ‘না মহারাজ, আমি আমার পাওনা টাকা পেলেই খুশি হব।’ রাজার আদেশে বোধিসত্ত্ব তাঁর আগেরকার সম্পত্তি ফিরে পেলেন। মগধে গিয়ে সুখে দিন কাটাতে লাগলেন। এই জাতক থেকে যা শিখলাম: বন্ধু চেনা যায় বিপদে।