অভিযান-পর্ব ২

ভিতরটা অপরিসর,আমাদের মাথা গুহার ছাদ ছুঁই ছুঁই, শক্ত কালো পাথরের দেয়াল, ভিতরটা খুব গরম। মিনিট দশেক হেটমুন্ড হয়ে হাঁটার পরে ছাদ একটু উঁচু হল আর চারপাশটা চওড়া হয়ে এল। এবার স্যাম টর্চের আলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে জায়গাটা দেখছিল, একটা ২০ বাই ১০ এর ঘরের মতো, উল্টোদিকে মনে হল সুরঙ্গটা হঠাৎ নীচের দিকে নেমে গেছে। এবার টর্চের আলো মাটিতে ফেলে চমকে ঊঠলাম – তিনটে কঙ্কাল আমাদের বিপরীত দিকে হাত দশেক দূরে পড়ে আছে, তাদের ঠিক সামনে মাটিতে দু তিনটে গর্ত খোঁড়া আছে, সেখানে আরও কিছু আছে মনে হল।

স্যাম আমার পিঠে হাত রাখল আমি চমকে উঠলাম, সে ইশারায় জানাল ভয় পেয়ো না, তার পিছু পিছু গর্তগুলোর কাছে গেলাম সেখানে যা দেখলাম তাতে হাত পা পেটে সেঁদিয়ে যাবার জোগার, ভাবলাম নির্ঘাত কোনো নরখাদকের গুহায় ঢুকে পরেছি, গর্তগুলোর চারপাশ কালো হয়ে পুড়ে গেছে, স্পষ্টতই আগুন জ্বালান হয়েছিল, তার ওপর একটা গর্তে একজন মানুষের কঙ্কাল বসে আছে যেন হাঁটু মুড়ে মাথা নীচু করে।

স্যাম আমার অবস্থা আন্দাজ করে বলে উঠলো- এটা একটা সমাধিক্ষেত্র, এখানে মৃতদেহ পোড়ানো হতো, হাড় ও করোটি পরিবারের লোকজনকে দেওয়ার জন্যে, সেগুলো তারা সংরক্ষণ করে রাখতো, এটা বেশিরভাগ পলিনেশিয়দের সৎকারের পদ্ধতি ছিল। আমি বললাম- ছিল মানে? এখন হয় না? সে বলল- হয় তবে কম, এখন বেশিরভাগ মানুষ খ্রীষ্টান, তুমি কি ভাবছ বুঝতে পারছি, এই মানুষগুলো খুব কাছাকাছি সময়ের নয়। আমি বললাম- দশ বছর আগের? স্যাম আমার মুখের দিকে তাকালো – ও গল্পটা কানে গিয়েছে তাহলে, নাঃ তার থেকে অনেক বেশী কয়েকশো হলে আশ্চর্য হব না।

 

আর দশ বছর আগে যারা এসে আর ফেরেনি তাদের মৃতদেহর কথা শুনেছ নিশ্চই, সেগুলো ছিল গর্তের মতো জায়গায়, আর বলতে হবে? বলে সে ভালোভাবে দেহগুলো পরীক্ষা করে দেখতে লাগল। আমি লজ্জা পেলাম, কালই বোঝা উচিত ছিল। মাটিতে পড়ে থাকা দেহগুলোর গায়ে অতিজীর্ণ কিছু কাপড়চোপড় ছিল যেগুলো কাপড় বলে চেনাই সম্ভব না, স্যাম কিছু কাপড় ও হাড়ের নমুনা নিল। বলল- মনে হচ্ছে অশুভ দ্বীপের রহস্যটা এর থেকেই উদ্ধার করা যাবে, এরা সমাধি দিতে এসে হঠাৎ কোন দুর্ঘটনায় পড়ে, সম্ভবত একই কারন। এবার স্যাম দেহগুলো টপকে সুরঙ্গের নীচু আর সরু হয়ে যাওয়া দিকটায় গেল, পিছু পিছু সুবোধ বালকের মতো আমি। এখানে মাথা নিচু করে ঢুকতে হল, দু পা নামতেই বীশ্রি ঝাঁঝাঁলো গন্ধ নাকে এল, এটা চেনা গন্ধ, স্যাম বলল হাইড্রোজেন সালফাইড, একটু সাবধানে পা ফেল। কিন্তু সাবধান হওয়ার আগেই দুজনের পা হড়কালো, তালগোল পাকিয়ে নীচের দিকে পড়তে লাগলাম,আমার টর্চ ছিটকে পড়ল, স্যামেরটা গলায় ঝুলছিল ভাগ্যিস।অতি কষ্টে দুজন দুজনকে আঁকড়ে ও মাটি আঁচড়ে যেখানে থামলাম সেখান থেকে হাতখানেক দূরে গরম ফুটন্ত কাদাজলের কুন্ড। আমার দম বন্ধ হয়ে এল, বেজায় কাশি শুরু হল, চোখ ও গলা জ্বলতে লাগল। স্যাম বলল কথা বলার চেষ্টা কোরো না, আমি দেখছি কিভাবে ওপরে যাওয়া যায়। কিন্তু দেখা গেল স্যামের ব্যাকপ্যাকে যা আছে তার সাহায্যে আগের জায়গায় ফিরে যাওয়া অসম্ভব। বেশ কিছুক্ষন বৃথা চেষ্টা করে আমরা প্রায় দম বন্ধ হয়ে মরতে বসলাম।আমার মনে হচ্ছিল আগ্নেয়গিরির পেটের মধ্যেই ঢুকে পরেছি, আর নিস্তার নেই। যা হোক এই সময় স্যাম আমার টর্চটা খুঁজে পেল। দুটো টর্চ থাকায় একটু ভাল করে দেখলাম আশপাশটা, আমাদের পায়ের কাছে বিভীষিকার মত হট স্পট ফুটছে কিন্তু তার পাশ বরাবর সরু একটা শুকনো রাস্তা রয়েছে,তার অপরদিকে মনে হচ্ছে সুরঙ্গপথের একটা এক্সটেনশন দেখা যাচ্ছে। পা হড়কালে সেদ্ধ হয়ে যাব, নিঃশ্বাসও নেওয়া প্রায় বন্ধ, সরীসৃপের মত বুকে হেঁটে রুদ্ধশ্বাসে আমরা জায়গাটা পেরোলাম।

এবার আবার একটা সুরঙ্গপথে ঢুকে পড়লাম, স্যামের ধারণা এই পথে সমুদ্রের কাছে পৌঁছনো যাবে, এই সুরঙ্গপথের কিছুটা জিওলজি এইসময় স্যাম আমাকে বলে, সেটা তোদের বলে নেওয়া দরকার, আমরা যে সুরঙ্গপথে হাঁটছিলাম সেটা আসলে একটা লাভা টানেল,যখন গরম লাভা নীচু ঢালের দিকে গড়িয়ে যায় তখন অনেক সময় উপরের তরল লাভা বাতাসের স্পর্শে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়, কিন্তু মাঝখানের লাভা তরল থাকে,ফলে এইরকম টানেল সৃষ্টি হয়।সেই কারনেই এই পথে সমুদ্রে পৌঁছনোর সম্ভাবনা স্যাম দেখেছিল।সেই আশায় আমরা হাঁটছিলাম, কিন্তু পড়বার সময় আমার পায়ে চোট লাগে, স্যামও অক্ষত ছিল না, মনে করিস না হাঁটাটা খুব সহজ কাজ ছিল, আর পথ যে রাজপথ ছিল না সে তো বলা বাহুল্য। নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে টর্চ জ্বেলে চলতে সময় লাগছিল, পায়ের গোড়ালি ফুলে গোল হয়ে গেছে, আর একটা সমস্যা সুরঙ্গপথের নানা ছোটখাটো শাখা আমাদের বিভ্রান্ত করছিল,মূল টানেল কোনটা অনেক বুদ্ধি খাটিয়ে বের করতে হচ্ছিল, বার কয়েক কানা গলির মত সুরঙ্গপথে সময় নষ্টও হল,পরিশ্রমে ব্যাথায় এক পাও আর হাঁটা যায় না, আমরা খুব আশা করছিলাম একটা ক্ষীণ আলো আবার দেখা যাবে অনেকক্ষণ হাঁটছি, কিন্তু তা যখন হল না তখন স্যাম ঘড়ি দেখে বলল, রাত এখানে থাকতে হবে, কারন বাইরে অন্ধকার নেমে যাচ্ছে আলোর রেশ না,দেখতে পেলে সুরঙ্গে পথ হারিয়ে ফেলব। ফলে ব্যাকপ্যাক খুলে পাথরের খোঁচা টোচা কম এমন একটা জায়গা দেখে জিরোতে বসলাম।
স্যামের কাছে একটা দারুন স্লিপিং ব্যাগ ছিল, গুটিয়ে মিনি বালিশ হয়ে যেতো, সেটা পেতে বসলাম দুজনে, শুকনো খাবার খেয়ে নিলাম কিছু, ঠান্ডা ব্ল্যাক কফি, সঙ্গে আগুন জ্বালানোর ব্যাবস্থা থাকলেও তা সম্ভব ছিল না, দাহ্য গ্যাস বদ্ধ সুরঙ্গে থাকা খুব স্বাভাবিক, আর কার্বন মনোক্সাইডের ব্যাপারটা তো সবার জানা। আমাদের টর্চের সুবিধাটুকু ছিল বল ভরসা, কারন যথেষ্ট ব্যাটারি নেওয়া ছিল ব্যাগে। স্যাম দেখি পাথরের দেয়ালে টর্চ ফেলে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে দেখছে, কতোরকম পাগল হয় ভাবতে ভাবতে চোখ জড়িয়ে এল, হঠাৎ নাড়া খেয়ে দেখি একখন্ড পাথর হাতে স্যাম আমাকে ডাকছে, কালচে পাথরে খোঁচা খোঁচা ক্রিস্টালের মতো কি সব, স্যাম খুব উত্তেজিত বলল- “আমি এমনটাই আশা করছিলাম কাল থেকে, বিমল এখানে প্রচুর মিনারেল আর দামী পাথর পাওয়ার সম্ভাবনা ”। টর্চের আলো ফেলতে পাথরটা পার্পেল ও লালের মাঝামাঝি অদ্ভুত একরকম আলো ঠিকরে দিল। আমার মতো আনাড়িরও মনে হল এ সাধারন জিনিস নয়, বললাম “কি স্টোন মনে করছ?”

সে বলল “এখনই বলা মুশকিল, হলুদ আলোয় যেমন দেখাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে ডে লাইটে এর রং বদলে যাবে, আর যদি সেটা ব্লু গ্রীন হয় তবে এটা আলেকজান্দ্রাইট, যদিও তাতেও ১০০ভাগ সিওর হয়া যাবে না” আমি উৎসাহের চোটে খাড়া হয়ে বসলাম- “খুব দামী মনে হচ্ছে?” স্যাম হাসল “তোমার এ বিষয়ে ধারনা বেশ কম দেখছি, যদি আলেকজান্দ্রাইট হয় এবং ভালো মানের তবেই দামের প্রশ্ন, তবে হ্যাঁ আসল ভালো আলেকজান্দ্রাইট শুধু দামী নয় দুষ্প্রাপ্য, তার অদ্ভুত রং বদলের ক্ষমতা আছে”। এবার আমি সোজাসুজি জানতে চাই-‘তুমি প্রস্পেক্টর,তাই তো?’ সে হেসে বলল “লাইসেন্সধারি, আমি অনেক আগেই আশা করেছিলাম বুঝে যাবে, একটু রেস্ট নাও পরে আর একটু খুঁজে দেখব, ৪টে নাগাদ আবার হাঁটা শুরু করব।” এখানে মিতুল প্রশ্ন না করে পারল না- “প্রস্পেক্টর কি?” -এককথায় যারা মাইন খুঁজে বেড়ায়, ক্যালিফরনিয়া গোল্ড রাশের সময় এরকম লোক হাজারো পাওয়া যেত আমেরিকায়, পরে স্যামেদের মত লোকেরা পড়াশোনা করে সরকারি অনুমতি নিয়ে কাজ করত। তার সাথে ন্যাশান্যাল জিওগ্রাফিক এর যোগাযোগ ছিল, সে তাদের ফ্রীল্যান্সার হিসেবেও কাজ করত, সেটা পরে জানতে পারি।

তিতির ছটফট করে বলে উঠল- “এটা তোর জানা উচিত ছিল মিতুল, জেনারেল নলেজ, এমন জায়গায় বাধা দিলি”। দাদু শুরু করলেন- কিন্তু এলার্ম বাজার আগেই স্যাম আবার আমার ঘুম ভাঙাল, এবার হাতে একটা মাইনারদের ভাঙা হেলমেট, বলল- “তুমি ঘুমিয়ে পড়ার পরে অনেক ভেবে দেখলাম তোমার দেখা মানুষটা চোখের ভুল হতে পারে না, কেউ ইচ্ছে করেই আমাদের ঐ পোষাকে ভয় দেখাতে চেয়েছে, তারপর একটু খোঁজাখুঁজি করতেই মাটিতে এটা পেলাম।” স্যামকে হতাশ ও চিন্তিত দেখালো, সে আরো বলল এখনি বেরনোর পথ খুঁজে না পেলে বড় বিপদে পরব আমরা। আমি খুব অবাক হলাম এই ভেবে যে সকালে কোন লোক যদি আমাদের দেখে থাকে,আর সে যদি ভয় দেখিয়ে এখান থেকে তাড়াতে চায় তাহলে আমাদের খুঁজে পেতে তার বা তাদের এত দেরি হচ্ছে কেন, সে তো আমাদের গুহায় ঢুকতে দেখেছে নিশ্চই। স্যামকে এ প্রশ্ন করায় সে জানাল এসব সম্ভাবনা সে ভেবে দেখেছে – “যেভাবে আমরা এইখানে এসে পরেছি সেটা একটা দুর্ঘটনা, একটা পরিত্যক্ত পথ, যারা এখানে গোপনে পাথর সরাচ্ছে তারা এটা জানে যে ঐ পথ বিপজ্জনক, বেঁচে ফেরার আশা কম। হটস্পট ছাড়াও বিষাক্ত বাষ্প ও কার্বন ডাই অক্সাইডের কথাটা নিশ্চই তারা জানে। আর সুরঙ্গপথের প্রচুর মুখ থাকা সম্ভব, সুতরাং আমরা কোনখান দিয়ে বেরোতে পারি হয়তো তারা বুঝতে পারছে না”। আমি বললাম “তার মানে ওদের খপ্পরে যে কোনো সময় পরতে পারি”।

 

“-হুঁ, খুব সতর্ক থাকতে হবে, তবে এখনো একটা খটকা যাচ্ছে না। আচ্ছা যে লোকটাকে দেখেছিলে সে কি খুব লম্বা মনে হয়েছিল?” “-তা হতে পারে দূর থেকে তো বুঝিনি।” “-সেটাই তো কথা ঝোপঝাড়ের উপর দিয়ে তাকে অত স্পষ্ট দেখলে কিভাবে, আর সেখানে কোনো চিহ্ন পেলাম না কেন?” “-আর গুহার ভিতরের মৃতদেহ কি তাহলে সাজানো?” “-মনে হয় না, সে থেকেই এই দ্বীপ সম্পর্কে ভয়ের কাহিনীগুলো চালু হয়েছিল বলে মনে হয়, আর যারা সেগুলো খুঁজে পায় তারা সেটার সদ্ব্যবহার করেছে। এখন ভাবছি লোকটা কতো লম্বা হলে দেখা সম্ভব। ওরকম একটা ফিট আটেকের লোকের পাল্লায় যদি পরি তবে তো ভবলীলা সাঙ্গ।” “-আর একটাই সম্ভাবনা যদি রনপা পরে থাকে, হ্যাঁ এটা হতেই পারে তাই হয়ত জমিতে মিনিমাম ড্যামেজ হয়েছে যেটা আমরা ধরতে পারিনি-আমি বলে উঠি। ” ” – এটা তুমি ভালো ধরেছ, সত্যিই এরকম করতে পারে বিশেষত সমুদ্রে বোট থেকে দেখা যাওয়ার জন্যে এটা ভালো উপায়।” কিছুক্ষণ পরে আবার চলা শুরু, তখন সূর্যোদয়ের সময় হয়েছে। ঘড়ি ধরে ৭ মিনিটের মাথায় আমরা আলো দেখতে পেলাম, উত্তেজনায় পথটা প্রায় দৌড়ে পার হব, সেই মোক্ষম মূহুর্তে আবার সবকিছু যেন অন্ধকারে ডুবে গেল। জ্ঞান ফিরতেই সমুদ্রের হাওয়ার গন্ধ নাকে এল, মাটিতে পড়ে আছি, হাত দুটো পিছমোড়া করে বাঁধা, একজন লোক মাথার দিকে বন্দুক তাক করে আছে, একটু দূরে স্যাম হাঁটু গেড়ে মাথা নীচু করে বসে হাত বাঁধা ও একই রকমভাবে গানপয়েন্ট এ। ওরা তিনটে লোক, তিনজনের হাতেই রিভলবার, স্যামের সঙ্গে দু একটা কি কথা হচ্ছে ভাষাটা স্থানীয় হওয়ায় কিছু বুঝলাম না। স্যাম কিছু একটা বলে ওদের সঙ্গে সামঝোতায় আসতে চাইছে মনে হল।

 

বুঝতেই পারছিলাম ওরা আমদের এখান থেকে যেতে দেবেনা, কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারনে একেবারে মেরে ফেলতেও চাইছে না। এভাবে কিছুক্ষণ কাটলো, হঠাৎ স্যাম চোখের পলকে সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ল আর তার জোড়া পা গিয়ে আঘাত করলো পিছনে দাঁড়ান লোকটার চিবুকে। আমি উত্তেজনায় স্প্রিং এর মতো লাফিয়ে উঠতেই একটা গুলি কাঁধের জামা ও ছাল উঠিয়ে বেড়িয়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে চোখ বুজে গেলো কিন্তু আর্তনাদটা এল আমার মাথায় রিভলবার ধরে থাকা লোকটার মুখ থেকে, চোখ খুলে দেখি ধুন্দুমার কান্ড বেঁধেছে, জনা পাঁচেক লোক কালো ব্যাসল্ট পাথরের স্তম্ভের আড়াল থেকে গুলি ছুঁড়ে এদের কাবু করেছে, একজন হাত চেপে ধরে বসে পরেছে, বাকি দুজনেরও গুলি লেগেছে কোথায় বুঝলাম না তখনি। এই ফাইটিং দৃশ্যটা হিন্দি ফিল্মের মত আর বাড়িয়ে তোদের বোর করব না, বুঝতেই পারছিস বেঁচে বর্তে ফিরেছি। দাদু একটু থামলেন। সমু বলল- যারা তোমাদের বাঁচালো তারা কারা? “-যারা আমাদের বাঁচাল, তারা সামোয়ায় যার বাড়ি ছিলাম সেই ওহিয়া ও তার কিছু বন্ধু, জ্যাক আর ওহিয়া ছাড়া নাম আর মনে নেই, তারা কিভাবে ওখানে এলো সেটা বড় প্রশ্ন,একে বলে “রাখে হরি মারে কে,” আমরা দুদিনে ফিরে না আসায় ওরা একটু খোঁজখবর শুরু করে, তখন একটা মাছধরা নৌকা আমাদের দেখেছিল দ্বীপের দিকে যেতে, ওরা মানুষের পাল্লায় পড়েছি ভাবেনি,দ্বীপে না নেমে বোটে টহল দিচ্ছিল, তখন ওই দৃশ্য দেখে উদ্ধারে নামে।” “এবার প্রশ্ন কেন ওরা আমাদের গুহার ভিতরে খতম করল না, স্যাম ওদের বলেছিল সে ন্যাশান্যাল জিওগ্রাফিক এর হয়ে কাজ করছে এবং সে কোথায় আছে কি করছে সব খবর তারা জানে। তাই মেরে ফেললে এই দ্বীপে প্রচুর ঝামেলা শুরু হবে। এতে ওরা দ্বিধায় পরে যায়, আমাদের মারলে বেশী সুবিধা নাকি না মেরে ছেড়ে দিলে।স্যামের সঙ্গে যে আই ডি ছিল যা তারা পরীক্ষা করে দেখে।

 

” তিতির প্রশ্ন করল, “আর লোকগুলো ওখানে দামী পাথর চুরি করছিল?” দাদু বলল- চুরি বলতে পারো না, পৃথিবীর সর্বত্র ল এন্ড অর্ডার সমান নয়, তবে হ্যাঁ ওরা চায়নি আর কেউ জানুক। ওরা ছিল টোঙ্গান উপজাতির লোক, কিছু ফরাসী ব্যাবসায়ী ওদের দিয়ে কাজ করাচ্ছিল। স্যামের পাওয়া পাথরটা হাই কোয়ালিটির আলেকজান্দ্রাইট প্রমাণ হয় পরে। দুঃখের বিষয় স্যামের সেখান থেকে কোনো লাভ হয়নি, দ্বীপটা নিউজিল্যান্ড এর এরিয়ায় পড়ে, আইনি মারপ্যাঁচ সামলে কিছু করা স্যামের পক্ষে কঠিন হয়ে পরে। সেযাত্রা তাকে আমেরিকা ফিরে আস্তে হয়, পরে শুনেছি একটা টিম নিয়ে সে যায় দ্বিতীয়বার, খনির দুষ্প্রাপ্য পাথরগুলো ততদিনে প্রায় হাওয়া। একটা ক্রিস্টাল সে আমাকে পাঠায় তার সঙ্গী হওয়ার স্মৃতি হিসেবে। “কোথায় কোথায়” রব ওঠে শ্রোতার দলে, দাদু ভেতর ঘরে খবর পাঠালেন। সুমিত্রাদির মারফত খবর এল দিদিমা একটু পরে আসছেন। দেবু জিগ্যেস করল- তোমার সাথে স্যামের যোগাযোগ ছিল তারপর? -বেশ কিছু বছর ছিল তারপর কমে আসে, তার কাজের ওপর লেখা বের হলে জানাতো।

এতক্ষণ যে অভিজ্ঞতার গল্প শুনলি তা হয়তো ঘটনাবহুল, কিন্তু ফেরার আগে স্টিভেনসনের সমাধিতে দাঁড়িয়ে যে অসাধারন অনুভূতি হয়েছিল তা এই বুড়োবয়সেও মনে পড়ে। কথায় তা প্রকাশ করা যায় না।সবুজ ঘাসে ভরা মাউন্ট ভায়া তার উপরে সমাধি, যতদূর চোখ যায় নীল সমুদ্র, পাখির কাকলি ছাড়া শব্দ নেই, সমুদ্রের গন্ধ ছাড়া গন্ধ নেই, সে এক অপার্থিব শান্তির জায়গা, এক পৃথিবী বিখ্যাত কবি ও লেখকের নাম যশ থেকে বহুদূরে নির্জন শেষ ঘুম।” দিদিমা এসময় একটা ছোটো বাক্স হাতে নিয়ে এলেন।দাদু তা থেকে জিনিসটা বার করতেই দিনের আলোয় ঝকমক করে ক্রিস্টালটি নীলচে সবুজ আলো ছড়িয়ে দিল।

আরো পড়তে পারেন...

রাসুর সাঁতার শেখা

প্রচণ্ড গরম পড়েছে। পুলক স্কুল থেকে বাড়িতে এল। বাড়িতে এসে স্কুলব্যাগটা টেবিলে রাখল। দ্রুত শার্ট-প্যান্ট…

পলাশের ঘুড়ি

করতোয়া নদী। নদীতে নৌকা চলে। নদীর পাশে গ্রাম। গ্রামের নাম পাখিপুর। গ্রামটি সবুজে ভরা। মাঠে…

হাম্মামখানা –শামসুদ্দোহা চৌধুরী

প্যাচপেচে গরমে ঘামাচির মহোৎসব শরীরে। জ্যৈষ্ঠের রোদের ঝাঁজালো আগুনের পরশমণিতে হুল ফুটানো উৎসবে মেতে উঠছে…