অন্তরের অবস্থা
হযরত শায়েখ আবুল আব্বাস ইবনে আরিফ (রহঃ) বলেন, একদিন সকাল বেলা আমি ঘুম থেকে উঠলাম তখন আমার অন্তরের অবস্থা বিশেষ ভাল ছিল না। এমতাবস্থায় আমি আমার অন্তরের অবস্থা বন্ধু মোহাম্মদের নিকট গিয়ে বললাম, হে আবু মোহাম্মদ! আজ আমার অন্তরের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেছে। তুমি আমাকে কোন আল্লাহওয়ালার ঘটনা বলে শোনাও। হযরত এর বরকতে আমার অন্তরের অবস্থা পরিবর্তন ও এছলাহ হয়ে যাবে। আমার অনুরোধক্রমে আবূ মোহাম্মদ নিম্নোক্ত ঘটনা বর্ণনা করলেন।
একবার আমি একটি আফ্রিকার বিরান ভূমিতে অবস্থান করছিলাম। ঐসময় জিলহজ্জ মাসের প্রথম তারিখে হঠাৎ তিনজন মানুষ আমার নিকট এসে বলল, হে আবূ মোহাম্মদ তুমি হজ্জে যাবে? আমি বললাম, যা নির্দেশ হয় তাই করব। তারা বললেন, আল্লাহর বরকতের উপর ভরসা কর। অতঃপর তাদের একজন আমার আগে আগে এবং দু’জন পেছনে পেছনে চললেন, আমরা অবিরাম পথ চলতে লাগলাম। যখন রাত হত তখন আমার পেছনে দু’জনের একজন পথ ছেড়ে কোথায় চলে যেত এবং কয়েক মুহুর্ত পর হাতে এক ফনা কলা নিয়ে এসে বলত, এ স্থানে এক বৃদ্ধা আমাকে এ ফল দিয়েছে। তিন দিন পর তাদের একজন আমাকে বলল, হে আবূ মোহাম্মদ ‘তুমি বড় ভাগ্যবান। আমরা তোহা পর্বতে এসে পড়েছি।
অতঃপর আমি তাদের সাথে পবিত্র হজ্জ আদায়ের পর আরো কিছু দিন তাদের সাথে কাটিয়ে দিলাম। যখন আমাদের ফিরে আসার সময় হল তখন তারা বলল, আল্লাহ তোমাকে নিরাপদে রাখুক। আমি বিচলিত হয়ে বললাম, আপনারা কি আমাকে বিরহ বেদনায় ফেলতে চাচ্ছেন। উত্তরে তারা বলল, চিরকাল কি কেউ সাথে সাথে থাকতে পারে? একদিন তো আমাদের সবাইকে বিচ্ছিন্ন হতেই হবে। একথা বলেই তারা চলে গেলেন। অতঃপর আমিও বিভিন্ন স্থান হয়ে ইস্কান্দারিয়ার দিকে চললাম। মনে মনে ভাবলাম, সেখানে হয়ত কোন পরিচিত মানুষ পাওয়া যাবে। যিনি আমাকে সমুদ্র পারাপারের ব্যবস্থা করে পশ্চিমে পৌঁছে দেবেন। পরে আবার মনের অবস্থা পরিবর্তন করে বললাম, আল্লাহর শপথ! আল্লাহর উপর ভরসা করে জঙ্গলের পথ ধরব।
অতঃপর আমি একাকী সে জন মানবহীন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে ক্রমাগত পথ চলতে লাগলাম। যখন আমার অযূ ও পানি পান করার প্রয়োজন হত তখন আমি বলতাম, হে আল্লাহ! তোমার শপথ, যতক্ষণ না আমি ওযূ করব ও পানি পান করব ততক্ষণ এ স্থান হতে একটুও সামনে অগ্রসর হব না। আমি এ কথা বলার সাথে সাথে কোথা হতে এক খন্ড মেঘ এসে আমার সামনে বৃষ্টি বর্ষন হত। ঐ বৃষ্টির পানি জমা হয়ে আমার সামনে একটি হাউজের মত হয়ে যেত। অতঃপর আমি ঐ পানি পান করতাম এবং তা দ্বারা অযূর কাজ সমাধা করতাম। এমনি ভাবে যখন আমার পানির প্রয়োজন হতো তখনই ঐভাবে বৃষ্টির মাধ্যমে আমার পানির প্রয়োজন সমাধা হত। এভাবে পথ চলতে চলতে আমি ঐ স্থানে গিয়ে পৌঁছলাম। সে স্থান হতে সেই তিন ব্যক্তির সাথে হজ্জের উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়েছিলাম।
বর্ণনাকারী বলেন, আবূ মোহাম্মদের মুখে এ বরকতময় ঘটনা শোনার পর আমার অন্তরের অবস্থা ভাল হয়ে গেল।