অদ্ভূত সকাল

বিয়ের অনুষ্ঠানে আকিব সচরাচর যায় না। হুই হুল্লোড় তার কাছে বিরক্তিকর লাগে। তবে ত্রপা আসতে বলেছে তাই এসেছে। ত্রপা কোন অনুরোধ করলে ফেলতে পারে না আকিব। আকিবের বন্ধু বান্ধব বেশি নাই। সে এক কোণায় দাঁড়িয়ে গেইট দিয়ে ঢোকা মানুষগুলোকে লক্ষ্য করছে। তার মনে বড় প্রশ্ন হিসাবে দেখা দিয়েছে, মানুষ এত সাজতে পারে কিভাবে! বেশিরভাগ মেয়েই মুখ ভর্তি মেকাপ দিয়ে এসেছে। চোখে কি যেন জ্বল জ্বল করছে। এক মন্ত্রী সাহেবও এসেছেন বিয়েতে। পেট মোটা মন্ত্রী সাহেবকে কি সমাদর! ত্রপা এসে জিজ্ঞাসা করে, মন্ত্রী সাহেবকে দেখেছো? : হা দেখেছি! : এ মন্ত্রীর ছেলের সাথে রুবাপুর সম্পর্ক ছিল।
কিন্তু ছেলেটি অন্য একটি মেয়েকে পছন্দ করে বিয়ে করে বসে। সেগুলো নিয়ে অনেক ঝামেলা হয়। এখন মন্ত্রী এসেছেন তার সাথে কোন ঝামেলা নেই এটা বুঝাতে। মিডিয়ায় যেন তা প্রকাশ পায়। এতক্ষণে আকিব বুঝতে পারে বিয়েটা রুবা নামের একজনের। যার অ্যাফেয়ার ছিল একজনের সাথে। আর বিয়ে হচ্ছে অন্য একজনের সাথে। আচ্ছা ত্রপার সাথে যদি বিয়ে না হয়! : কি ভাবছো? : নাহ কিছু না। আচ্ছা এভাবে যে বিয়েতে আসলো মন্ত্রী ছোট হলো না। : আরে নাহ এটা মন্ত্রীর পলিটিকস। রুপাপুর বাবাও রাজনীতিবিদ। একই দলের। সামনের নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হতে পারেন। তখন তো বিপদে পড়ে যাবেন। তিনি দেখাতে চান দলে কোন্দল নেই। বিয়ের অনুষ্ঠান এজন্য কিছু বলতেও পারছেন না রুপাপুর বাবা। : মন্ত্রীকে নিয়েই তো দেখছি অনেক লোকের ব্যস্ততা। : আরে সেগুলো তার পক্ষের লোকজন। : রাজনীতি ভাল লাগে না। বাদ দাও। : ঠিক আছে বাদ দিলাম। এখন বলো কোন মেয়ে তোমার পছন্দ হয়েছে? : মানে কি? : এখানে তো অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে এসেছে। কাকে তোমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে? তোমার একটা অ্যাফেয়ার থাকা দরকার। এভবে আর কতদিন সিঙ্গেল থাকবে? তোমার বন্ধুদের বেশিরভাগই তো এত দিনে তিন চারটা প্রেম করে ফেলেছে। তুমি একটাও করতে পারো নি। অন্তত একটা করো। : ত্রপা আমার ভাল লাগছে না। আমি চলে যাই? : বেশি খারাপ লাগছে? আকিবের শারিরীক খারাপ লাগে না। তারপরও সে অভিনয় করে তার শারীরিক খারাপ লাগছে। নিজের চুল নিজে টেনে ধরে। ত্রপা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠে। দেখি দেখি জ্বর আসলো নাকি! কপালে হাত দিয়ে জ্বর দেখে। : নাহ, টেম্পারাচার তো ঠিক আছে। : মাথা ব্যথা করছে। ফেরার পথে আকিবের মাথা টিপে দেয় ত্রপা।
চুল টেনে দেয়। আকিব অসুস্থতার অভিনয় করে যায়। মেয়েটা যে এভাবে কেয়ার নেয় তার অনেক বেশি ভাল লাগে। এভাবে যদি সারাজীবন পাশে থাকতো! ত্রপা বুঝতে পারে না বোকা ছেলেটা তার সাথে অভিনয় করছে। ত্রপার খুব ইচ্ছা করে এ ছেলেটার সাথেই তার বাকী জীবনটা কাটাতে। কিন্তু সে চায় না আকিবের সাথে তার রিলেশন হোক। নিজের গায়ের রঙটা কালো এজন্য অন্য কোন দিক থেকে আফসোস নেই ত্রপার। তবে এই একটা দিকে আকিবের জন্য তার খুব ফর্সা হতে ইচ্ছা করে। ত্রপা জানে আকিব তাকে অনেক পছন্দ করে। সে যদি বিষ খেতে বলে কোন জিজ্ঞাসা করা ছাড়া খেয়ে ফেলবে। সাথে সাথে বলে বসবে, অনেক মজার তো! তারপরও ত্রপা চায় না। আকিব করুণা না করলেও আকিবের মা-বাবা কষ্ট পাবেন। আকিবের বন্ধুরা করুণার চোখে তাকাবে। সেরকম করুণার পাত্রী হওয়ার কোন ইচ্ছা নেই ত্রপার। আকিব থেকে মুক্তি পেতে ত্রপা বিদেশ চলে যাচ্ছে। আকিব জানে না, জানলে যেতে দেবে না। কিন্তু ত্রপা সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাবার আগে বলবে না। সেখানে গিয়েই জানাবে। +++++++++++++++++++++++++++ ত্রপা বিদেশ চলে যায়। ব্যস্ততায় সময় যায়। জবও হয়েছে। ভাল ইনকাম। কিন্তু এত টাকা দিয়ে কি করবে তা ঠিক করতে পারে না ত্রপা। একটা সিদ্ধান্ত নেয় সে। পথশিশুদের জন্য কিছু করবে। কখনো বিয়ে করবে না। ওই অবহেলিত শিশুদের সাথেই জীবন কাটিয়ে দেবে। দেশেই করবে এসব। তবে আকিবের বিয়ের আগে দেশে ফিরবে না। আকিবের বিয়ের খবর পেলে তারপরই দেশে ফিরে যাবে। কিন্তু আকিবের বিয়ের কোন নমুনা দেখা যায় না। ইদানিং নিজে আকিবের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। আকিব চিঠি দিলেও উত্তর দেয় না, ফোন করলেও ধরে না।
+++++++++++++++++++++++++++ দেড় বছর পর একটা সকাল ত্রপার জন্য অদ্ভূত হয়ে ধরা দেয়! কিভাবে কিভাবে যেন ঠিকানা যোগাড় করে ফেলেছে আকিব। নিজেই এসে উপস্থিত। বিদেশের মাটিতে প্রিয় মানুষটাকে দেখে ত্রপার মুখ দিয়ে কিছু বের হয় না। সে কি স্বপ্ন দেখছে! আকিব অভিমানী গলায় বলে, আমার থেকে পালিয়ে এখানে এসেছো না। কিন্তু আমার থেকে কোথাও পালাতে পারবে না। এই বলে দিলাম। তুমি কি ভেবেছো! আমি বুঝি তোমায় খুঁজে পাবো না। আমি অনেক দিক দিয়ে বোকা ঠিক আছে। কিন্তু তোমাকে খোঁজার দিক দিয়ে বোকা না। প্রমাণ হলো তো? ফ্যাল ফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকে ত্রপা। তার চোখ দিয়ে পানি পড়ে। কিছুই বলতে পারে না। মানুষের কিছু অনুভূতি এত আনন্দের যে কিছু বলার থাকে না। ত্রপার সেরকম লাগছে। আচ্ছা পৃথিবীটা এত বেশি সুন্দর কেন!

আরো পড়তে পারেন...

প্রতিজ্ঞা– শিশুতোষ গল্প

সেই ছোট বেলা থেকেই আমি খুব চঞ্চল স্বভাবের ছিলাম। সারাদিন বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াতাম। লেখাপড়ার…

ভিক্ষুক

সবুজ গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা। বাংলাদেশের অন্যতম নদীগুলোর মধ্যে মেঘনা একটি বৃহৎ…

জননী —- হাসান আজিজুল হক

কয়েক বছর আগে আমাদের ফ্ল্যাটবাড়িতে যে মেয়েটি কাজ খুঁজতে আসে, তার রূপ দেখে আমি স্তম্ভিত…